জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও কবিপত্নী প্রমীলার স্মৃতি বিজরিত মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার তেওতা জমিদার বাড়ি। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও তার সহধর্মিণী আশালতা সেনপুপ্ত ওরফে প্রমীলা দেবীর পৈতৃক বাড়ী এই জমিদার বাড়ীর সংলগ্ন হওয়ায় কবি ও কবিপত্নীর স্মৃতি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এই জমিদার বাড়িতে। দেশের পুরাকীর্তি স্থাপনার মধ্যে মানিকগঞ্জের তেওতা জমিদার বাড়ী ইতিহাস অন্যতম। এর বাড়ির ঐতিহাসিক নির্দর্শন এখন শুধু কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শিবালয় উপজেলার যমুনা নদীর কূলঘেঁষা সবুজ-শ্যামল গাছপালায় ঢাকা তেওতা গ্রামটিকে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে দিয়েছে জমিদার শ্যামশংকর রায়ের প্রতিষ্ঠিত নবরত্ন মঠটি।
ইতিহাসবিদদের মতে, সতেরশ শতকে এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এটি নির্মাণ করেছিলেন পঞ্চানন সেন নামের এক জমিদার। জনশ্রুতি আছে, পঞ্চানন সেন এক সময় খুবই দরিদ্র ছিলেন। দিনাজপুর অঞ্চলে তিনি তামাক উৎপাদন করে প্রচুর ধন সম্পত্তির মালিক হওয়ার পর এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। পরবর্তিতে এখানে জমিদারি প্রতিষ্ঠিত করেন জয়শংকর ও হেমশংকর নামের দুই ব্যক্তি। ভারত বিভক্তির পর তারা দুজনেই ভারত চলে গেলে বাড়িটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়।
যমুনা নদীর কোঁলঘেষা তেওতা জমিদার বাড়িটি মোট ৭.৩৮ একর জমি নিয়ে স্থাপিত। বাড়ির পূর্ব দিকে রয়েছে লালদিঘী অন্দরমহল। এর পাশেই অবস্থিত প্রমিলার পৈতৃক বাড়ি। দক্ষিন পাশে রয়েছে টালি দ্বারা নির্মিত বিশাল কাচারী ঘর। উত্তর পাশে রয়েছে চার তলা বিশিষ্ট ৭৫ ফুট উচ্চতার নবরত্ন মঠ। এর সামনেই পশ্চিম দিকে রয়েছে শান বাঁধানো পুকুর। দৃষ্টি নন্দন ও শৈল্পিক এই বাড়িটি সঠিক রক্ষনাবেক্ষণের অভাবে দিন দিন ধ্বংস হচ্ছিল। মূল প্রাসাদের চারপাশে রয়েছে আরও বিভিন্ন ধরণের স্থাপনা ও একটি বড় পুকুর। প্রাসাদের মূল ভবনটি লালদিঘী ভবন নামে পরিচিত। এখানে একটি নটমন্দিরও রয়েছে। এছাড়াও এখানে রয়েছে নবরত্ন মঠ ও আর বেশ কয়েকটি মঠ। সবগুলো ভবন মিলিয়ে এখানে মোট কক্ষ রয়েছে ৫৫টি। তেওতা জমিদার বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের প্রাচীন একটি জমিদার বাড়ি। বাড়িটি এখন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। এটি উপজেলার তেওতা নামক গ্রামে অবস্থিত।
যেভাবে যাবেনঃ-
ঢাকা থেকে প্রথমে আরিচা ঘাট যেতে হবে। সেখান থেকে বাস কিংবা নৌ পথে তেওতা জমিদার বাড়ি পৌঁছানো যায়।