বাংলাদেশের সকল জেলা গুলোর মধ্যে যে সকল জেলা প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক বাহ বাহক হিসাবে সদাদৃত তাদের মধ্যে নরসিংদী অন্যতম। উক্ত জেলাটিতে শুধু প্রাচীন যুগের ইতিহাসই জড়িত নয় বরং নব্য প্রস্তর যুগের সভ্যতার নিদর্শন ও পাওয়া যায় এখানে। এ জেলার উওর অঞ্চলে যেসকল পাহাড়ি ভূমি রয়েছে তাহ বাংলদেশের আদি ভূমির অন্তর্গত। বর্তামানে এই অঞ্চলটি ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত একটি জেলা। “তাঁত” শিল্পের জন্য বিখ্যাত এই জেলাটি ১৯৮৪ সালে স্বতন্ত্র জেলার মর্যাদা পায়। কলা, কাঁকরোল, শশা, ধান, পাট, সিম, বেগুন, আলু ওহ লটকন উৎপাদনে বাংলাদেশের উল্ল্যেখ যোগ্য জেলা নরসিংদী। তাছাড়া বাংলাদেশের মহান মুক্তি যুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন সহ অন্যান্য সকল আন্দোলস সংগ্রামে এই জেলার মানুষের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
নামকরণের ইতিহাস:-
হাবসী শ্বাসনআমলের শেষ পর্যায়ে সোনারগাঁও অঞ্চলের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে হিন্দু জমিদার ধনপদ সিংস বসতি স্থাপান করেন।পরবর্তীতে তার পুত্র নরসিংহী তার আবার শ্বাসন রাজ্য আরো বিস্তার করে “নরসিংহপুর” নামে একটি ছোট শহর প্রতিষ্ঠা করেন।ধারণা করা হয় পরবর্তীতে এই নরসিংহী রাজার নাম অনুসারেই এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয় “নরসিংদী”।
তবে অন্য একটি সুত্র থেকে জানা যায় যে, সেন রাজারা এই শহরে ভগবান বিষ্ঞুর নরসিংহ অবতার রূপ একটি মূর্তী প্রতিষ্ঠা করেন।পরবর্তীতে এই মূর্তীকে কেন্দ্র করেই এই অঞ্চলের নাম হয় নরসিংদী।
ইতিহাস এবং ঐহিত্য:-
অনেক আগে থেকেই নরসিংদী একটি সুপ্রাচীন সভ্যতায় সমৃদ্ধ জেলা। এই জেলার নামকরণের ইতিহাসেও যেমন প্রাচীন সভ্যতার যোগবেশ রয়েছে তেমনি এই জেলার প্রতিটা পরদে পরদে প্রাচীন সভ্যতার গল্পগাথা রয়েছে। এ জেলার বেলাব উপজেলার ‘ওয়ারী বটেশ্বর’ গ্রামে পরিত্যক্ত ভিটা ও অসমরাজার গড় আবিস্কৃত হয়েছে। যা নব্য প্রস্তর যুগীয় সভ্যতার নিদর্শন। ওয়ারীতে খৃষ্টপূর্বকালের ছাপাঙ্কিত পর্যাপ্ত রৌপ্যমুদ্রা পাওয়া গেছে। এসব মুদ্রা নরসিংদী অঞ্চলের আদি সভ্যতার স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে।
নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার ‘জয়মঙ্গল’নামে পাহাড়ী গ্রামে আবিস্কৃত হয়েছে গুপ্তযুগের স্বর্ণমুদ্রা একই উপজেলার আশ্রাফপুরে আবিস্কৃত হয়েছে সপ্তম শতাব্দীর মহারাজা দেব খড়গের তাম্রলিপি এবং অষ্টধাতুর নির্মিত বৌদ্ধ নিবেদন স্ত্তপ। এই আশ্রাফপুরেই আবিস্কৃত হয়েছে গৌড়ের স্বাধীন নরপতি আলাউদ্দিন হোসেন শাহের পুত্র সুলতান নাসির উদ্দিন নসরৎ শাহের রাজত্বকালে নির্মিত একটি অতি প্রাচীন মসজিদ।
পলাশ উপজেলার পারুলিয়া গ্রামে আনুমানিক ১৭১৬ খ্রিষ্টাব্দে দেওয়ান শরীফ ও তার স্ত্রী জয়নব বিবি নির্মিত মোগল স্থাপত্যরীতির একটি প্রাচীন মসজিদ রয়েছে।
এ অঞ্চলের জনসাধারণের আধ্যাতিক ও নৈতিক জীবনে যাঁদের প্রভাব আলোকবর্তিকা রূপে কাজ করেছে সে সব পীর আউলিয়াদের পবিত্র মাজার শরীফ রয়েছে। নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনের অনতিদুরে পশ্চিমদিকে তরোয়া গ্রামে হযরত কাবুল শাহের মাজার, কুমরাদী গ্রামে হযরত শাহ মনসুরের মাজার, পাটুলী ইউনিয়নের হযরত শাহ ইরানীমাজার, ওয়ারী গ্রামে হযরত সোলায়মানের মাজার এবং পারুলিয়া দেওয়ান সাহেবের মাজার বিশেষভাবে উলেখযোগ্য।
দর্শনীয় স্থান:-
১)ড্রিমল্যান্ড হলিডে পার্ক
২)উয়ারী – বটেশ্বর
৩)শাহ ইরানি মাজার, বেলাব উপজেলার পাটুলি ইউনিয়নে অবস্হিত
৪)ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের বাস্তুভিটা, পাঁচদোনা বাজার সংলগ্ল বুড়ারহাট গ্রামে
৫)নরসিংদীতে ঐতিহ্যবাহী তিন গম্বুজ মসজিদ
৬)সোনাইমুড়ি টেক, ঢাকা–সিলেট মহাসড়কের পাশে জেলার শিবপুর উপজেলায় অবস্হিত
৭)রাজা নরসিংহের নরসিংদী
৮)বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্মৃতি জাদুঘর
বিখ্যাত খাবার:-
এ অঞ্চলে মানুষের হাতে তৈরি তেমন কোন বিখ্যাত বাহ বিশেষ খাবারের নাম জানা যায় নি এই জেলায় উৎপাদিত “কলা” পুরো বাংলাদেশে বিখ্যাত।