ময়মনসিংহ বিভাগ

ময়মনসিংহ বিভাগ বাংলাদেশের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এটি বাংলাদেশের উত্তর-মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত। মহুয়া-মলুয়ার দেশ ময়মনসিংহের পূর্ব নাম ছিল নাসিরাবাদ। মোঘল আমলে মোমেনশাহ নামে একজন সাধকের নামে অঞ্চলটির নাম হয় মোমেনশাহী- কালের বিবর্তনে যা ময়মনসিংহ নামে পরিচিতি লাভ করে। ময়মনসিংহ শহরের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। এ নদের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন বহু ছবি এঁকেছিলেন। এখানকার বহু স্থাপনায় প্রাচীন নির্মাণ শৈলীর ছোঁয়া রয়েছে। আছে কালের সাক্ষী স্বরূপ ভগ্ন জমিদার বাড়ী। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিও জড়িয়ে আছে এ জেলার ত্রিশাল উপজেলার সাথে। সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ আর বৈচিত্র্যপূর্ণ জনগোষ্ঠির এক জনপদ এ ময়মনসিংহ জেলা।

ময়মনসিংহ বিভাগ সৃষ্টি :

শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের সূতিকাগার বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা ১৭৮৭ সালের ১মে জেলা হিসেবে জন্মের পর বর্তমান ময়মনসিংহের আদল পায় ১৯৮৪ সালে। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহে জেলা থেকে টাঙ্গাইল মহুকুমাকে পৃথক করে একটি জেলা উন্নীত করা হয়। ১৯৮০-এর দশকে আদি ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন মহুকুমা যথা জামালপুর, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনাকে পৃথক পৃথক জেলায় উন্নীত করা হয়। সরকার বিগত ১৩ অক্টোবর, ২০১৫ খ্রি. তারিখে গেজেটে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর এবং নেত্রকোণা জেলা সমন্বয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ সৃষ্টি করেছে।

সীমানাঃ-

উত্তরে গারো পাহাড় ও ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে গাজীপুর জেলা, পূর্বে নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে শেরপুর, জামালপুর ও টাঙ্গাইল জেলা বেষ্টিত ময়মনসিংহ জেলার ভৌগোলিক পরিবেশ বিচিত্র হওয়ায় বলা হয়-‘‘হাওর, জঙ্গল, মইষের শিং-এ নিয়ে ময়মনসিং”। ৪,৭৮৭ বর্গমাইলের রত্নগর্ভা এ জেলার প্রাণবন্ত মানুষের পরিচয় পাওয়া যায় এর নামের মাঝেই।

নদীসমূহঃ-

ময়মনসিংহ জেলায় অনেকগুলো নদী আছে। সেগুলো হচ্ছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী, কাঁচামাটিয়া নদী, মঘা নদী, সোয়াই নদী, বানার নদী, বাইলান নদী, দইনা নদী, পাগারিয়া নদী, সুতিয়া নদী, কাওরাইদ নদী, সুরিয়া নদী, মগড়া নদী, বাথাইল নদী, নরসুন্দা নদী, নিতাই নদী, কংস নদী, খাড়িয়া নদী, দেয়ার নদী, ভোগাই নদী, বান্দসা নদী, মালিজি নদী, ধলাই নদী, কাকুড়িয়া নদী, দেওর নদী, বাজান নদী, নাগেশ্বরী নদী, আখিলা নদী, মিয়াবুয়া নদী, কাতামদারী নদী, সিরখালি নদী, খিরু নদী, বাজুয়া নদী, লালতি নদী, চোরখাই নদী, বাড়েরা নদী, হিংরাজানি নদী, আয়মন নদী, দেওরা নদী, থাডোকুড়া নদী, মেদুয়ারি নদী, জলগভা নদী, মাহারী নদী।[

ময়মনসিংহ বিভাগের প্রশাসনিক জেলা সমুহঃ-

১)ময়মনসিংহ

২)নেত্রকোণা

৩)জামালপুর

৪)শেরপুর

ময়মনসিংহ বিভাগের দর্শনীয় স্থানঃ-

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

আলেকজান্ডার ক্যাসেল

জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা

সার্কিট হাউস

রামগোপালপুর জমিদারবাড়ি

বিপিন পার্ক

বোটানিক্যাল গার্ডেন
বিজয়পুর পাহাড়ে চিনামাটির নৈসর্গিক কাজ

টংক আন্দোলনের স্মৃতি সৌধ

রানীখং মিশন টিলাতে ক্যাথলিক গির্জা

বিরিশিরি কালচারাল একাডেমি
লাওচাপড়া পিকনিক স্পট, বকশীগঞ্জ

যমুনা ফার্টিলাইজার, তারাকান্দি, সরিষাবাড়ী

গজনী অবকাশ কেন্দ্র

মধুটিলা ইকো পার্ক

নয়াবাড়ির টিলা

খাওয়া দাওয়াঃ-

স্থানীয় পর্যায়ের বিখ্যাত খাদ্য হলো মন্ডা ও দৈ। এছাড়াও স্থানীয় মাছ, আনারস এবং কাঠালের দারুন সুখ্যাতি রয়েছে। এখানে সাধারণভাবে দৈনন্দিন খাওয়া-দাওয়ার জন্য স্থানীয় হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলোতে সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়।

শিক্ষাঃ-

২টি বিশ্ববিদ্যালয়, ২টি মেডিক্যাল কলেজ, ১টি প্রকৌশল কলেজ, ১টি ক্যাডেট কলেজ, ১টি শারীরিক শিক্ষা কলেজ (ময়মনসিংহ সরকারী শারীরিক শিক্ষা কলেজ) আছে বিখ্যাত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আনন্দমোহন কলেজ ও প্রিমিয়ার আইডিয়াল হাই স্কুল), এছাড়াও আরো অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ-

যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক থেকে এই বিভাগের প্রতিটা জেলাতে খুব সহজে যোগাযোগ বাহ যাতাযাত করা সম্ভব হয়। তাছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগের রেল, সড়কপথ, ব্যবস্থা থাকায় যাত্রাসুবিধার প্রধান স্থল হিসাবে গণ্য করা হয় এই বিভাগকে। এই বিভাগের অন্তরগত জেলা শহর গুলোর মধ্যেও যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত মানের এবং সহজতরো।