মত্তের মঠ| ট্র্যাভেল নিউজ বাংলাদেশ

1632

মানিকগঞ্জে রয়েছে লোক সাহিত্যের মূল্যবান সম্পদ। রয়েছে ঐতিহ্যের অপরূপ সমারোহ। তার একটি মানিকগঞ্জের ‘মত্তের মঠ’।

প্রায় দুই শত পঞ্চাশ বছর পূর্বে ‘পটল’ গ্রামে হেমসেন নামে একজন অত্যাচারী জমিদার ছিলেন। কথিত আছে এই এলাকার কেউ জুতা পায়ে, ছাতা মাথায় দিয়ে হাঁটতে দেয়া হতো না। অত্যাচারী হলেও পিতৃভক্তির উজ্জল দৃষ্টান্ত স্বরূপ হেমসেন তার পিতার শেষকৃত্য স্থলে এ মঠটি নির্মাণ করেন। জানা যায়, সুদূর ইরাক থেকে কারিগর এনে নিটল দিঘির পাড়ে প্রায় দু’শ ফুট উঁচু আর পনের শতাংশ জমির উপর অপরূপ মঠটি নির্মাণ করা হয়। সুনিপুণ কারুকার্যের সুউচ্চ এ মঠ তৎকালীন সময়ে দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

১৯৬৫-৬৬ সালের দিকে আমেরিকার একদল পর্যটক এই মঠ (প্রথম হেলিকপ্টার অবতরণ) দেখতে এসে মেরামতের আগ্রহ প্রকাশ করে। কিন্তু এলাকার খ্যাতনামা হিন্দু পরিবার শিশির কুমার দাস গুপ্ত, প্রমোদ চন্দ্র দাস গুপ্ত, প্রভূত ব্যক্তিদের ধর্মীয় গোড়ামীর কারণে তা সম্ভব হয়নি। আরও জানা যায়, ১৯৭২ সালের দিকেও চীনের একদল পর্যটক মঠটি দেখতে এসে এর নির্মাণ শৈলী নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে।

জমিদার হেমসেন এর মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারী পুত্র মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে তখন থেকেই মঠটি রক্ষণাবেক্ষণ কাজে ভাটা পড়ে। বাংলা ১৩২৬ সালে আশ্বিন মাসের এক ঝড়ের বিকেলে  মঠের ওপরের ৫টি কলসিসহ প্রায় ২০ ফুট অংশ ভেঙ্গে নিটল দিঘির মধ্যে পড়ে যায়।

১৯৪৭ বর্তমান মানিকগঞ্জ সদরের দেড় মাইল পূর্বে মত্ত গ্রামটিতে এক সময় প্রতাপশালী জমিদারদের বসবাস ছিলো। তাদের মধ্যে রামকৃষ্ণ সেন এবং তার ছেলে প্রসন্ন কুমার সেনের নাম উল্লেখযোগ্য। মানিকগঞ্জের পুরাকীর্তির ইতিহাসে সদর উপজেলার মত্ত গ্রামের গুপ্ত পরিবারের অবদানের স্বীকৃতি পাওয়া যায়। এ পরিবারের আদি পুরুষ ছিলেন শিবানন্দ গুপ্ত। শিবানন্দ, প্রভাস গুপ্ত, শিশির গুপ্ত এবং প্রবোধ গুপ্ত পর্যন্ত মোট ২৩ পুরুষের সন্ধান জানা গেছে। গুপ্ত বংশের প্রতিষ্ঠাতা শিবানন্দ গুপ্ত নামকরা কবিরাজ ছিলেন। তিনি পাঠান সেনাপতি মীর মকিমের পারিবারিক চিকিৎসক ছিলেন। অনুমিত হয় যে, বাংলাদেশে পাঠান শসনামলে মত্তের গুপ্ত বংশীয় উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ এ এলাকায় যেমন বিশেষ প্রাধান্য বিস্তার করেছিলো তেমনি ভেষজ চিকিৎসা শাস্ত্রে তাদের অগাধ বুৎপত্তি প্রবাদের মতো লোকমুখে আজও উচ্চারিত হয়।

যেভাবে যাবেনঃ-

মানিকগঞ্জ শহর থেকে রিক্সাযোগে কিংবা পায়ে হেটে যেতে হয় ‘মত্তের মঠ। দূরত্ব ৩ কিঃমিঃ । রিক্সাভাড়া ২০/২৫ টাকা। রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা নেই।