গাজীপুর জেলার চান্দনা চৌরাস্তায় অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের পর সর্বপ্রথম নির্মিত ভাস্কর্য জাগ্রত চৌরঙ্গী। মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের অসামান্য আত্মত্যাগের স্মরণে নির্মিত এই ভাস্কর্যটির ভাস্কর আবদুর রাজ্জাক। এটি ১৯৭৩ সালে নির্মাণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় নির্মিত এটিই প্রথম ভাস্কর্য বলে স্বীকৃত। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চের আন্দোলন ছিল মুক্তিযুদ্ধের সূচনাপর্বে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ। সেই প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয় এখানেই। শহীদ হুরমত উল্লাহ ও অন্য শহীদদের অবদান এবং আত্মত্যাগকে জাতির চেতনায় সমুন্নত রাখতে জয়দেবপুর চৌরাস্তার সড়কদ্বীপে স্থাপন করা হয় দৃষ্টিনন্দন এই ভাস্কর্য।এক হাতে রাইফেল ও অন্য হাতে গ্রেনেড ছোড়ার দৃপ্ত ভঙ্গিতে নির্মিত এই ভাস্কর্যটি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সশস্ত্র প্রতিরোধের স্মৃতিচিহ্ন হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে।
ইতিহাস থেকে জানায়ায় যে, পাকবাহিনী জয়দেবপুর থেকে ঢাকায় ফেরার পথে সাধারণ জনতার তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে। এখানেই গাজীপুরের ফুটবল খেলোয়াড় হুরমত উল্লাহ একজন পাকিস্তানি সৈন্যকে ঝাপটে ধরে রাইফেল ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। হুরমত জানতেন না কীভাবে রাইফেল চালাতে হয়। এটি দেখতে পেয়ে একজন পাক সেনা হুরমতকে গুলি করে মাথার খুলি উড়িয়ে দেয়। কেবল হুরমত নন, পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে এদিনের প্রতিরোধে আরও শহীদ হয়েছিলেন নেয়ামত আলী ও মনু খলিফা। সেই স্মরণে নির্মিত হয় ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’।
ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-জয়দেবপুর এর সংযোগস্থলে ১০০ ফুটের এ ভাস্কর্যের চারদিক জুড়ে আছে মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৬ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের শহীদ ২০৭ মুক্তিযোদ্ধার নাম। তৎকালীন ঢাকার চারু ও কলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের নকশায় তিনি ও তার সহকারী হামিদউজ্জামান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির প্রকৌশলীদের সহযোগিতায় ১৯৭২- ১৯৭৩ সালে এটি নির্মাণ করেন বলে গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এমএ বারী জানিয়েছেন। সেনাবাহিনীর সাবেক অ্যাডজুডেন্ট মেজর জেনারেল আমিন আহমদ চৌধুরী নির্মাণ কাজের তত্ত্বাবধান করেন।
যেভাবে যাবেনঃ
ঢাকা শহরের যেকোন জায়গা থেকে গাজীপুরগামী বাস পাওয়া যায়। যে কোন একটি বাসে চেপে সরাসরি গাজীপুর চৌরাস্তা। সেখানেই এই মহান ভাস্কর্য জাগ্রত চৌরঙ্গী অবস্থিত।