সিলেট জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল সিলেট । এটি সিলেট বিভাগের অধিক্ষেত্রভুক্তি একটি জেলা । সিলেট বাংলাদেশের উওর-পূর্বে অবস্থিত একটি প্রাচীন জনপদ । বনজ, খনিজ ও মৎস্য সম্পদে ভরপুর এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত এ জেলা দেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত। জৈন্তিয়া পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য, জাফলং এর মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য, ভোলাগঞ্জের সারি সারি পাথরের স্তূপ পর্যটকদের টেনে আনে বার বার।
নামকরনের ইতিহাসঃ-
প্রাচীন গ্রন্থাদিতে এ অঞ্চলকে বিভিন্ন নামের উল্লেখ্য আছে। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে শিবের স্ত্রী সতি দেবীর কাটাহস্ত (হাত) এই অঞ্চলে পড়েছিল, যার ফলে ‘শ্রী হস্ত’ হতে শ্রীহট্ট নামের উৎপত্তি বলে হিন্দু সম্প্রদায় বিশ্বাস করেন। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের ঐতিহাসিক এরিয়ান লিখিত বিবরণীতে এই অঞ্চলের নাম “সিরিওট” বলে উল্লেখ আছে। এছাড়া, খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকে এলিয়েনের (অরষরবহ) বিবরণে “সিরটে”, এবং পেরিপ্লাস অবদ্যা এরিথ্রিয়ান সী নামক গ্রন্থে এ অঞ্চলের নাম “সিরটে” এবং “সিসটে” এই দুইভাবে লিখিত হয়েছে।অতঃপর ৬৪০ খ্রিস্টাব্দে যখন চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং এই অঞ্চল ভ্রমণ করেন। তিনি তাঁর ভ্রমণ কাহিনীতে এ অঞ্চলের নাম “শিলিচতল” উল্লেখ করেছেন তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দীন মুহম্মদ বখতিয়ার খলজী দ্বারা বঙ্গ বিজয়ের মধ্য দিয়ে এদেশে মুসলিম সমাজ ব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটলে মুসলিম শাসকগণ তাঁদের দলিল পত্রে “শ্রীহট্ট” নামের পরিবর্তে “সিলাহেট”, “সিলহেট” ইত্যাদি নাম লিখেছেন বলেই তিহাসে প্রমাণ মিলে। আর এভাবেই শ্রীহট্ট থেকে রূপান্তর হতে হতে একসময় সিলেট নামটি প্রসিদ্ধ হয়েউঠেছে বলে ঐতিহাসিকরা ধারণা করেন। এছাড়াও বলা হয়, এক সময় সিলেট জেলায় এক ধনী ব্যক্তির একটি কন্যা ছিল। তার নাম ছিল শিলা। ব্যক্তিটি তার কন্যার স্মৃতি রক্ষার্থে একটি হাট নির্মাণ করেন এবংএর নামকরণ করেন শিলার হাট। এই শিলার হাট নামটি নানাভাবে বিকৃত হয়ে সিলেট নামের উৎপত্তি হয়।
ভৌগোলিক সীমানাঃ-
সিলেট জেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয় ও খাশিয়া-জৈন্তিয়া পাহাড়, পূ্র্বে ভারতের আসাম, দক্ষিণে মৌলভীবাজার জেলা ও পশ্চিমে সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলা অবস্থিত। এই জেলার আয়তন ৩,৪৯০.৪০ বর্গ কিমি। বাৎসরিক সর্বচ্চো তাপমাত্রা ৩৩.২° সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩.৬° সেলসিয়াস। বাৎসরিক বৃষ্টিপাত ৩৩৩৪ মিলিমিটার। প্রধান নদী সুরমা ও কুশিয়ারা। হাওড় সংখ্যা ৮২ টি। সংরক্ষিত বনাঞ্চল ২৩৬.৪২ বর্গ কিলোমিটার। ভারতের খাশিয়া-জয়ান্তা পাহারের কিছু অংশ এই জেলায় পরেছে। এছাড়াও কিছু ছোট পাহাড় ও টিলা রয়েছে এখানে।
সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলা গুলো হল:
বালাগঞ্জ উপজেলা
বিয়ানীবাজার উপজেলা
বিশ্বনাথ উপজেলা
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা
গোলাপগঞ্জ উপজেলা
গোয়াইনঘাট উপজেলা
জৈন্তাপুর উপজেলা
কানাইঘাট উপজেলা
সিলেট সদর উপজেলা
জকিগঞ্জ উপজেলা
দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ও
ওসমানী নগর উপজেলা
কৃতি বাক্তিঃ-
জেনারেল এম,এ,জি ওসমানী
আগা মোহাম্মদ বেগ সিলেটে ব্রিটিশ বিরুধী আন্দলোনের সংগঠক ও নেতৃত্বদাতা।
সাইফুর রহমান সাবেক অর্থমন্ত্রী
আবুল মাল আব্দুল মুহিত
নুরুল ইসলাম নাহিদ
বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরী
হেমাঙ্গ বিশ্বাস
গোবিন্দ চন্দ্র দেব (১৯০৭-১৯৭১)
সুহাসিনী দাস
খান বাহাদুর এহিয়া চৌধুরী (১৮৫১-১৯২৫)
হেনা দাস
দর্শনীয় স্থানঃ-
জাফলং
ভোলাগঞ্জ
লালাখাল
তামাবিল
হাকালুকি হাওর [১৮]
ক্বীন ব্রীজ
হযরত শাহজালাল(রাঃ) ও হযরত শাহ পরাণ(রাঃ) এর মাজার শরীফ
মহাপ্রভু শ্রী চৈত্যনো দেবের বাড়ী
হাছন রাজার মিউজিয়াম
মালনি ছড়া চা বাগান
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর
পর্যটন মোটেল
জাকারিয়া সিটি
ড্রিমল্যান্ড পার্ক
কৈলাশটিলা
হাকালুকি হাওর
লালাখাল
পাংতুমাই
আলী আমজদের ঘড়ি
জিতু মিয়ার বাড়ী
মনিপুরী রাজবাড়ি।
মনিপুরী মিউজিয়াম
শাহী ঈদগাহ
ওসমানী শিশু পার্ক
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত
সিলেটি নাগরী লিপি
পাংতুমাই
রাতারগুল
টাংগুয়ার হাওর
লোভাছড়া
হাম হাম জলপ্রপাত
কৈলাশটিলা
পরিকুণ্ড জলপ্রপাত
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান
হারং হুরং
বরাক নদীর তিন মোহনা
কিভাবে যাবেন ঃ-
সড়ক পথে ঢাকা হতে সিলেটের দূরত্ব ২৪১ কিলোমিটার এবং রেলপথে ঢাকা হতে সিলেট রেল স্টেশনের দূরত্ব ৩১৯ কিলোমিটার ঢাকার সায়েদাবাদ বাস স্টেশন থেকে সিলেটে আসার সরাসরি দুরপাল্লার এসি ও নন-এসি বাস সার্ভিস আছে; এগুলোতে সময় লাগে ৪.৩০ হতে ৬ ঘন্টা।
ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন বা চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ট্রেনে সরাসরি সিলেট আসা যায়। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে প্রতিদিন একাধিক ট্রেন সিলেটের উদ্দেশ্যে ছাড়ে।
সিলেটে সরাসরি বিমানে আসা যায়; ঢাকা থেকে সিলেটের সাথে সরাসরি বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশ বিমান, জেট এয়ার, নোভো এয়ার, রিজেন্ট এয়ার, ইউনাইটেড এয়আর – প্রভৃতি বিমান সংস্থার বিমান পরিষেবা রয়েছে ঢাকা থেকে সিলেটে আসার জন্য।