বালিয়াটি জমিদারবাড়ি| ট্র্যাভেল নিউজ বাংলাদেশ

1043

বালিয়াটি প্রাসাদ বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত মানিকগঞ্জ জেলার সদর থেকে আনুমানিক আট কিলোমিটার পশ্চিমে এবং ঢাকা জেলা সদর থেকে পয়ত্রিশ কিলোমিটার দূরে সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি গ্রামে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের ১৯ শতকে নির্মিত অন্যতম প্রাসাদ। একে বালিয়াটি জমিদার বাড়ি বা বালিয়াটি প্রাসাদ বলেও ডাকা হয়। মানিকগঞ্জে যে কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে তার মধ্যে বালিয়াটি প্রাসাদ অন্যতম।

বালিয়াটি জমিদারবাড়ির বালিয়াটির জমিদাররা আঠারো শতকের প্রথম ভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথমভাগ প্রায় দুইশ বছরের এ দীর্ঘ সময়টাতে বালিয়াটির জমিদারদের সুখ্যাতি ছিল বিস্তর। বালিয়াটি প্রাসাদের সবচেয়ে দারুণ ব্যাপারটি হলো, প্রায় একই ধাঁচের দেখতে চারটি প্রাসাদ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে রয়েছে, হঠাৎ দেখলে মনে হতে পারে, কেউ বোধহয় অন্য কোথা থেকে চারটি আলাদা ভবন উঠিয়ে এনে পাশাপাশি বসিয়ে রেখেছে! আসলে এই সব প্রাসাদ একই সময়ে স্থাপিত হয়নি, জমিদারদের বিভিন্ন উত্তরাধিকারের দ্বারা বিভিন্ন সময়ে স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু এখন গিয়ে দেখলে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা চারটি প্রাসাদ দেখলে বেশ বিস্মিতই হতে হয়।

বালিয়াটি জমিদারবাড়ির বিশাল কমপ্লেক্সটি উঁচু দেয়ালে ঘেরা। প্রাচীন আমলের সেই প্রাচীর এখনও টিকে আছে। এ চার দেয়ালের মাঝে এখন রয়েছে চারটি সুদৃশ্য ভবন। আর ভবনগুলোর সামনের প্রাচীর দেয়ালে রয়েছে চারটি প্রবেশ পথ। আর চারটি ভবনের পেছন দিকে আছে আরও চারটি ভবন। চারটি প্রবেশ পথের চূড়ায় রয়েছে পাথরের তৈরি চারটি সিংহমূর্তি। সিংহ দরজা পেরিয়ে বাইরে বেরোলেই দীর্ঘ পুকুর। পুকুরের জলে বালিয়াটি প্রাসাদের প্রতিচ্ছবি আজো মন ভরে দেয় সবার। বালিয়াটি জমিদার বাড়ি মূলত পাঁচটি মহলে প্রতিষ্ঠিত হলেও বর্তমানে টিকে আছে প্রায় একই রকম চারটি মহল। আর এ চারটি মহলের মাঝের দুটি দোতলা আর দু পাশের দুটি তিন তলা।

প্রাসাদ চারটির মাঝখানের একটির নাম রং মহল, এই রং মহলেই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের একটি জাদুঘর আছে। জাদুঘরের নিচ তলায় আছে জমিদারদের ব্যবহৃত অনেকগুলো সিন্দুক, দ্বিতীয় তলায় রয়েছে জমিদারদের ব্যবহৃত অনেক দ্রব্য, যেমন- ইংল্যান্ড থেকে আনা হারিকেন, আসবাব, বন্দুক রাখার তাক, বেশ কিছু বাহারি লন্ঠন ও ঝাড়বাতি। পুরো জমিদার বাড়িতে প্রায় দুইশ’র বেশি কক্ষ রয়েছে, পুরো বাড়ি ৫.৮৮ একর জমির উপর অবস্থিত। প্রাসাদগুলোর সামনে থাকা সারি সারি কোরিনথিয়ান কলাম, লোহার পেঁচানো সিঁড়ি- সব কিছু মিলিয়ে বালিয়াটি জমিদার বাড়ি সত্যিই এক জমজমাট জায়গা।

কিভাবে যাবেন:-

ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে গাবতলী এসে তারপর বালিয়াটি জমিদারবাড়ি যাওয়া যায়। গাবতলী থেকে এসবি লিংক বাসে করে সরাসরি বালিয়াটি প্রাসাদ যাওয়া যায়। এসবি লিংক বাসে গাবতলী থেকে বালিয়াটি প্রাসাদ পর্যন্ত ভাড়া ৬৫ টাকা। তা ছাড়া গুলিস্তান থেকে সরাসরি বিআরটি বাস বা শুভযাত্রা বাসে ৮০ টাকা দিয়ে মানিকগঞ্জের আগের বাসস্ট্যান্ড কালাপুর নেমে ওখান থেকে সিএনজি ৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে সরাসরি বালিয়াটি প্রাসাদ যাওয়া যায়।