লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার ইউনিয়ন দালালবাজার। ওখানেই আছে জমিদারবাড়িটি। প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী সেই জমিদারবাড়িটি দালালবাজার সংলগ্ন লক্ষ্মীপুর মৌজায় অবস্থিত। লক্ষ্মীনারায়ণের উত্তরপুরুষরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক এজেন্ট ছিলেন বিধায় স্থানীয়রা সহজভাবে গ্রহণ করতে পারেনি এবং তাদেরকে দালাল বলে তিরস্কার করত। সেই সুযোগে দাসতুল্য বাঙালিকে বিদ্রপ করে মজা পাওয়া ইংরেজরা তাদেরকে পাকাপোক্তভাবে ‘দালাল’ উপাধি দিয়ে দেয়। সেখান থেকেই হয় দালালবাজার এবং দালালবাড়ি। তবে জমিদাররা অত্যাচারী ছিলেন না; তারা ছিলেন প্রজাবৎসল। অত্যাচারী ছিলেন জমিদারের নায়েবরা। নায়েবরা মূলত স্বার্থসিদ্ধির জন্য জমিদারদেরকে বাড়িতে থাকতেই দিতেন না; চক্রান্ত করে রাতের আঁধারে বাড়িতে ইট-পাথর ছুড়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে কলকাতায় পাঠিয়ে দিতেন।
পাঁচ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত দালালবাড়িটি কিছুদিন আগেও ছিল ভুতুড়ে বাড়ি। শিয়াল-কুকুর, সাপ-জোঁকের আবাসস্থল। বছরখানেক আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ভ্রমণের উপযোগী করা হয়। বাড়িটি বর্তমানে শ্রী শ্রী বিষ্ণুপ্রিয় হরিসভার তত্ত্বাবধানে রয়েছে। পাশেই রয়েছে পুলিশক্যাম্প ও তহসিল অফিস। অভ্যন্তরের রাজগেট, জমিদার প্রাসাদ, অন্দর মহল, কয়েক টন ওজনের লোহার মোটা ভিম, পুরু দেয়াল, বিরাটাকার লোহার সিন্দুক, নৃত্যশালা, শান বাঁধানো পুকুরঘাট ইত্যাদি দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এছাড়া নবীন কিশোরের নামে রয়েছে দালালবাজার এন কে হাইস্কুল ও দাতব্য চিকিৎসালয়। জমিদার ব্রজবল্লভ রায় প্রজাদের পানির চাহিদা পূরণের জন্য ২০ একর জমির ওপর খনন করেছেন বিশালাকার খোয়াসাগর দীঘি। স্থানীয় ভাষায় কুয়াশাকে ‘খোয়া’ বলা হয়। বিশালাকার দৈর্ঘ্য-প্রস্থের ফলে এপাড় থেকে ওপাড় দেখা যেত না; কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে থাকত বিধায় এর নাম হলো খোয়াসাগর দীঘি। এই দীঘি নিয়ে রয়েছে রূপকথার গল্প। এতে নাকি দেও-দানব রয়েছে, আগে দাদী-নানীদের মুখে বেশ শোভা পেত। গল্পটা এই রকম একবার এক নব দম্পতি ওই দীঘিরপাড় দিয়ে যাওয়ার সময় পিপাসা পেয়েছিল এবং পানি পান করতে পায়ের পাতা ভিজিয়ে কিনারে নেমেছিল। বর মশাই ঠিক ঠিক পানি পান করে নিলেন, কিন্তু নববধূ অঞ্জলি ভরে পানি তোলার সময় পানির ভেতর থেকে কিছু একটা আচমকা হাত বাড়িয়ে তার পা ধরে টেনে নিয়ে গেল। সেই যে গেল, বধূ আর ফিরে এলো না। সেই জায়গাটি নাকি এখনো পানিতে ভরে থাকে; কখনো শুকায় না।
যোগাযোগ ব্যবস্থা:-
লক্ষ্মীপুর জেলায় যোগাযোগের প্রধান সড়ক হল ঢাকা-লক্ষ্মীপুর মহাসড়ক এবং চট্টগ্রাম-লক্ষ্মীপুর মহাসড়ক। সব ধরণের যানবাহনে যোগাযোগ করা যায়।