প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্যে ভরা আমাদের এই বাংলাদেশ। এই দেশে পরিচিত অপরিচিত অনেক পর্যটক-আকর্ষক স্থান আছে। এর মধ্যে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ এবং মিনার, পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত, পাহাড়, অরণ্য ইত্যাদি অন্যতম। এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি এলাকা বিভিন্ন স্বতন্ত্র্র বৈশিষ্ট্যে বিশেষায়িত।
ইতিহাসঃ-
বাংলাদেশ মানে বাঙ্গালিদের দেশ বা বাংলাভাষার দেশ। এটি পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানকার মানুষ শুধু মাত্র ভাষার জন্য প্রান দিয়ে ছিল। বাংলাদেশের আধিকারিক নাম পিপিল রিপাব্লিক অফ বাংলাদেশ। এই দেশ আয়তনের দিক থেকে ছোট হলেও এই দেশের জনসংখ্যা অনেক বেশি, প্রায় ১৬ কোটি ২৯ লাখ ৫১ হাজার জনসংখ্যা নিয়ে এই দেশ বিশ্বের অষ্টম সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসাবে পরিচিত। বাংলাদেশ পৃথিবীর তৃতীয় সবচেয়ে বেশি মুসলিম জনসংখ্যার দেশ যা পাকিস্থান ও ইন্দোনেশিয়ার পড়েই স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশের রাজধানী এবং সবচেয়ে বড় শহর হল ঢাকা। এই শহরে বাস করে প্রায় দেড় কোটি মানুষ আর এত বেশি জনসংখ্যার জন্যই এই শহরটি বিশ্বের জনবহুল শহর গুলির মধ্যে একটি। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ পাকিস্থানের অংশ ছিল। ১৯৭১ সালের ২৬সে মার্চ বাংলাদেশ ,পাকিস্থান থেকে বিভক্ত হয়ে স্বাধীন একটি দেশে পরিণত হয়। তাই ২৬সে মার্চ বাংলাদেশে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। ছোট্ট এই দেশটিতে প্রায় সাতশোরও বেশি নদি আছে। গঙ্গাকে এখানে মেঘনা ও ব্রম্ভপুত্রকে এখানে যমুনা বলা হয়। এই দেশে সাতশোরও বেশি নদি থাকার জন্য এই দেশকে মাটি খুবই উর্বর, বাংলাদেশকে পৃথিবীর সবচেয়ে উর্বর মাটির দেশও বলা হয়।
নামকরনের ইতিহাসঃ-
বাংলাদেশ নামের পেছনে রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস। কীভাবে এ দেশের নাম বাংলাদেশ রাখা হল-এ বিষয়টিকে ইতিহাসের কয়েকটি পরিক্রমায় ভাগ করে বিশ্লেষণ করেন ইতিহাসবিদরা।
#১৯৫২ সালে সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বাংলা ভাষা থেকে বাংলা। এর পর স্বাধীন দেশের আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে দেশ। এই দুটি ইতিহাস ও সংগ্রামকে এক করে ‘বাংলাদেশ’ নামকরণ করা হয়।
#ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেনও বাংলাদেশ শব্দের উৎপত্তিগত ব্যাখ্যা দেন। তার মতে, আর্যরা বঙ্গ বলে এই অঞ্চলকে অভিহিত করত। বাংলা শব্দের উৎপত্তি হয়েছে সংস্কৃত শব্দ বঙ্গ থেকে। তবে বঙ্গে বসবাসকারী মুসলমানরা বঙ্গ শব্দটির সঙ্গে ফার্সি আল প্রত্যয় যোগ করে। এতে নাম দাঁড়ায় ‘বাঙাল’ বা বাঙ্গালাহ। জমির বিভক্তি বা নদীর ওপর বাঁধ দেয়াকে আল বলা হয়।
#সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ইতিহাসবিদ আবুল ফজলের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, মুসলমান শাসনামলে বিশেষ করে ১৩৩৬ থেকে ১৫৭৬ সাল পর্যন্ত সুলতানি আমলে এবং ১৫৭৬ সালে মোগলরা বাংলা দখল করার পর এ অঞ্চলটি বাঙাল বা বাঙ্গালাহ নামেই পরিচিতি পায়। তবে বাংলা, বাঙাল বা দেশ-এই তিনটি শব্দের কোনোটিই বাংলা শব্দ নয়। এগুলো ফার্সি ভাষা থেকে এসেছে।
সিমানাঃ-
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার উত্তর পূর্ব অংশে অবস্থিত। বাংলাদেশের উত্তর সীমানা থেকে কিছু দূরে হিমালয় পর্বতমালা এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরাম রাজ্য এবং মায়ানমারের পাহাড়ী এলাকা।
নদ-নদীঃ-
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। অসংখ্য নদ-নদী পরিবেষ্টিত বাংলাদেশ প্রধানত সমতল ভূমি। দেশের উল্লেখযোগ্য নদ-নদী হলো- পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, সুরমা, কুশিয়ারা, মেঘনা ও কর্ণফুলী।
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনঃ-
বাংলাদেশের জন্মলগ্নের অনেক আগে থেকেই এই অঞ্চলটিতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জাতি কিংবা বর্ণের মানুষের আগমন ঘটে। সেই সব সময়কার অনেক স্থাপনা এখনও অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে–ময়নামতি, মহাস্থানগড় এবং পাহাড়পুর।
খাদ্যঃ-
বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাবার ভাত হলেও বাংলাদেশের মানুষ অনেক খবার রশিক। তাই এখানে অঞ্চল ভেদে বিশেষ বিশেষ খাবারের প্রচলন দেখা যায়। বাংলাদেশের অনেক অনেক বিখ্যাত খাবার রয়েছে।
অর্থনীতিঃ-
বাংলাদেশ মূলত কৃষি প্রধান দেশ। এই দেশের বেশিরভাগ মানুষের প্রধান আয়ের উৎস কৃষি কাজ। তবে বাংলাদেশে অনেক বড় বড় কলকারখানা রয়েছে। দিন দিন বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি উচ্চমুখী হচ্ছে।
