নিঝুম দ্বীপ | ট্র্যাভেল নিউজ বাংলাদেশ

1031

বঙ্গোপসাগরের কোলে মেঘনার শাখা নদী,অসংখ্য শ্বাসমূলে ভরা কেওড়া বন ও বালুচরবেষ্টিত সমুদ্র সৈকতের নিশ্চুপ ছোট্ট সবুজ ভূখণ্ড নিঝুম দ্বীপ। এটি নোয়াখালী জেলার হাতিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা ছোট্ট একটি ভূ-খণ্ড। ‘দ্বীপ’ বলা হলেও এটি মূলত একটি ‘চর’। এক সময় এটিকে চর ওসমান বা বল্লার চরও বলা হতো। বেশ কয়েকটি ছোট চরের সমন্বয়ে ১৯৫০ সালের শুরুর দিকে এ দ্বীপাঞ্চলটি জেগে ওঠে, যার আয়তন প্রায় ১৪,০৫০ একর। ১৯৫০ সালের শুরুর দিকে নোয়াখালী জেলার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের অগভীর এলাকায় উত্তর দীপপুঞ্জে একটি ক্লাস্টার আবির্ভূত হয়।এই নতুন স্যান্ডব্যাংকগুলোকে প্রথমে জেলেদের একটি গোষ্ঠী আবিষ্কার করে। পরে ১৯৭৯ সালে সাবেক মন্ত্রী আমিরুল ইসলাম কালাম এটিকে নিঝুম দ্বীপ নামে নামকরণ করেন। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের আগ পর্যন্ত এখানে কোনো লোকবসতি ছিলো না,তাই দ্বীপটি নিঝুমই ছিলো। পরবর্তীতে সত্তরের দশকে বন বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়।

১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের বনবিভাগ এখানে উপকূলীয় বনাঞ্চল গড়ে তোলার কাজ শুরু করে। ২০ বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রায় ২ কোটি ৪৩ লক্ষ গাছের চারা রোপণ করা হয়। এই অঞ্চলের বনভূমির গাছপালার মধ্যে আছে কেওড়া, গেওয়া, কাঁকড়া, বাইন ইত্যাদি। এছাড়াও প্রায় ২১ প্রজাতির বৃক্ষ ও ৪৩ প্রজাতির লতাগুল্ম আছে এই দ্বীপে। চিত্রাহরিণ, বন্য কুকুর, সাপ, বনবেড়াল ইত্যাদি প্রাণী ও সারস, মাছরাঙা, সোয়ালো, বুলবুলি, হট্টিটি, চিল, আবাবিল সহ প্রায় ৩৫ প্রজাতির পাখির সমন্বয়ে এই দ্বীপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিবেচনায় অমূল্য সম্পদ। ১৯৭৮ সালে বনবিভাগ চার জোড়া চিত্রা হরিণ এনে দ্বীপে জঙ্গলে ছাড়ে। পরবর্তী কয়েক দশকে এর পরিমাণ বেড়ে বিশ হাজারের বেশি বলে জানা যায়। শীতকালে অতিথি পাখির বিচরণে এই দ্বীপ অনন্য এক রূপ ধারণ করে। সমগ্র বাংলাদেশে অতিথি পাখির যেই অপূর্ব বিচরণ দেখা যায়, তার সবচেয়ে মধ্যকার সবচেয়ে অভিন্ন, অনিন্দ্য এবং বৈচিত্র্যময় দৃশ্যের দেখা মেলে এই দ্বীপে।

কিভাবে যাওয়া যায়:

স্থল ও জলপথ, উভয় পথেই আসা যাওয়া করা যায় এই দ্বীপে। সড়ক পথে সময় কিছুটা কম লাগে। সড়কপথে গেলে বাস কিংবা ট্রেন উভয়ভাবেই যাওয়া যায়। লঞ্চে করে গেলে সদরঘাট থেকে সরাসরি পৌঁছে যাবেন হাতিয়ার তমুরুদ্দি ঘাটে। ঢাকা থেকে প্রতিদিন হাতিয়ার উদ্দেশ্যে লঞ্চ একবারই ছেড়ে যায় এবং লঞ্চ একদম সঠিক সময়ে ছাড়ে। তাই এই ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। সন্ধ্যায় ছেড়ে যাওয়া লঞ্চ পরদিন সকাল ৮-৯টার মধ্যে হাতিয়ার তমুরুদ্দি ঘাটে পৌঁছায়।