নদী মাতৃক এ বাংলাদেশ একটি অতি জটিল পলিভরণকৃত ব-দ্বীপ। অসংখ্য বিনুনি শাখা প্রশাখা সহ গঙ্গা-পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও মেঘনা এ ৩টি অন্যতম প্রধান ও সুবৃহৎ আন্তর্জাতিক নদীমালা কর্তৃক বাহিত পলিতে গঠিত এ বাংলাদেশ। এতদবিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে তৎকালীন সরকার ১৯৪৮ সালে ঢাকার গ্রীণরোডে প্রায় ১২ একর জমির উপর ‘‘হাইড্রলিক রিসার্চ ল্যাবরেটরী’’ নামে একটি গবেষণাগার স্থাপন করে। স্বাধীনতা উত্তরকালে ব্যাপক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৮ সালে নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে এবং ‘‘হাইড্রলিক রিসার্চ ল্যাবরেটরী’’ প্রতিষ্ঠানটি ইহার সহিত একীভূত করে। পরবর্তীতে পানি সম্পদ সেক্টরে বহুমুখী গবেষণা কার্যক্রম উত্তরোত্তর বৃদ্ধির লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ১৯৯০ সনের ৫৩নং আইন বলে নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট কে একটি সংবিধিবদ্ধ স্বায়ত্ব-শাসিত সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন হতে আলাদা করে সরাসরি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করে।
নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট (আরআরআই বা বাংলায় নগই) হল বাংলাদেশের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান যা প্রধানত বাংলাদেশের বন্যা নিয়ন্ত্রন, নদীর নাব্যতারক্ষা ও পাললিকীকরণ, সেচব্যবস্থা এবং নদীর তীর সংরক্ষণ কাজে জরিপ পরিচালনা ও ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ করে থাকে এবং এটি ফরিদপুরে অবস্থিত।[১][২] এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের অধীন একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট তিনটি বিভাগের সমন্বয়ে গঠিতঃ হাইড্রলিক রিসার্চ, জিওটেকনিক্যাল রিসার্চ এবং অর্থ ও প্রশাসন পরিদপ্তর।
১৯৮৯ সালে ফরিদপুর শহরের উপকন্ঠে হারুকান্দিতে ৮৬ একর জমির উপর এক মনোরম পরিবেশে নদী গবেষণা ইনষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এখনেএকটি সমৃদ্ধশালী লাইব্রেরী আছে, যেখানে হাইড্রলিক্স ও জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর দেশী ও বিদেশী ১৩১৩টি বই, ২৫৭৫টি জার্নাল, ৫৮৩৫টি রিপোর্ট, প্রসিডিংস সহ ৩৯১১টি প্রকাশনা আছে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আরআরআইতে ফিজিকাল মডেলিং এর সুবিধা রয়েছে। সম্প্রতি এখানে গানিতিক মডেলিং এর ব্যবস্থা যোগ করা হয়েছে। বিভিন্ন পানিসম্পদ উন্নয়ন সম্পর্কিত প্রকল্পে নির্ভুল বিচারের মাধ্যমে সমাধান বের করার ক্ষেত্রে ফিজিকাল মডেলিং এবং গানিতিক মডেলিং এর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা গিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন পানি ব্যবস্থাপনাকে ভালভাবে বুঝে প্রকৌশল সম্পর্কিত সমস্যার নিরাপদ এবং সুলভ সমাধান অর্জনের লক্ষ্যে আরআরআই ফিজিকাল মডেলিং এবং গানিতিক মডেলিং ব্যবহারের মাধ্যমে হাইব্রিড মডেলিং এপ্রোচ প্রনয়নের চেষ্টা করে চলেছে। বাঁধ, হেড রেগুলেটর এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষন কার্যক্রম প্রণয়নের উদ্দেশ্যে এই ইন্সটিটিউট নদীর গতিপথ এবং নদীতে প্রাণী ও উদ্ভিদের অস্তিত্বের উপর বিভিন্ন ধরনের সমীক্ষা পরিচালনা করছে।
কিভাবে যাবেন:-
রাজধানী শহরের সংগে সরাসরি বাস যোগাযোগ আছে। আন্তঃজেলা বাস যোগাযোগব্যবস্থা আছে। ঢাকা থেকে ফরিদপুরে সাধারনত সড়ক পথেই যাতায়াত করা হয়ে থাকে। ঢাকা থেকে ফরিদপুরে সড়ক পথে যাতায়েত করতে সময় লাগে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা, তবে ফেরী পারাপারের সময় যানজট থাকলে সময় বেশী লাগে।