প্রবেশঃ-
যে দেশগুলির নাগরিকদের ৯০ দিন পর্যন্ত থাকার জন্য ভিসার প্রয়োজন হয় না: অ্যান্টিগুয়া ও বার্বুডা, বাহামা দ্বীপপুঞ্জ, ভূটান, ডোমিনিকা, ফিজি, গাম্বিয়া, গ্রেনাডা, গিনি-বিসাউ, জ্যামাইকা, গায়ানা, হন্ডুরাস, লেসোথো, মালাউই, মালদ্বীপ, মন্টসেরাট, পাপুয়া নিউগিনি, সেন্ট কিট্স ও নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইন দ্বীপপুঞ্জ, সেশেল, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, উরুগুয়ে, ভ্যাটিকান সিটি এবং জাম্বিয়া।
অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের বর্তমান ভিসা ডাটাবেসের আওতায় ৯০ দিনের আগমনের ভিসার জন্য ৫০ মার্কিন ডলার দিতে হয়।
পরিবহণ:-
১) নৌপথঃ বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। তাই বাংলাদেশের প্রাচীনতম যাতায়াত পথ হিসেবে গণ্য করা হয় নৌপথ বা জলপথকে। নৌপথের নদীপথ এবং সমুদ্রপথ উভয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। নদীমাতৃক দেশ হিসেবে অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ব্যবস্থায় নদীপথ গুরুত্বপূর্ণ, তবে বহির্বিশ্বের সাথে যাতায়াত ব্যবস্থায় সমুদ্রপথ ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে প্রায় ৮৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ অভ্যন্তরীণ নাব্য জলপথ রয়েছে। এর মধ্যে ৫৪০০ কিলোমিটার সারা বছর নৌচলাচলের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। অবশিষ্ট প্রায় ৩০০০ কিলোমিটার শুধু বর্ষাকালে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের নদীগুলো নৌচলাচলের জন্য বেশি উপযোগী। এ অঞ্চলেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দরগুলো অবস্থিত: ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, খুলনা প্রভৃতি।
দেশের সমুদ্রপথ মূলত ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের প্রধান দুইটি সমুদ্র বন্দর, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর, মোংলা সমুদ্র বন্দর এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর একাজে ব্যবহৃত হয়।
২)স্থলপথঃ বাংলাদেশের স্থল যোগাযোগের মধ্যে সড়কপথ উল্লেখযোগ্য। সড়কপথের অবকাঠামো নির্মাণ এদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও ভৌগোলিক অবকাঠামোর মধ্যে বেশ ব্যয়বহুল। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে দেশের জাতীয় মহাসড়ক ৩৪৭৮ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪২২২ কিলোমিটার এবং ফিডার/জেলা রোড ১৩২৪৮ কিলোমিটার। দেশের সড়কপথের উন্নয়নের জন্য “বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন” (বিআরটিসি) নামে একটি সংস্থা গঠন করা হয়েছে। সড়কপথে প্রায় সব জেলার সাথে যোগাযোগ থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো (ব্রিজ, কালভার্ট) নির্মিত না হওয়ায় ফেরি পারাপারের প্রয়োজন পরে।
এছাড়া স্থলভাগে রেলপথ সবচেয়ে নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা হিসেবে ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের সময় বাংলাদেশে রেলপথ ছিলো ২৮৫৭ কিলোমিটার। ২০০৮-২০০৯ সালের হিসাবমতে, বাংলাদেশে রেলপথ রয়েছে ২৮৩৫ কিলোমিটার। এদেশে মিটারগেজ এবং ব্রডগেজ-দু’ধরনের রেলপথ রয়েছে।
৩)আকাশপথঃ- এছাড়াও দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে বাংলাদেশে আকাশপথে বা বিমানপথে যাতায়াতের ব্যবস্থাও রয়েছে। অভ্যন্তরীণ বিমান যাতায়াত ব্যবস্থায় দেশের ভিতরকার বিভিন্ন বিমানবন্দরে যাতায়াত করা যায়, আর আন্তর্জাতিক বিমান যাতায়াত ব্যবস্থায় শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বহির্দেশে গমনাগমন করা যায়। ঢাকার কুর্মিটোলায় অবস্থিত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাংলাদেশের অন্যতম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট এবং কক্সবাজারেও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা হলো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
পর্যটনঃ-
বাংলাদেশ পরজতনের জন্য বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশের যোগাযোগ ও পর্যটন খাত অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিল। আগস্ট, ১৯৭৫ সালে পৃথক একটি মন্ত্রণালয় হিসেবে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করা হয়। বাংলাদেশে রয়েছে বিশ্বের সবথেকে বড় প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত, বিশ্বের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন “সুন্দরবন”, সবুজের লীলাভূমি পার্বত্য অঞ্চল এবং আরও অনেক দর্শনীয় স্থান। প্রতি বছর দেশ বিদেশের হাজারো পর্যটক বাংলাদেশের এই প্রাকৃতিক সুন্দর রুপ উপভোগ করতে আসে।