চট্টগ্রাম বিভাগ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি বিভাগ। আয়তনে এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম বিভাগ। চট্টগ্রাম বিভাগ বাংলাদেশের একটি প্রশাসনিক বিভাগ। এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিভাগ, যা দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই এই বিভাগটি গঠিত হয়। ৩৩,৭৭১.১৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই বিভাগ। এর উত্তরে ঢাকা ও সিলেট বিভাগ, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও মায়ানমারের আরাকান প্রদেশ, পূর্বে ভারতের মিজোরাম, ত্রিপুরা ও মায়ানমারের চীন প্রদেশ এবং পশ্চিমে ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের অবস্থান। চট্টগ্রাম বিভাগ বনজ সম্পদ, মৎস্য সম্পদ, খনিজ সম্পদ ইত্যাদিতে ভরপুর এবং প্রচুর দর্শনীয় স্থান রয়েছে এখানে।
১)ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা
২)কুমিল্লা জেলা
৩)চাঁদপুর জেলা
৪)লক্ষ্মীপুর জেলা
৫)নোয়াখালী জেলা
৬)ফেনী জেলা
৭)খাগড়াছড়ি জেলা
৮)রাঙ্গামাটি জেলা
৯)বান্দরবান জেলা
১০)চট্টগ্রাম জেলা
১১)কক্সবাজার জেলা
খাদ্যঃ-
চট্টগ্রামের মানুষ ভোজন রসিক হিসেবে পরিচিত। তারা যেমন নিজেরা খেতে পছন্দ করেন, তেমনি অতিথি আপ্যায়নেও সেরা। চট্টগ্রামের মেজবান হচ্ছে তার বড় উদাহরন। শুঁটকি মাছ, মধুভাত, বেলা বিস্কিট, বাকরখানি, লক্ষিশাক,গরুর গোস্ত ভুনা, পেলন ডাল, মেজবানি মাংস, আফলাতুন হালুয়া, তাল পিঠা, নোনা ইলিশ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহি খাদ্য।
সাহিত্য এবং সংস্কৃতিঃ-
চট্টগ্রামে বাংলা সাহিত্যের বিকাশ শুরু হয় ষোড়শ শতকে। সে সময়কার চট্টগ্রামের শাসক পরাগল খাঁ এবং তার পুত্র ছুটি খাঁর সভা কবি ছিলেন কবীন্দ্র পরমেশ্বর ও শ্রীকর নন্দী।[২৩] কবীন্দ্র পরমেশ্বর মহাভারতের অশ্বমেধ পর্বের একটি সংক্ষিপ্ত বাংলা অনুবাদ করেন। আর শ্রীকর নন্দী জৈমিনি সংহিতা অবলম্বনে অশ্বমেধ পর্বের বিস্তারিত অনুবাদ করেন।
চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। জানা ইতিহাসের শুরু থেকে চট্টগ্রামে আরাকানী মঘীদের প্রভাব লক্ষনীয়। ফলে গ্রামীণ সংস্কৃতিতেও এর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। সে সময় এখানকার রাজারা বৌদ্ধধর্মাবলম্বী হওয়ায় তার প্রভাবও যথেষ্ট। সুলতানি, আফগান এবং মোগল আমলেও আরাকানীদের সঙ্গে যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই ছিল। ফলে শেষ পর্যন্ত মঘীদের প্রভাব বিলুপ্ত হয়নি। এছাড়া চট্টগ্রামের মানুষ আতিথেয়তার জন্য দেশ বিখ্যাত। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের ইতিহাস সমৃদ্ধ। শেফালী ঘোষ এবং শ্যাম সুন্দর বৈষ্ণবকে বলা হয় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের সম্রাট ও সম্রাজ্ঞি। মাইজভান্ডারী গান ও কবিয়াল গান চট্টগ্রামের অন্যতম ঐতিহ্য। কবিয়াল রমেশ শীল একজন বিখ্যাত কিংবদন্তি শিল্পী।
অর্থনিতিঃ-
চট্টগ্রামের কৃষির প্রধান শস্য ধান। এছাড়া শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে ব্যপক শাকসবজির চাষ হয়। ফলমূলের ক্ষেত্রে নারিকেলই মুখ্য। তবে, আম, কলা ও কাঁঠালের উৎপাদনও হয়ে থাকে। ১৯৬০ এর দশকে শংখ ও মাতামুহুরী নদীর তীরবর্তী এলাকায় তামাক চাষ শুরু হয়। পরে লাভজনক হওয়ায় চাষীরা তা অব্যাহত রাখে। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় লবন চাষ লাভজনক। ইতিহাসে দেখা যায় ১৭৯৫ সালে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী অঞ্চলে গড়ে বার্ষিক ১৫ লাখ টন লবণ উৎপন্ন হতো। চট্টগ্রামের মাছ চাষ ও আহরনের একটি উল্ল্যেখযোগ্য দিক হলে। শুঁটকি ব্রিটিশ আমলে শুঁটকি রেঙ্গুনে রপ্তানি করা হতো। বন্দর নগরী হিসাবে ব্রিটিশ-পূর্ব, ব্রিটিশ এবং পাকিস্তান পর্বে চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিল। বন্দরভিত্তিক কর্মকান্ড ছাড়াও ব্রিটিশ আমলে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের সদর দপ্তর চট্টগ্রামে স্থাপিত হয়। পাকিস্তান পর্বে চট্টগ্রামে ভারী শিল্প যেমন – ইস্পাত, মোটরগাড়ি, পাট, বস্ত্র, সুতা, তামাক, ম্যাচ ও ঔষধ শিল্পের কারখানা গড়ে ওঠে। তাছাড়া কিছু বহুজাতিক কোম্পানির সদর দপ্তরও চট্টগ্রামে গড়ে ওঠে।
শিক্ষাঃ-
চট্টগ্রামে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে ভারতের অন্যান্য স্থানের মতো ধর্ম ভিত্তিক তিন ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন ছিল। ১৭৬০ সালে কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠত হলেও ইংরেজি শিক্ষা বিস্তারের কোন উদ্যোগ দেখা যায় নি। ১৮৪৪ সালে ভারতের বড়লাট লর্ড হার্ডিঞ্জ রাজকার্যে নিয়োগ পাওয়ার জন্য ইংরেজি জানা আবশ্যক ঘোষণা করলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ে।পরবএতিতে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর এই অঞ্চলে শিক্ষা প্রসার শুরু হয়। বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগে ৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অনেক ঐতিহ্যবাহী শিক্ষ্যা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ-
যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক থেকে এই বিভাগের প্রতিটা জেলাতে খুব সহজে যোগাযোগ বাহ যাতাযাত করা সম্ভব হয়। তাছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে রেল, সড়কপথ, আকাশপথ সংযোগ ব্যবস্থা থাকায় যাত্রাসুবিধার প্রধান স্থল হিসাবে গণ্য করা হয় এই বিভাগকে। এই বিভাগের অন্তরগত জেল শহর গুলোর মদ্যেও যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত মানের এবং সহজতরো।