রাজাঝির দীঘি বা রাজনন্দিনীর দীঘি ফেনীর একটি ঐতিহ্যবাহী দীঘি। ফেনী জেলার জিরো পয়েন্টে ফেনী রোড ও ফেনী ট্রাংক রোডের সংযোগ স্থলে এটি অবস্থিত। জনশ্রুতি আছে, ত্রিপুরা মহারাজের একজন রাজার কন্যার অন্ধত্ব দূর করার মানসে এ দীঘি খনন করা হয়। স্থানীয় ভাষায় কন্যা-কে ঝি বলা হয় তাই দীঘিটির নামকরণ করা হয় ‘রাজাঝির দীঘি’। ১৮৭৫ সালে ফেনী মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হলে তার সদর দপ্তর গড়ে তোলা হয় এই রাজাঝির দীঘির পাড়ে। দীঘির পাড়ে বর্তমানে ফেনী সদর থানা, ফেনী কোর্ট মসজিদ,অফিসার্স ক্লাব, ফেনী রিপোর্টাস ক্লাব, জেলা পরিষদ পরিচালিত শিশু পার্ক সহ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন গড়ে উঠেছে।
ফেনীর রাজাঝির বা রাজনন্দিনীর দীঘির জল এমন চমৎকার ছিল যে, একজন রাজসাহী (রাজশাহী) নিবাসী ইন্সপেক্টর আমাকে বলিয়াছিলেন, তিনি ও তাহার সমস্ত পরিবার ম্যালেরিয়া রোগে কঙ্কালসার হইয়া, কেবল এই দিঘীর জল খাইয়া আরোগ্য লাভ করিয়াছিলেন। চারিদিকের গ্রামের ও ট্রাঙ্ক রোডের যাত্রী শত শত লোক প্রত্যহ তাহার জল পান করিত। উহা ফেনীর জীবন ও শোভা, উভয় বলিলেও হয়।’ ফেনীর প্রথম মহকুমা প্রশাসক (১৮৭৬) কবি নবীন চন্দ্র সেন তাঁর ফেনীর কথা বইতে রাজাঝির দীঘি সম্পর্কে এমন কথা লিখেছিলেন।
দীঘিটি প্রায় ১০ একরের বেশি জায়গা জুড়ে অবস্থিত। ফেনী জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, প্রায় দেড়শ বছর আগে এ দীঘির পাড়ে গড়ে ওঠা প্রশাসনিক কার্যালয়গুলো ১৯৮৪ সালে ফেনী জেলা হওয়ার পর অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে কিছু ভবন এখন পরিত্যক্ত পড়ে রয়েছে। বর্তমানে ফেনী পৌরসভা দীঘির তিনদিকে উত্তর-দক্ষিণ- পূর্ব পাশে দেওয়াল নির্মাণ করেছে। পশ্চিম পাশে এখনও পুরাতন ভাঙা গাড় দেখা যায়। দর্শানার্থীর বসার জন্য পূর্ব-দক্ষিণ পাশে গাড়ের উপর পাকা সিঁড়ি বানানো হয়েছে। চলাচলের জন্য দীঘির দুইপাশ (উত্তর ও পশ্চিম) কিছুটা উম্মুক্ত রাখা হয়েছে। বাকি দুইপাশে হকারদের দোকান বসে। এতে দীঘির সৌন্দর্য কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। তবে দীঘির জল যাতে সবাই স্পর্শ করতে পারে, সেইজন্য তিন পাশে পাঁচটি সিঁড়ির নির্মাণ করা হয়েছে। দীঘিতে ময়লা আবর্জনা যাতে বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে গড়িয়ে পড়তে না পারে তার জন্য চারপাশ উঁচু করা হয়েছে। বর্তমানে দীঘির পানি পানের ও ব্যবহারের উপযোগী।
কিভাবে যাবেন:-
ফেনী জেলায় সাধারনত সড়ক পথেই ভ্রমণ করা হয়ে থাকে। ঢাকার সায়েদাবাদ জনপথের মোড় থেকে প্রতিদিন প্রতিদিন সকাল ৬ টা থেকে ১ ঘন্টা পর পর ফেনীর উদ্দ্যেশে বাস ছেড়ে যায়। এদের মধ্যে ড্রীম লাইন, সেবা চেয়ার কোচ, স্টার লাইন অন্যতম। এ ছাড়াও চট্টগ্রাম গামী লোকাল বাস গুলোতে ফেনী যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে ফেনীর ভাড়া নিতে পারে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।