ঢাকা বিভাগ

আমাদের এই বাংলদেশ হাজারো সংস্কৃতি এবং ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষের বসবাস স্থল।প্রাকৃতিক গতে দিক দিয়ে বাংলাদেশ যতোটা সুন্দর জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ ততোটাই জনবহুল একটি দেশ। এই দেশের আপামর মানুষের নাগরীক এবং মৌলক সুযোগ সুবিধা গুলো তাদের কাছে পৌছে দেবার জন্যই প্রতিটি জেলাকে বিভাগের আওতায় এসে সরকার প্রদও সবিধা গুলোর বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। আর সেই লক্ষ্যেই বিভাগ ব্যবস্থাও উৎপওি। বর্তমানে বাংলাদেশে ৮ টি বিভাগ রয়েছে।

বাংলাদেশে বিদ্যমান ৮ টি প্রশাসনিক বিভাগের মধে ঢাকা বিভাগ সব থেকে গুরূতপর্ণ। বাংলাদেশের সব থেকে জনবহুল এই বিভাগটি মোট ১৩টি জেলা নিয়ে গঠিত। সেগুলো হলো:-

১)ঢাকা

২)নারায়ণগজ্ঞ

৩)টাঙ্গাইল

৪)নরসিংদী

৫)মাদারিপুর

৬)শরীয়তপুর

৭)মানিকগজ্ঞ

৮)ফরিদপুর

৯)রাজবাড়ী

১০)গাজীপুর

১১)কিশোরগজ্ঞ

১২)গোপালগজ্ঞ

১৩)মুস্নিগজ্ঞ

প্রশাসনঃ-

১৮২৯ সালে ঢাকা বিভাগ গঠিত হয়। ১৮৬৪ সালে ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি গঠিত হয় এবং ১৯৬০ সালে এটিকে টাউন কমিটিতে রূপান্তর করা হয়। ১৯৭২ সালে টাউন কমিটি বিলুপ্ত করে পৌরসভায় রূপান্তর করা হয় এবং ১৯৮৩ সালে একে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে উন্নীত করা হয়। ১৯৯০ সালে ঢাকা শহরকে সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তর করা হয়।

নামকরণের ইতিহাস

ঢাকা বিভাগের নামকরণের সঠিক ইতিহাস নিয়ে ব্যাপক মতভেদ রয়েছে। কথিত আছে যে, সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভ্রমণকালে সন্নিহিত জঙ্গলে হিন্দু দেবী দুর্গার একটি বিগ্রহ খুঁজে পান। দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ রাজা বল্লাল সেন ঐ এলাকায় একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। যেহেতু দেবীর বিগ্রহ ঢাকা বা গুপ্ত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছিলো, তাই রাজা, মন্দিরের নাম রাখেন ঢাকেশ্বরী মন্দির। মন্দিরের নাম থেকেই কালক্রমে স্থানটির নাম ঢাকা বিভাগ হিসেবে গড়ে ওঠে। আবার অনেক ঐতিহাসিকের মতে, মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর যখন ঢাকাকে সুবা বাংলার রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন; তখন সুবাদার ইসলাম খান আনন্দের বহিঃপ্রকাশস্বরূপ শহরে ‘ঢাক’ বাজানোর নির্দেশ দেন। এই ঢাক বাজানোর কাহিনী লোকমুখে কিংবদন্তির রূপ নেয় এবং তা থেকেই শহরের নাম ঢাকা হয়ে যায়। এখানে উল্লেখ্য যে, মোঘল সাম্রাজ্যের বেশ কিছু সময় ঢাকা সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্রতি সম্মান জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর নামে পরিচিত ছিলো।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫২.২৬%, অকৃষি শ্রমিক ৩.১৮%, শিল্প ২.১১%, ব্যবসা ১৫.৬১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৮২%, চাকরি ১০.৬৫%, নির্মাণ ১.৭০%, ধর্মীয় সেবা ০.২১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.৮৯% এবং অন্যান্য ৮.৫৭%।

