বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক প্রত্নতাতিক ঐতিহ্য সমৃদ্ধ মন্দির প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের প্রশাসনিক অঞ্চল সিরাজগজ্ঞ জেলাতে “নবরত্ন মন্দির” নামে প্রত্নতাতিক ঐতিহ্য সমৃদ্ধ একটি প্রাচীন মন্দির রয়েছে। মন্দিরটি সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল গ্রামে অবস্থিত। তবে স্থানীয়ভাবে এটি দোলমঞ্চ নামেও পরিচিত।
প্রাচীন কালে এই বঙ্গ বিভিন্ন হিন্দু রাজের রাজত্বে পরিচালিত হয়েছে। সে রাজাদের শ্বাসন কালে রাজারা অনন্য স্থাপনার নকশা সম্বলিত বিভিন্ন মন্দির স্থাপন করেন। কালের বিবর্তনে রাজাদের শ্বাসন কাল শেষ হয়ে গেলেও মন্দিরগুলো এখনও তাদের অন্য বিশিষ্ট নিয়ে টিকে আছে। তাদের মধ্যে অন্যতম নবরত্ন মন্দির। নবরত্ন মন্দিরটি আবিষ্কারের সময় এখানে কোন শিলালিপির অস্তিত্ব ছিল না বলে এর নির্মাণকাল সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। তবে জনশ্রুতি অনুসারে, মন্দিরটি ১৬৬৪ সালের দিকে রামনাথ ভাদুরী নামে স্থানীয় এক জমিদার নির্মাণ করেছিলেন।
হিন্দু স্থাপত্যের উজ্জ্বল নিদর্শন কারুকার্যমন্ডিত নবরত্ন মন্দিরটি ৩ তলা বিশিষ্ট। এ মন্দিরে ছিল পোড়ামাটির ফলক সমৃদ্ধ ৯টি চূড়া। এজন্য এটিকে নবরত্ন মন্দির বলা হতো। তিনতলা এই মন্দিরের আয়তন ৬৫.২৪ বাই ৬৫.২৪। বর্গাকার মন্দিরটি প্রায় ২ ফুট প্লাটফরমের উপর তৈরী। মন্দিরের মূল কক্ষটি বেশ বড়। চারদিকের দেওয়ালের বাইরের চারপাশে পোড়ামাটির ফলক দিয়ে সাজানো। নির্মাণশৈলীর দিক থেকে উঁচু একটি বেদীর উপর নবরত্ন পরিকল্পনায় নির্মিত মন্দিরের প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্যে ১৫.৪ মিটার এবং প্রস্থে ১৩.২৫ মিটার। মন্দিরের নীচতলায় ২টি বারান্দা বেষ্টিত একটি গর্ভগৃহ। এর বারান্দার বাইরের দিকে ৭টি এবং ভিতরের দিকে ৫টি খিলান বা প্রবেশ পথ। গর্ভগৃহের পূর্ব ও দক্ষিন দিকে ২টি প্রবেশ পথ আর মন্দিরের ২য় তলায় কোন বারান্দা নাই।
বাংলাদেশের অন্য সকল মন্দির গুলোর মতো এই নবরত্ন মন্দির মন্দির নিয়েও স্থানীয়দের কাছে থেকে কিছু গল্প শোনা যায়। কথিত আছে যে,রামনাথ ভাদুরী দিনাজপুরের তৎকালীন রাজা প্রাণনাথের বন্ধু ছিলেন। ভাদুরী তাঁর বন্ধুকে তাঁর রাজ্যের রাজস্ব পরিশোধে একবার সাহায্য করেছিলেন। তারই ফলস্বরূপ প্রাণনাথ দিনাজপুরের কান্তনগর মন্দিরের অদলে সিরাজগঞ্জে এই মন্দিরটি নির্মাণ করে দেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন ভাদুরী তার নিজস্ব অর্থ ব্যয় করেই এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।
যেভাবে যাবেনঃ-
ঢাকা থেকে সরাসরি বাস কিংবা ট্রেইনে চেপে সরাসরি সিরাজগঞ্জ শহরে পৌঁছানো যায়। ঢাকার গাবতলি,সায়দাবাদ,মহাখালি বাস টার্মিনাল গুলো থেকে বাস পাওয়া যায়।কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেইন যাত্রা শুরু হয়। সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুলে পৌঁছে আপনি বাস অথবা সিএনজি অটো রিকশা নিয়ে নবরত্ন মন্দির পৌঁছানো যায়।