মুন্সিগজ্ঞ জেলা

1227

ঢাকা বিভাগের অন্তরগত একটি অন্যতম জেলা মুন্সিগজ্ঞ। এই অঞ্চলটি প্রাচীন বাংলার গৌরবময় স্থান বিক্রমপুরের অংশ হওয়ায় ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের দিক থেকে জেলাটি নিজ মহিমায়া উজ্বল। পদ্মা, মেঘনা, ধলেশ্বরী, ইচ্ছামতি নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠা দ্বীপ দেশ মুন্সিগজ্ঞ। দ্বীপ দেশ হওয়া সত্বেও এই জেলার কিছু কিছু অঞ্চল যথেষ্ঠ পরিমার উচু কিন্তু এ জেলায় কোন পাহাড় নেই। মুন্সিগজ্ঞ জেলার অধিকাংশ অঞ্চল নিম্নভূমি বলে বর্ষার সময় এই অঞ্চল গুলো পানিতে তলিয়ে যায়। নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠেছে বলে অর্থনৈতিক ভাব এই জেলাটি খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।যদিও একটি সময় এই অঞ্চলের মানুষের প্রধান কাজ ছিলো কৃষি কিন্তু বর্তমান সময়ে এই অঞ্চলে অনেক বড়ো বড়ো শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে যা এই অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভুমিকা রাখছে।

ইতিহাস এবং ঐতিহ্যঃ

ইতিহাস, ঐতিহ্য আর বহু কীর্তিমান মনীষির স্মৃতিধন্য মুন্সিগঞ্জ জেলা। এ জেলার প্রাচীন নিদর্শনসমূহের সাথে জড়িয়ে আছে হাজারো গৌরব গাঁথা, সুখ-দু:খের নানা উপাখ্যান। সংগীত, নাটক, নৃত্য, সাহিত্য, আবৃত্তি, সংস্কৃতির সকল শাখায় সমৃদ্ধ এ মুন্সিগঞ্জ। এ জেলা সুপ্রাচীন চন্দ্ররাজাদের তাম্রশাসনের অঞ্জলি থেকে শুরু করে পাল, সেন, মোঘল, বার ভূঁইয়াদের কীর্তিতে সমুজ্জ্বল হয়ে একটি স্বাধীন বঙ্গ রাজ্যের রাজধানী বিক্রমপুরের কীর্তিময় অংশ। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িত রয়েছে মুন্সিগঞ্জ বাসীর অবিস্মরণীয় অবদান। ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, বিশেষত: আলু চাষ ভিত্তিক কৃষি এবং প্রায় পঁচাত্তর হাজারের অধিক প্রবাসী এ জেলার অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। সুপ্রাচীন কাল থেকেই এই অঞ্চল তার বৌদ্ধ জ্ঞান চর্চার জন্য এবং পরবর্তীতে সাংস্কৃতিক প্রভাবের জন্য সুপরিচিত । বঙ্গভঙ্গের সময় বিক্রমপুরবাসীর কর্মদক্ষতা সম্পর্কে ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড কার্জন বলেছিলেন, ‘আমি বিক্রমপুরবাসীদের কর্মদক্ষতা সম্পর্কে বেশ অবগত আছি। এ রকম সুনিপুণ রাজকর্মচারী পৃথিবীর আর কোথাও নেই। বিক্রমপুর সম্পর্কে লর্ড কার্জনের আরো দুটি উক্তি ‘দিস পার্ট অব ইন্ডিয়া ইজ দি মোস্ট অ্যাডভান্সড রুরাল ট্র্যাঙ্ক ইন ব্রিটিশ ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইটস পিপল আর একসেলেন্ট’ এবং ‘বিক্রমপুর ইজ টু দি রেস্ট অব ইন্ডিয়া হোয়াট এডিনবরা ইজ টু দি রেস্ট অব ইউরোপ’। ১৯১৫ সালে লর্ড কারমাইকেল বিক্রমপুর ভ্রমণ করে লিখলেন, ‘বিক্রমপুর অনেকটা আমার দেশ স্কটল্যান্ডের মতো মুন্সিগঞ্জ অঞ্চলের অনেক কৃতী ব্যক্তিত্ব আছেন যেমন- অতীশ দীপঙ্কর, বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারক। ইমদাদুল হক মিলন, লেখক। চাষী নজরুল ইসলাম, চলচ্চিত্র পরিচালক।জগদীশ চন্দ্র বসু, বিজ্ঞানী। ব্রজেন দাস, ইংলিশ চ্যানেল জয়ী সাঁতারু। হুমায়ুন আজাদ, ভাষাবিদ, লেখক। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, লেখক। চিত্তরঞ্জন দাস, রাজনীতিবিদ। বুদ্ধদেব বসু,কবি। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়,ঔপন্যাসিক সহ আরও অনেকে।

নামকরণের ইতিহাস:-

মুন্সিগজ্ঞের প্রাচীন নাম ছিলো ইদ্রাকপুর। মোঘল শ্বাসনআমলে এই ইদ্রাকপুর গ্রামে মুন্সী হোসের নামে একজন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি মোঘল শাসক দ্বারা ফৌজদার হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। অত্যন্ত সজ্জন ও জনহিতৈষী মুন্সী হায়দার হোসেনের নামে ইদ্রাকপুরের নাম হয় মুন্সীগজ্ঞ। কারো কারো মতে জমিদার এনায়েত আলী মুন্সীর নাম অনুসারে মুন্সিগজ্ঞের নামকরণ করা হয়।

দর্শনীয় স্থানঃ-

১)সুয়াপাড়া মিয়া বাড়ি মসজিদ

২)পোলঘাটার ইটের পুল

৩)শ্যামসিদ্ধির মঠ

৪)ইদ্রাকপুর কেল্লা

৫)সোনারং জোড়া মঠ

৬)বাবা আদম শহীদ মসজিদ

৭)অতীশ দীপঙ্করের বাস্তুভিটা

৮)বল্লাল সেনের দীঘি

৯)রায় বাহাদুর শ্রীনাথ রায়ের বাড়ি

১০)জগদীশ চন্দ্রের পৈতৃক নিবাস

বিখ্যাত খাবার:-

ভাগ্যকুলের মিষ্টি