জলাশয় প্রধান নদী:-

পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, বুড়িগঙ্গা, বালু, পুরাতন কুমার, আড়িয়ল খাঁ, গড়াই, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা, লৌহজং, তুরাগ, মধুমতি, হুন্দা, ঘাঘর, বানার, ঝিনাই, কালনী, ঘোড়াউতরা, ধনু, ধলেশ্বরী, ইছামতী, কালীগঙ্গা, কংস, ধলা, মগ্রা, লাওয়ারী, গুনাই, রাজধলা, করতোয়া, হলহলিয়া, ভাদর, গাজীখালী, কলমাই; খাল: তুলসী খলকী, আওনা, ভাঙাভিটা, ওয়াপদা; বিল: ঢোল সমুদ্র, রামকেলী, ঘোড়াদার, চাপরাদহ, বিলরুট, নসিবশাহী, খরকা, চিরাধুনি, চিলমারি, কালুদগ হ্রদ, গোবিন্দচাতল, চুলুঙ্গী, চিতলী, রঘুনাথপুর, বেতলাই; হাওর: হুমাইপুর, সোমাই, তল্লা এবং সুরমা বাউলা হাওর উল্লেখযোগ্য।

জনবহুল এই বাংলাদেশের সব থেকে বেশি মানুষের শহর এই ঢাকা। তাছাড়া ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। তাই প্রতিদিন হাজারো মানুষ তাদের উন্নত জিবন যাপন এবং কর্মের তাগিদে ঢাকা শহরে পাড়ি জমায়। আর এই ক্রমবর্ধাম জন সংখ্যার চাপ সামলাতে গিয়ে কোনঠাসা হয়ে গেছে আজকের ঢাকা শহর।

ঢাকা বিভাগের জলবায়ূ আদ্র এবং শুক্স প্রকৃতির।প্রতি বছর গড়ে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় এই শহরে। আর গড় তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

নাগরিক সুযোগ সুবিধার দিক থেকে সর্বোচ্চ মানের সকল সুযোগের ব্যবস্থা রয়েছে এই ঢাকা শহরে।

এই ঢাকা বিভাগে বাংলাদেশের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সহ অনেক গুলে সরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। তাছাড়ে দেশের সব থেকে বড়ো বড়ো বেসরকারি মেডিকেল কলেজ গুলোও ঢাকা শহরে অবস্থিত।

প্রশাসনিক সকল কিছুর সর্বোচ্চ স্থল হলো ঢাকা শহর। এশহরে সকল মন্ত্রনালয় সহ হাইকোর্ট এবং সুপ্রীম কোর্ট অবস্থিত।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও ঢাকা বিভাগ অগ্রগামী। ঢাকা বিভাগের প্রতিটা জেলাতে দেশের বড়ো বড়ো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো অবস্থিত। তাছাড়া বাংলাদেশের মোট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর বেশিরভাগ ই ঢাকা বিভাগের অন্তরগতো।

ঢাকা বিভাগে বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে সর্বমোট ৩৫টি পাবলিক বা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭টি হচ্ছে ঢাকায়। বাংলাদেশে বর্তমানে সর্বমোট ৭০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রায় ৪৫টিই হলো ঢাকা বিভাগে।

ব্যবসা বানিজ্যের দিক থেকেও এই বিভাগ অনেক গুরূত্ব বহন করে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোর প্রধান দপ্তর ঢাকা বিভাগের ঢাকা জেলায় অবস্থিত। তাছাড়া বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম তৈরি পোশাক শিল্প ঢাকা বিভাগকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে।

ঢাকা বিভাগরে অঞ্চলটিতে অতি প্রচীন কাল থেকে মোঘল রাজাদের পদচারণা বেশি থাকায় বর্তামান সময়ে মোঘল সময়ের অনেক নিদর্শন পাওয়া যায় এই বিভাগের বিভিন্ন জেলাতে। তাছাড়া এই বিভাগের প্রতিটা জেলাতে অনেক ঐতিহ্যবাহী এবং দর্শনীয় স্থান রয়েছে। বেসরকারি উদ্যোগে গগে উঠা বিনোদন কেন্দ্র গুলোর সিংহ ভাগ এই বিভাগে অবস্থিত।

যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ-

যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক থেকে এই বিভাগেরর ঢাকা জেলা হলো বাংলদেশের কেন্দ্র স্থল। ঢাকা থেবে বাংলাদেশের প্রতিটা জেলাতে খুব সহজে যোগাযোগ বাহ যাতাযাত করা সম্ভব হয়। তাছাড়া ঢাকা বিভাগে রেল, সড়কপথ,আকাশপথ, নৌপথের সংযোগ ব্যবস্থা থাকায় যাত্রাসুবিধার প্রধান স্থল হিসাবে গণ্য করা হয় এই বিভাগকে। এই বিভাগের অন্তরগত জেল শহর গুলোর মদ্যেও যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত মানের এবং সহজতরো।