আলতাদীঘি নামের একটি দিঘিকে কেন্দ্র করে নওগাঁ জেলার ধামুরহাট উপজেলায় গড়ে উঠেছে সুবিশাল বনভূমি। এর নাম ‘আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান’। শালবন এবং বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদে পরিপূর্ণ ২৬৪.১২ হেক্টর জমির এই বনভূমির ঠিক মাঝখানেই রয়েছে প্রায় ৪৩ একর আয়তনের সেই বিশাল দিঘী।
আনুমানিক ১৪০০ সালে এ অঞ্চলে রাজা বিশ্বনাথ জগদল রাজত্ব করতেন। আবহমান কাল থেকেই রুক্ষ এই বরেন্দ অঞ্চলে পানির অভাব ছিল এবং রাজা বিশ্বনাথের রাজত্বকালে এই পানির অভাব প্রকট হয়। মাঠ ঘাট শুকিয়ে চৌচির হওয়ায় আবাদি জমিতে ফসল ফলানোও অসম্ভব হয়ে পড়ে। হঠাত্ একদিন রাণী স্বপ্নে দেখলেন, পানি সমস্যা সমাধানে এলাকায় একটি দিঘী খনন করতে হবে। সে অনুযায়ী রাণী রাজাকে বললেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না পা ফেটে রক্ত বের হবে ততক্ষণ তিনি হাঁটতে থাকবেন এবং যেখানে গিয়ে পা ফেটে রক্ত বের হবে ততদূর পর্যন্ত একটি দিঘী খনন করে দিতে হবে। পাইক পেয়াদা, লোক লস্করসহ রাণী হাঁটা শুরু করলেন। অনেক দূর হাঁটার পর রাণী যখন থামছিলেন না, তখন পাইক-পেয়াদারা ভাবলেন এত বড় দিঘী খনন করা রাজার পক্ষে সম্ভব হবে না, সে কারণে তাদের একজন রাণীর পায়ে আলতা ঢেলে দিয়ে চিত্কার করে বললেন, রাণী মা আপনার পা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। একথা শুনে রাণী সেখানেই বসে পড়লেন। রাজা বিশ্বনাথ ওই স্থান পর্যন্ত একটি দিঘী খনন করে দিলেন। এরপর অলৌকিকভাবে মুহূর্তেই বিশুদ্ধ পানিতে ভরে ওঠে দিঘী। রাণীর পায়ে আলতা ঢেলে দেয়ার প্রেক্ষিতে দিঘীটির নামকরণ করা হয় আলতাদিঘী। দিঘীটির দৈর্ঘ্য ১.২০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ০.২০ কিলোমিটার।
আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যানে মেছোবাঘ, গণ্ধগোকুল, অজগর ও বানর পাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, পোকামাকড়সহ নানা প্রজাতির জীববৈচিত্র রয়েছে।বিশেষত শালগাছকে আলিঙ্গণ করে গড়ে ওঠা উঁই পোকার ঢিবিগুলো সবচেয়ে আকর্ষণীয়।
যেভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে সড়কপথে সরাসরি নওগাঁ যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী বা কল্যানপুর থেকে সরাসরি বাসে নওগাঁ আসতে পারেন। এছাড়াও ট্রেনে সান্তাহার জংশনে নেমে সেখান থেকে সহজেই নওগাঁ যাওয়া যায়। এই উদ্যানটি নওগাঁ জেলায় হলেও যাতায়াত জয়পুরহাট দিয়ে সহজ। জয়পুরহাট জেলা সদর থেকে আলতাদিঘির দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার। আর নওগাঁ থেকে দূরত্ব ৫৬ কিলোমিটার। জেলা সদর থেকে প্রথমে যেতে হবে ধামইরহাট। সেখান থেকে অটোরিকশা করে চলে যেতে পারবেন আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যানে।