বরিশাল বিভাগ

নদীমাতৃক আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। দেশের আনাচে-কানাচে জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য নদ-নদী। তেমনই এক বৃহত্তর নদী কীর্তনখোলা নদী। বরিশাল কীর্তনখোলা নদীর তীরে বেড়ে উঠা এক বৈচিত্র্য ও ঐতিহ্যের বিভাগ বরিশাল। বৃহত্তম এই অঞ্চলটি নদ-নদী ও সমুদ্র বেষ্টিত বৃহত্তম এই অঞ্চলটি বরিশাল বিভাগ নামে পরিচিত। কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত এই শহরের পুরাতন নাম চন্দ্রদ্বীপ। দেশের খাদ্যশষ্য উৎপাদনের একটি মূল উৎস এই বৃহত্তর বরিশাল বিভাগ। একে বাংলার ‘ভেনিস’ বলা হয়। বরিশাল বিভাগে রয়েছে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি নদীবন্দর। বরিশাল বিভাগ বাংলাদেশের আটটি বিভাগের একটি। ১৯৯৩ সালে তৎকালীন খুলনা বিভাগের ছয় জেলা নিয়ে এই বিভাগের যাত্রা শুরু হয়।

আয়তন ও অবস্থানঃ-

উত্তরে চাঁদপুর, মাদারিপুর ও শরিয়তপুর জেলা; দক্ষিণে ঝালকাঠি, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলা; পূর্বে লক্ষ্মীপুর, ভোলা জেলা ও মেঘনা নদী এবং পশ্চিমে পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও গোপালগঞ্জ জেলা অবস্থিত।

নদ-নদীঃ-

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জালের ন্যায় নদী ছড়িয়ে আছে; বরিশাল বিভাগেও তেমনই নদ-নদীর সংখ্যা প্রচুর। এই বিভাগের উল্লেখযোগ্য নদ-নদীসমূহ হচ্ছে কীর্তনখোলা, মেঘনা, আড়িয়াল খা ধানসিঁড়ি, সন্ধ্যা।

নামকরণের ইতিহাসঃ-

বরিশাল বিভাগের নামকরণ সম্পর্কে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। কিংবদন্তি থেকে জানা যায়, পূর্বে এখানে খুব বড় বড় শাল গাছ জন্মাতো; আর শাল গাছ থেকেই ‘বরিশাল’ নামের উৎপত্তি। ‘আইতে শাল, যাইতে শাল / তার নাম বরিশাল’ প্রবাদটি উল্লেখ্য। আবার, কেউ কেউ দাবি করেন যে, পর্তুগীজ বেরি ও শেলির প্রেমকাহিনীর জন্য বরিশাল নামকরণ করা হয়েছে। অন্য এক কিংবদন্তি থেকে জানা যায়, গিরদে বন্দরে (গ্রেট বন্দর) ঢাকার নবাবদের বড় বড় লবণের গোলা ও চৌকি ছিল। ইংরেজ ও পর্তুগীজ বণিকরা বড় বড় লবণের চৌকিকে ‘বরিসল্ট’ বলতো। আবার, অনেকের ধারণা, এখানকার লবণের দানাগুলোর আকার বড় বড় ছিল বলে ‘বরিসল্ট’ বলা হতো। পরবর্তিতে এ শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে বরিশাল নামের উৎপত্তি হয়েছে।

প্রশাসনিক অঞ্চল সমুহঃ-

এই বিভাগের মোট জেলার সংখ্যা ৬টি। উক্ত জেলাসমূহ হলোঃ-

১)বরিশাল জেলা

২)পটুয়াখালী জেলা

৩)ভোলা জেলা

৪)পিরোজপুর জেলা

৫)বরগুনা জেলা

৬)ঝালকাঠি জেলা।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

ব্রজমোহন কলেজ বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি ১৮৮৯ সালে অশ্বিনীকুমার দত্ত প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে উচ্চ শিক্ষার জন্য বরিশাল বিভাগে দুটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ( বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়), একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় (গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ), দুটি সরকারি মেডিকেল কলেজ (শের-এ-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ) ও একটি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ) রয়েছে। এছাড়াও প্রতি জেলায় উচ্চ শিক্ষার জন্য বেশ কয়েকটি কলেজ ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট রয়েছে। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বরিশাল বোর্ডে ২০টি সরকারি কলেজ সহ মোট কলেজের সংখ্যা ৩০৯টি।

দর্শনীয় স্থানঃ-

বাংলাদেশের দক্ষিণাচলে অবস্থিত সমুদ্রের উপকূলবর্তী বরিশাল বিভাগ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। বরিশাল বিভাগের প্রত্যেকটা জেলাতেই অসংখ্য দর্শনীয় চিত্তাকর্ষক স্থান রয়েছে। এসব পর্যটন স্থান ভ্রমণ করতে প্রতি বছর হাজার হাজার দেশি এবং নিদেশি পর্যটক ভিড় জমায়। এই প্রবন্ধটিতে বরিশাল বিভাগের প্রত্যেকটা জেলার বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান সমূহের নাম উল্লেখ করা হল।

১)কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত

২)দূর্গা সাগর

৩)মনপুরা দ্বীপ

৪)সোনারচর

কীভাবে যাবেন বরিশালঃ-

ঢাকা শহর থেকে বরিশাল যাওয়ার সবচেয়ে আরামদায়ক যান হলো নৌযান। ঢাকার সদরঘাট থেকে বরিশালের উদ্দেশে ছেড়ে যায় বিলাসবহুল বেশ ক’টি লঞ্চ, স্টিমার।