বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমূখী সেতু।

1645

রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজরীত সিরাজগজ্ঞ জেলাটির তাঁতশিল্প, নদীরক্ষা বাধ, বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর অববাহিকা, বিভিন্ন ব্রীজ, পুরান কালে নির্মিত অনেক মসজিদ, ইকো পার্ক, বিভিন্ন খ্যাতিনামা ব্যক্তিদের বসতবাড়ি জেলাটিকে এসে দিয়েছে এক অনন্য পর্যটনসমৃদ্ধ জেলার খ্যাতি। এই জেলাটির পর্যটন আকর্ষনের মধ্যে অন্যতম বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমূখী সেতু।

বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম এবং বিশ্বের ১১তম দীর্ঘ সেতু এটি। ১৯৯৮ সালের জুন মাসে এটি উদ্বোধন করা হয়। বাংলাদেশের ৩টি বড় নদীর মধ্যে সবচেয়ে বৃহত্তম এবং পানি নির্গমনের দিক থেকে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম নদী যমুনার উপর এটি নির্মিত হয়েছে। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এর নামানুসারে সেতুটির নামকরণ করা হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু বাংলাদেশের পুর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে দুই অংশকে একত্রিত করেছে। এই সেতু নির্মাণের ফলে জনগণ বহুভাবে লাভবান হচ্ছে এবং এটি আন্তঃআঞ্চলিক ব্যবসায় ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সড়ক ও রেলপথে দ্রুত যাত্রী ও মালামাল পরিবহন ছাড়াও এই সেতু বিদ্যুৎ ও প্রাকৃতিক গ্যাস সঞ্চালন এবং টেলিযোগাযোগ সমন্বিত করার অপুর্ব সুযোগ করে দিয়েছে। টাঙ্গাইল থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত এই সেতু এশীয় মহাসড়ক ও আন্তঃএশীয় রেলপথের উপর অবস্থিত। এ দুটি সংযোগপথের কাজ শেষ হওয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে উত্তর-পশ্চিম ইউরোপ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন আর্ন্তজাতিক সড়ক ও রেলসংযোগ স্থাপিত হয়।সেতুটি নির্মাণে মোট খরচ হয় ৯৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আইডিএ, জাপানের ওইসিএফ প্রত্যেকে ২২ শতাংশ পরিমাণ তহবিল সরবরাহ করে এবং বাকি ৩৪ শতাংশ ব্যয় বহন করে বাংলাদেশ। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৪.৮ কিঃ মিঃ এবং প্রস্থ ১৮.৫ মিঃ।

জনশ্রুতি আছে যে, মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী ১৯৫৮ ইং সনের নির্বাচনের প্রাক্কালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী প্রচারণা অভিযানে সিরাজগঞ্জ শহরে এক জনসভায় সর্বপ্রথম যমুনা সেতু নির্মানের কথা উচ্চারণ করেছিলেন। উওরবঙ্গে প্রচুর কাঁচা তরিতরকারী উৎপাদন হয়। আর সে সময়ের নদীবন্দর হিসেব সিরাজগঞ্জ ঘাটে ঐসব তরিতরকারী বিপননের জন্য স্ত্তপাকার হয়ে থাকত। খারাপ আবহাওয়ার কারণে নদী পথে পরিবহনের সমস্যা সৃষ্টি হলে ঐসব কাঁচা তরিতরকারী নষ্ট হয়ে যেত এবং উৎপাদনকারী কৃষক তার নাম মাত্র মূল্য পেত। এ অবস্থার প্রেক্ষিতেই মাওলানা ভাসানী বলেছিলেন, ‘‘আজ উওরবঙ্গের কৃষককূল পটরে দাম পায় মাত্র এক আনা সের। আর আমরা ঢাকা শহরে এই পটল কিনি চার আনা সের। যদি যমুনা নদীতে একটি সেতু নির্মাণ করা যায় তবে উওরবঙ্গের কৃষক বাচেঁ। জনশ্রুতি সত্য হলে সম্ভবতঃ এটাই যমুনা নদীতে সেতু নির্মাণ সেতু নির্মাণ সন্মন্ধে রাজনৈতিকভাবে প্রথম উচ্চারণ।

যেভাবে যাবেনঃ-

ঢাকা থেকে সরাসরি বাস কিংবা ট্রেইনে চেপে সরাসরি সিরাজগঞ্জ শহরে পৌঁছানো যায়। ঢাকার গাবতলি,সায়দাবাদ,মহাখালি বাস টার্মিনাল গুলো থেকে বাস পাওয়া যায়।কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেইন যাত্রা শুরু হয়। সিরাজগঞ্জ শহরে যাত্রা পথে যমুনা বহুমূখী সেতু চোখে পড়ে।