মানিকগঞ্জের মুসলিম পুরাকীর্তির বেশীর ভাগই বাংলার স্বাধীন সুলতানী আমল ও পরবর্তী মুসলিম শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ সময়ে প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি জামে মসজিদের মধ্যে মাচাইন গ্রামের মসজিদ অন্যতম। স্বাধীন সুলতানী আমলে মাচাইন একটি প্রসিদ্ধ গ্রাম ছিল। এখানে একজন দরবেশ একটি বাঁশের মাচায় বসে আধ্যাত্বিক চিন্তা করতেন। এই দরবেশের নাম হযরত শাহ্ রুস্তম। বর্তমানে মাচাইন গ্রামে শাহ্ রুস্তমের মাজার জিয়ারত মানিকগঞ্জ জেলাসহ আশেপাশের অঞ্চলের মানুষের কাছে একান্ত শ্রদ্ধার বিষয়। এই মাচাইন গ্রামের ঐতিহাসিক মাজার ও পুরোনো মসজিদটি মানিকগঞ্জের মুসলিম পুরাকীর্তির দু’টি বিশেষ নজির হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর ও শিবালয় থানার সীমান্তে এই মাচাইন গ্রাম। বাংলার বিখ্যাত হোসেন শাহী বংশের খ্যাতিমান সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ এর রাজত্ব কালে শাহ্ রুস্তম রহঃ মানিকগঞ্জ অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচার করার জন্য আসেন এবং মাচাইন গ্রামে খানকা প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। তার অলৌকিক গুণে মুগ্ধ হয়ে এলাকার লোকজন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি একটি মাচানের উপর অবস্থান করতেন। ধীরে ধীরে হযরতশাহ রুস্তুমের ভাবশিষ্য ও ভক্তগণ ঐ মাচান ও খানকার আশে-পাশে বাড়ি ঘর প্রতিষ্ঠা করে বসবাস করতে থাকেন।
অনেকে মনে করেন হযরত শাহ্ রুস্তুম জনশূন্য বিজন বালুচরে খানকা প্রতিষ্ঠা করেছিল। কিন্ত উক্ত ধারনা সঠিক নয়। জনারণ্যেই তিনি খানকা স্থাপনা করেছিলেন। মাচাইন গ্রামটি বর্তমানে ইছামতি নদীর তীরে অবস্থিত। কিন্ত হযরত শাহ রুস্তম যথন মাচাইন গ্রামে আসেন, তখন কোশী ও তিস্তার স্রোতধারা অবলম্বন করে প্রাচীন ভুবনেশ্বর নদী প্রবহমান ছিল বলে জানা যায়। পূর্ব বাংলার বিক্রমপুর, সোনারগাও, ঢাকা, সাভার ও ধামরাইর সঙ্গে পশ্চিম বাংলা ও পশ্চিম ভারতীয় রাজধানী সমূহের জলপথের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ অঞ্চলে মাচাইন গ্রামের অবস্থান। এ জলপথের উভয় তীর ভূমিতেই এলাকার প্রাচীন জনপদ গড়ে ওঠেছিল।
স্থানীয় কিংবদন্তি অনুযায়ী হযরত শাহ রুস্তম রহঃ নামে এক কামেল দরবেশ ইছামতি নদীর উপরে বাঁশের মাচানে বসে এবাদত করতেন এই মাচাইন নামানুসারে পরবর্তীতে মাচাইন গ্রামের নামের উৎপত্তি হয়।
তৎকালীন স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ নদীর উপর মাচায় বসা ধ্যানরত মহান সাধক হযরত রোস্তম শাহ রঃ এর সহিত সাক্ষাৎ করতে তার নৌকার মাঝি মাল্লাদের যাত্রা বিরতির নির্দেশ দেন এবং পরে শাহ্ হযরত রোস্তম শাহ্ রঃ এর সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। উল্লেখ্য সুলতান আলাউদ্দিন মুসলিম শাসক ছিলেন। তিনি হযরত রুস্তম শাহের ইসলাম প্রচারে খুবই খুশি হয়েছিলেন। এই মহান বুজুর্গ সাধকের প্রতি তার বিশেষ ভক্তি শ্রদ্ধার উদ্রেক হয়। তার শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ এলাকায় ইসলাম প্রচারের সুবিধার্থে ১৫০১ খ্রিস্টাব্দে মাচাইন গ্রামে একটি সুরম্য মসজিদ প্রতিষ্ঠা করুন। তিন গম্বুজ বিশিষ্ঠ নান্দনিক শিল্প মন্ডিত মুসলিম শাসক আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্ র প্রতিষ্ঠিত মসজিদটি, ” শাহ্ হযরত রোস্তম শাহ্ রঃ পূণ্য স্মৃতি আজও বহন করে চলছে।
কিভাবে যাবেন:
মানিকগঞ্জ থেকে সড়ক পথে বাসযোগে টেপড়া যেতে হয়। দূরত্ব ১৫ কিঃমিঃ। ভাড়া ১০/- টাকা।সেখান থেকে টেম্পু /রিক্সাযোগে যাওয়া যায়। দূরত্ব ৮ কিঃমিঃ। টেম্পুভাড়া ১৫/- টাকা। রিক্সাভাড়া ৫০/-