নদীঘেরা নির্মল প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যে জেলা টাঙ্গাইল। ঢাকার খুব কাছে হওয়ায় ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এ জেলা পেয়েছে অন্যতম গ্রহণযোগ্যতা। ইতিহাস, ঐতিহ্য ও টাঙ্গাইলের কৃতি সন্তানদের তালিকা বেশ বড়। তবে জেলার অন্যতম আকর্ষণ হলো এখানকার জমিদার বাড়িগুলো।তাদের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হচ্ছে টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলায় অবস্থিত ‘ধনবাড়ী জমিদার বাড়ি’। স্থানীয়ভাবে নবাব বারী (নবাব বাড়ী) হিসাবে পরিচিত। নাথান কমিটির সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার প্রস্তাবক এবং ব্রিটিশ সরকারের প্রথম মুসলিম মন্ত্রী খান বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর অমর কৃর্তি এই জমিদার বাড়ি। ১৯১৯ সালে ইংরেজ লর্ড রোনাল্ডশ্যকে আমন্ত্রন জানাতে নবাব আলী চৌধুরী এই জমিদারবাড়িটি নির্মাণ করেন। এই বাড়ি নির্মাণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো ইংরেজ রাজাদের থাকার জায়গা নিশ্চিত করা।
বৈরান ও বংশী নদীর মাঝখানে ১২০ বিঘা জমির ওপর প্রায় ৭০০ বছর আগে স্থাপিত হয় ধনবাড়ি নওয়াব বাড়ি, যা বর্তমানে নবাব প্যালেস নামে পরিচিত। নবাব বাড়িতে রয়েছে নবাব প্যালেস, আবাস ভবন এবং কাছারি ভবনসহ আরো কয়েকটি ভবন। রয়েছে কনফারেন্স হল, কনভেনশন হল, ডাইনিং হল, নবাব মিউজিয়াম ও পাঠাগার। তিন গম্বুজবিশিষ্ট একটি মসজিদ ও একটি সুন্দর বাগান। চার গম্বুজ বিশিষ্ট অপূর্ব স্থাপত্য রীতির শতাব্দী প্রাচীন এই নবাব প্যালেসটি পর্যটকদের দারুণভাবে আকর্ষণ করে। প্রাচীর ঘেরা নবাব মঞ্জিল বা নবাব প্যালেস এবং নবাব কাচারিকে বর্তমানে পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে। প্রাসাদটি দক্ষিণমুখী এবং দীর্ঘ বারান্দা সম্বলিত।বর্তমানে নবাব আলী চৌধুরীর উত্তরসূরিরা এই রাজবাড়ির দেখাভাল করছেন এবং পর্যটকদের অবস্থানের জন্য তারা এখানে কয়েকটি কটেজও নির্মাণ করেছেন
নবাব বাড়ির পাশেই রয়েছে নবাব বাড়ি মসজিদ। বাংলাদেশের প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে এই মসজিদটি অন্যতম। ষোড়শ শতাব্দীতে সেলজুক তুর্কি বংশের ইসপিঞ্জার খাঁ ও মনোয়ার খাঁ দুই ভাই এ মসজিদটির প্রথম খন্ড (এক কক্ষ বিশিষ্ট মসজিদ) নির্মাণ করেন। মোঘল সম্রাট আকবরের সময় এ দুই ভাই ধনবাড়ির অত্যাচারী জমিদারকে যখন পরাজিত করে এ অঞ্চলের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তখন এ মসজিদটি নির্মাণ হয়।
যেভাবে যাবেনঃ-
ঢাকার মহাখালি বাসস্ট্যান্ড থেকে বিনিময় পরিবহনে করে যেতে পারেন। এই বাসটি ধনবাড়িতে ঠিক রাজবাড়ির সামনেই থামে। এছাড়া নিরালা পরিবহন নামক বাসেও চড়তে পারেন। এই বাসটি মহাখালি থেকে ছেড়ে যায় এবং প্রায় ৩ ঘণ্টায় টাঙ্গাইলে পৌছে। সরাসরি টাঙ্গাইল যাওয়াতে এই বাসটিকে থামতে হয়না। টাঙ্গাইল থেকে প্রায় ২ ঘণ্টায় সিএনজি অটোরিকশায় করে রাজবাড়িতে পৌছানো যায়।