গাজীপুর জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে কালের সাক্ষী হয়ে প্রায় অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক ভাওয়াল রাজবাড়ি। আয়তন এবং কক্ষের হিসেবে এটি একটি বিশাল আকারের রাজবাড়ি। প্রায় ৫ একর জায়গার ওপর রাজবাড়িটি নির্মিত। এ রাজবাড়ির পশ্চিম পাশে রয়েছে বিশাল একটি দীঘি এবং সামনে রয়েছে বিশাল সমতল একটি মাঠ। রাজবাড়িটির পুরো এলাকাই সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। ঐতিহ্যবাহী ভাওয়াল রাজবাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভাওয়াল রাজা সন্ন্যাসী মেজকুমার রমেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরির মৃত্যুর ১২ বছর পর পুনঃআবির্ভাবের শ্বাসরুদ্ধকর ইতিহাস।
যা দেখতে পাবেনঃ
গাজীপুরের জয়দেবপুর মৌজায় অবস্থিত রাজবাড়ি। জয়দেবপুর- রাজবাড়ি সড়কের রাস্তার উত্তর পাশে রাজবাড়ি আর দক্ষিণ পাশে রাজবাড়ি মাঠ। রাজবাড়ির সীমানা প্রাচীর দেখে মুগ্ধ হবেন অনেকেই। সীমানা প্রাচীরেও কারুকার্য খচিত, বেশ উঁচু। প্রধান ফটক থেকে প্রায় অর্ধবৃত্তাকারের দুটো পথের যে কোনো একটা ধরে অগ্রসর হলেই মূল রাজপ্রাসাদ।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ৩৬৫টি কক্ষ বিশিষ্ট ভাওয়াল রাজবাড়িটি মূলত উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত, দৈর্ঘ্য ৪০০ফুট এবং দ্বিতল। বিশালাকৃতির রাজবাড়িটির বিভিন্ন অংশের রয়েছে পৃথক পৃথক নাম। যেমন- বড় দালান, রাজ বিলাস, পুরানবাড়ী, নাটমন্দির, হাওয়া মহল, পদ্মনাভ ইত্যাদি।
রাজবাড়ির সামনের অংশের নাম বড় দালান। এর নিচ তলায় প্রশস্ত বারান্দা, তিনটি কক্ষ রয়েছে। নিচতলা থেকে ওপরের তলায় যাওয়ার জন্য রয়েছে ভাওয়ালের ঐতিহ্যবাহী শাল কাঠের সিড়ি। ওপর তলায় রয়েছে একটি বড় হল ঘর এবং দুপাশে দুটি কক্ষ। বড় দালান বর্তমানে গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
বড় দালানের পিছনে (উত্তর পাশে) রয়েছে একটি খোলা প্রাঙ্গণ, এটি নাটমন্দির হিসেবে পরিচিত। এর পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ছিল আবাসনের জন্য নির্মিত বারান্দাযুক্ত কক্ষ। নাট মন্দিরের উত্তর পাশের প্রাসাদগুলি পুরানবাড়ি নামে পরিচিত। ভাওয়াল রাজবাড়ির দরজা-জানালা এবং অধিকাংশ সিড়ি এবং বারান্দার বেস্টনিগুলো শাল কাঠের তৈরি। বড়দালান সংলগ্ন (পূর্বপাশে) রাজা কালী নারায়ণ রায়ের নিঃসন্তান ভগ্নি কৃপাময়ী দেবীর বাড়ি (ট্রেজারি)। এ ছাড়া রাজবাড়ির পূর্বপাশে ম্যানেজারের অফিস (বর্তমানে জয়দেবপুর সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়), পশ্চিমপাশে দেওয়ানখানা (রানী বিলাসমণি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়), রাজদীঘির পশ্চিমপাড়ে খাসমহল ছিল (ডা. আশু বাবুর বাড়ি)।
কীভাবে যাবেন :
দেশের যে কোরো স্থান থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা হয়ে শিববাড়ি মোড়। সেখান থেকে জয়দেবপুর-রাজবাড়ি সড়ক হয়ে পূর্ব দিকে কিছু দূর অগ্রসর হলে এ রাজবাড়িটির অবস্থান। আর ট্রেনে নামতে হবে জয়দেবপুর জংশনে। একইভাবে যেতে হবে রাজবাড়িতে। এটুকু পথের জন্য রিকশাই সবচেয় ভাল বাহন। কারণ রাজবাড়ির প্রধান ফটকের সামনেই অহরোহ রিকশা থামে। ভাড়া ও খুব বেশি নয়।