সোনাকান্দা দুর্গ

1212

প্রাচীন বাঙলার অন্যতম ঐতিহাসিক সমৃদ্ধির শহর নারায়ণগঞ্জের অন্যতম ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান হল সোনাকান্দা দুর্গ। এটি মূলত একটি জল দুর্গ। শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব তীরে নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলায় এই দুর্গটি অবস্থিত। সোনাকান্দা দুর্গের অবস্থান নারায়ণগঞ্জ মূল শহর থেকেও প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে। নদীপথে রাজধানী ঢাকাকে সঙ্গে সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ নদীপথগুলোর নিরাপত্তার জন্য সেই সময়ে মোগল শাসকগণ তিনটি জলদুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। এগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হল সোনাকান্দা দুর্গ। বাকি দুটি হলো হাজীগঞ্জ দূর্গ ও ইদ্রাকপুর দুর্গ। ঢাকা নারায়ণগঞ্জসহ বহু দূর দূরান্তের দর্শনার্থীগণ আসেন অসাধারণ এই দুর্গটি দেখতে।
চতুর্ভুজাকৃতির এ দুর্গ আয়তনে ৮৬.৫৬ মি  ৫৭.০ মি এবং ১.০৬ মি পুরু দেওয়াল দ্বারা পরিবেষ্টিত যার উচ্চতা ৩.০৫ মি। দেওয়ালের তলদেশ নিরেটভাবে তৈরি। বৃত্তাকার কামান স্থাপনা মঞ্চটির পশ্চিম দিকে সিঁড়ি আছে, যা উত্তোলিত মঞ্চ পর্যন্ত বিস্তৃত। এ উঁচু মঞ্চে প্রবেশের জন্য পাঁচ খাঁজবিশিষ্ট খিলানযুক্ত প্রবেশ পথ রয়েছে। কামান স্থাপনার উঁচু মঞ্চে শক্তিশালী কামান নদীপথে আক্রমণকারীদের দিকে তাক করা থাকত। এটি মুগল জলদুর্গের একটি নতুন বৈশিষ্ট্য।

দুর্গটিতে দুটি প্রধান অংশ আছে। একটি অংশ বিশাল আয়তনের মাটির ঢিবিসহকারে গঠিত দুর্গপ্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত, যার মধ্যে গোলা নিক্ষেপের জন্য বহুসংখ্যক প্রশস্ত-অপ্রশস্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র আছে। অপর অংশটি সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ, যা দুর্গের অভ্যন্তরে পশ্চিমাংশে নির্মিত। সুরক্ষিত দেওয়ালের অভ্যন্তরে উঁচু মঞ্চটি ব্যতীত আর কোন স্থায়ী ইমারতের সন্ধান পাওয়া যায় নি। দুর্গপ্রাচীরের সর্বত্র গুলি ছোড়ার ব্যবস্থাসহ মারলোন দ্বারা সজ্জিত; এ মারলোনগুলির গড় উচ্চতা ১ মিটার।

দুর্গটিতে প্রবেশের জন্য উত্তর দিকে একটি প্রবেশদ্বার রয়েছে। খিলানযুক্ত এ প্রবেশপথ একটি আয়তাকার ফ্রেমে আবদ্ধ এবং উভয়দিক পলেস্তরায় বিভিন্ন আকৃতির প্যানেল নকশায় সজ্জিত। প্রবেশপথের মূল খিলান ছিল চতুষ্কেন্দ্রিক এবং চার কোণায় রয়েছে চারটি পার্শ্ববুরুজ। হাজীগঞ্জ এবং ইদ্রাকপুরের দুর্গ প্রাচীরের পার্শ্ববুরুজগুলির সাথে এ দুর্গের পার্শ্ববুরুজগুলির মিল নেই। সোনাকান্দা দুর্গের পার্শ্ববুরুজগুলি অষ্টভুজাকার।

দুর্গ নির্মাণের তারিখ সম্বলিত কোন  শিলালিপি নেই। তবে সাধারণত মনে করা হয় যে,  মীর জুমলার সময় দুর্গটি নির্মিত। কিন্তু এ মতের স্বপক্ষে কোন প্রমাণ নেই। ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার অন্যান্য মুগল জলদুর্গগুলির নির্মাণরীতির সাথে মিল থাকায় এটিকে সতেরো শতকের বলে মনে করা হয়।

যেভাবে যাবেনঃ-

ঢাকার গুলিস্তান থেকে বাসযোগে নারায়ণগঞ্জ শহরের ২নং লঞ্চ ঘাট থেকে নৌকা পার হয়ে বন্দর উপজেলার ঘাটে নেমে রিকশাযোগে সোনাকান্দা দূর্গে যাওয়া যাবে।