ঠাকুরগাঁও একটি প্রাচীন ঐতিহ্য সমৃদ্ধ জনপদ। এখানে যেমন উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে, তেমনিভাবে বৌদ্ধ, হিন্দু ও মুসলমান শাসনামলে বিভিন্নমুখী পরিবর্তনের ছোয়া রয়েছে এখানে। জেলার অতী প্রাচীন পুকুরগুলি ও গড়গুলির অস্তিত্ব সুপ্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন তুলে ধরে।
কিন্তু ১৯৮১ সালে আটোয়ারি, পঞ্চগড়, বোদা, দেবীগঞ্জ ও তেতুলিয়া নিয়ে পঞ্চগড় আলাদা মহকুমা হলে ঠাকুরগাঁও পাঁচটি থানায় সংকুচিত হয়। থানাগুলি হচ্ছেঃ ঠাকুরগাঁও সদর, বালিয়াডাঙ্গী, পীরগঞ্জ, রানীশংকৈল ও হরিপুর। ১৯৮৪ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী এই পাঁচটি থানা ঠাকুরগাঁও জেলা যাত্রা শুরু করে।
নামকরনের ইতিহাস:-
ঠাকুরগাঁও এর আদি নাম ছিল নিশ্চিন্তপুর। ঠাকুরগাঁওয়ের নাম করণের ইতিহাস সম্পর্কে আর যা পাওয়া গেছে তাহলো, বর্তমানে যেটি জেলা সদর অর্থাৎ যেখানে জেলার অফিস-আদালত অবস্থিত সেখান থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তরে আকচা ইউনিয়নের একটি মৌজায় নারায়ণ চক্রবর্তী ও সতীশ চক্রবর্তী নামে দুইভাই বসবাস করতেন। সম্পদ ও প্রভাব প্রতি পত্তির কারণে তারা সেই এলাকায় খুব পরিচিত ছিলেন।সেখানকার লোকজন সেই চক্রবর্তী বাড়িকে ঠাকুরবাড়ি বলতেন। পরে স্থানীয় লোকজন এই জায়গাকে ঠাকুর বাড়ি থেকে ঠাকুরগাঁও বলতে শুরু করে। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারী ৫টি থানা নিয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
ভৌগোলিক সীমানা:-
ঠাকুরগাঁও জেলার উত্তরে পঞ্চগড় জেলা, দক্ষিণে দিনাজপুর জেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, পূর্বে দিনাজপুর জেলা এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ অবস্থিত।
ঠাকুরগাঁও জেলা ৫টি উপজেলা
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা;
পীরগঞ্জ উপজেলা;
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা;
রানীশংকৈল উপজেলা ও
হরিপুর উপজেলা।
কৃতি ব্যক্তিত্ব:-
রাজা গণেশ, (শাসনকাল ১৪১৫) ছিলেন বাংলার একজন হিন্দু শাসক। তিনি বাংলার ইলিয়াস শাহি রাজবংশকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতায় আসেন।
সুরবালা সেনগুপ্ত, (১৮৮১ – ১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩) ছিলেন ভারত উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন বিপ্লবী নেত্রী।
নরেন্দ্র চন্দ্র ঘোষ (জন্ম : ১৪ এপ্রিল, ১৯১২ – মৃত্যু ৪ আগস্ট ১৯৯৪) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের বিপ্লবী।
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, (৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৮ – ৬ নভেম্বর, ১৯৭০) একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক ।
স্বদেশরঞ্জন মুখোপাধ্যায় (জন্ম : ১৯২৪ – মৃত্যু ২০০৩) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের শহীদ বিপ্লবী।
তৃপ্তি মিত্র, (২৫ অক্টোবর, ১৯২৫ – ২৪ মে, ১৯৮৯) বাংলা ভাষার থিয়েটার ও চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় ভারতীয় অভিনেত্রী এবং শম্ভু মিত্রের স্ত্রী।
রমেশ চন্দ্র সেন (৩০ এপ্রিল, ১৯৪০) বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, (জন্মঃ ১ আগস্ট, ১৯৪৮) – বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।
দবিরুল ইসলাম (২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮) বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য।
বিখ্যাত খাবার:-
সূর্যপুরী আম
বিখ্যাত স্থান:-
জগদল বিরেন্দ্র নাথ চৌধুরীর পরিত্যাক্ত রাজবাড়ি
জামালপুর জমিদারবাড়ি জামে মসজিদ
বালিয়াডাঙ্গী সূর্যপুরী আমগাছ
ফান সিটি অ্যামিউজমেন্ট পার্ক অ্যান্ড ট্যুরিজম লি.
রাজভিটা
রাজা টংকনাথের রাজবাড়ি
হরিপুর রাজবাড়ি
জগদল রাজবাড়ি
প্রাচীন রাজধানীর চিহ্ন নেকমরদ
পীর শাহ নেকমরদের মাজার
মহালবাড়ি মসজিদ
শালবাড়ি মসজিদ ও ইমামবাড়া
সনগাঁ শাহী মসজিদ
ফতেহপুর মসজিদ
মেদিনীসাগর জামে মসজিদ
গেদুড়া মসজিদ
গোরক্ষনাথ মন্দির
কূপ ও শিলালিপি
হরিণমারী শিবমন্দির
হরিপুর রাজবাড়ি শিবমন্দির
গোবিন্দনগর মন্দির
ঢোলরহাট মন্দির
ভেমটিয়া শিবমন্দির
মালদুয়ার দুর্গ
মালদুয়ার দুর্গ
গড়গ্রাম দুর্গ
বাংলা গড়
গড় ভবানীপুর
গড়খাঁড়ি
কোরমখান গড়
সাপটি বুরুজ
কিভাবে যাবেন:-
সড়ক পথে ঢাকা হতে ঠাকুরগাঁওয়ের দূরত্ব ৪৫৯ কিলোমিটার এবং রেলপথে ঢাকা হতে ঠাকুরগাঁও রেল স্টেশনের দূরত্ব ৬৪০ কিলোমিটার। ঢাকার গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ, শ্যামলী, কল্যানপুর, কলাবাগান, ফকিরাপুল, আসাদগেট – প্রভৃতি বাস স্টেশন থেকে ঠাকুরগাঁও আসার সরাসরি দুরপাল্লার এসি ও নন-এসি বাস সার্ভিস আছে; এগুলোতে সময় লাগে ৭.৩০ হতে ১০ ঘন্টা।
ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ট্রেনে সরাসরি এখানে আসা যায়। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে প্রতিদিন একাধিক ট্রেন ঠাকুরগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
ঠাকুরগাঁওয়ে বিমানবন্দর থাকলেও তা চালু না-থাকায় এখানে সরাসরি আকাশ পথে আসা যায় না, তবে ঢাকা থেকে সরাসরি বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের সাথে; ঢাকা থেকে সৈয়দপুর এসে সেখান থেকে সড়কপথে ঠাকুরগাঁও আসা যায়।