কদম রসুল দরগাহ

1735

কদম রসুল বলতে বোঝায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ) এর পায়ের ছাপ। মুসলিম অনেকের বিশ্বাস হেঁটে যাওয়ার সময় প্রস্তর খন্ডের উপর পায়ের ছাপ থেকে যেতো হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ) এর। মক্কা থেকে অনেকেই নিয়ে আসতো এ ধরনের পদচিহ্নের প্রস্তর খন্ড। এধরনের প্রস্তর খন্ড ঘিরে পশ্চিমে জেরুজালেম হতে পূর্বে চট্টগ্রাম পর্যন্ত গড়ে উঠেছে সৌধ, যা পরিচিত ‘কদম রসুল’ নামে। নারায়ণগঞ্জের কদমরসুল দরগাহও তেমনি এক সৌধ। শীতলক্ষ্যা পাড় হয়ে বন্দর থানার নদীর কোল ঘেঁষে ৩০ ফুট উঁচু একটি টিলার উপর স্থাপিত।

ইতিহাস মতে, কদম রসুল দরগাহ পাঁচ’শ বছরের পুরানো আধ্যত্মিক এবং অলৌকিক ঘটনাবলির প্রাণকেন্দ্র। প্রচলিত আছে যে, মুহাম্মদ (সাঃ) মিরাজের রাত্রে বোরাকে উঠবার পূর্বে পাথরে তার পায়ের কিছু ছাপ অঙ্কিত হয়। পরবর্তীতে সাহাবিগণ পদ চিহ্নিত পাথরগুলো সংরক্ষণ করেন বলে অনেকে দাবি করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত পাথরটি বর্তমানে জেরুজালেমে সংরক্ষিত আছে। এছাড়া ইস্তাম্বুল, কায়রো এবং দামেস্কে অনুরূপ পাথর সংরক্ষিত আছে।

এই কদম রসুল ধারণার উৎপত্তি মূলত ভারতীয় উপমহাদেশে। নাসিরুদ্দিন হোসেন শাহ গৌড়ে প্রথম কদম রসুল ও সংলগ্ন স্থাপত্য কাঠামো নির্মাণ করলেও এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা দেখা যায় মুঘল আমলে। সমগ্র ভারতবর্ষে কদম রসুলের সংখ্যা ১৪টি। বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে মজমপুর গ্রামে একটি, চট্টগ্রামে দুইটি কদম রসুল আছে।

ঐতিহাসিকদের মতে, ৯৮৬ হিজরি ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আকবরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণাকারী আফগান নেতা মাসুম খান কাবুলি পদচিহ্ন সংবলিত এ পাথরটি একজন আরব বণিকের কাছ থেকে কিনেছিলেন। ঈসা খাঁর সাথে এই রাজার সখ্যতা ছিল। পরে মাসুম খান বন্দরের নবীগঞ্জ এলাকাতে বিশাল জায়গা নিয়ে ৬০ ফুট উঁচু মাটির টিলা তৈরি করে একটি পদচিহ্ন স্থাপন করেন। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদের (সাঃ) কদম মোবারক (পদচিহ্ন) সংবলিত এই কালো পাথরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ইতিহাস খ্যাত এ দরগাহ শরীফ কদম রসূল দরগাহ।

কীভাবে যাবেন:

ঢাকা থেকে গুলিস্তানের বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেট অথবা একটু দক্ষিণে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে উঠার পথে বন্ধন, আনন্দ, উৎসব বাসের টিকেট কাউন্টার রয়েছে যাতে চড়ে ৪০ মিনিটেই সরাসরি চলে আসতে পারবেন নারায়ণগঞ্জ খেয়া ঘাটে (টার্মিনাল)। এখান থেকে অটোয় চড়ে চলে যাবেন নবীগঞ্জের কদম রসূল দরগায়।