সীতাকোট বিহার| ট্র্যাভেল নিউজ বাংলাদেশ

1782

দিনাজপুর জেলা একসময় নামকরা জনপদ পুণ্ড্রবর্ধন এর একটি অংশ ছিল। সেই সময় থেকেই দিনাজপুরের বিভিন্ন স্থানে অনেক স্থাপনা গড়ে উঠে। এতো বছর পর কালের বিবর্তনে এই স্থাপনা গুলো এখন ঐতিহাসিক স্থাপনাতে রুপ নিয়েছে। দিনাজপুরের অন্য সকল স্থাপনের মতো অন্যতম একটি স্থাপনা হল সীতাকোট বিহার। এটি দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার অবস্থিত একটি বৌদ্ধ বিহার।

তথ্য থেকে জানা যায় যে, জনাব আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার উদ্যোগে জেলা পরিষদের অর্থায়নে ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কারিগরি সহায়তায় ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে আবিষ্কৃত হয়েছিলো সীতাকোট বৌদ্ধবিহার। পরবর্তিতে ১৯৭২-১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দেও খনন চালানো হয়েছিলো এই বিহারে।

এই স্থাপত্যটি পরিকল্পনায় প্রায় বর্গাকৃতির (পূর্ব-পশ্চিমে ৬৫.২৩ মিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে ৬৪.১১ মিটার)। বিহারটির উত্তর এবং দক্ষিণ বাহুদ্বয় বহির্দিকে প্রক্ষিপ্ত ছিলো। প্রশস্ত মুখপাতবিশিষ্ট (frontage) তোরণ কমপ্লেক্সটি উত্তর বাহুর মধ্যাংশে অবস্থিত। পূর্ব বাহুর উত্তরাংশে পেছনের দেয়াল ভেদ করে একটি সম্পূরক প্রবেশ পথ ছিলো। বিহারটিতে ৪১টি কক্ষ ছিল, উত্তর বাহুতে ৮টি এবং অন্য তিন বাহুতে ১১ টি করে। কক্ষগুলি ছিল প্রায় সমায়তনের (৩.৬৬ মিটার×৩.৩৫ মিটার)। কক্ষগুলির পেছনের দেয়ালে কুলুঙ্গি ছিলো এবং কক্ষগুলি দেওয়াল দ্বারা বিভক্ত ছিলো। বিভাজক দেয়ালের পুরুত্ব ছিলো ০.৯১ মিটার থেকে ১.২২ মিটার এবং পেছনের দেয়ালের পুরুত্ব ছিলো ২.৫৯ মিটার, কিন্তু সম্মুখের দেয়ালের পুরুত্ব ছিলো ১.০৭ মিটার। বিহারের ভেতরের দিকে ২.৫৯ মিটার প্রশস্ত একটি অভ্যন্তরীণ টানা বারান্দা ছিলো। ১.৬৮ মিটার লম্বা এবং ১.০৭ মিটার প্রশস্ত দরজার মাধ্যমে বিহারের কক্ষগুলি অভ্যন্তরীণ টানা বারান্দার সঙ্গে সংযুক্ত ছিলো। একটি ১.২২ মিটার পুরু এবং ০.৭৬ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট দেয়াল সমগ্র বারান্দাকে অঙ্গিনা থেকে আড়াল করে রাখতো। বিহারের পূর্ব, পশ্চিম এবং দক্ষিণ বাহুর কেন্দ্রীয় কক্ষত্রয় অন্যান্য সাধারণ কক্ষের তুলনায় আয়তনে বড় ছিলো। প্রতিটি কেন্দ্রীয় কক্ষের একটি করে ইটের বেদী ছিলো। সেখানে পূজার মূর্তি রাখা হতো। খুব সম্ভবত দক্ষিণ দিকে কেন্দ্রীয় কক্ষটি ছিলো প্রধান মন্দির। প্রধান মন্দিরটির সম্মুখে স্তম্ভশোভিত প্যাভিলিয়নটি মন্ডপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকবে।

বিহার ভবনের দক্ষিণ দিকে একটু দূরে কিন্তু মূল ভবনের সঙ্গে আবৃত পথ দ্বারা সংযুক্ত সম্মুখভাগে বারান্দাসহ পাঁচটি কক্ষ পাওয়া যায়। পন্ডিতদের অভিমত এগুলি শৌচাগার হিসেবে নির্মিত হয়েছিলো। ছাদ ঢালাইয়ের জন্য চুন, সুরকি এবং ভার বহনের জন্য কড়িকাঠের ব্যবহার দেখা যায়। সীতাকোট বিহার আঙ্গিনার মধ্যবর্তী স্থানে প্রধান মন্দির ছিল না। এখানে পাহাড়পুর, শালবন বিহার এবং আনন্দ বিহারের মতো ঐতিহ্যবাহী পোড়ামাটির ফলক অনুপস্থিত। তবে আকার আয়তনের দিক দিয়ে সীতাকোট বিহারের সঙ্গে বগুড়ায় অবস্থিত ভাসু বিহারের অনেক মিল রয়েছে।

বিহার নির্মাণ সম্পর্কে দুটি নির্মাণকালের কথা বলা হলেও স্তরবিন্যাস পদ্ধতিতে বিহারের কাল নির্ধারণ করা হয়নি। অবশ্য পরে, বিহারটি যে খ্রিষ্টীয় পঞ্চম-ষষ্ঠ শতকে, অর্থাৎ প্রায় দেড় হাজার বছর আগে নির্মিত হয়েছিলো তা প্রমাণ করা গেছে। ব্রোঞ্জনির্মিত একটি বোধিসত্ত্ব পদ্মাপাণি এবং বোধিসত্ত্ব মঞ্জুশ্রী মূর্তি সীতাকোট বিহার থেকে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্ননিদর্শন। মূর্তি দুটির গঠনশৈলী থেকে অনুমান করা যায়, এগুলি ৭ম-৮ম শতাব্দীতে তৈরি। এই বিহারের অধিকাংশ প্রত্নসামগ্রী সংরক্ষিত আছে দিনাজপুর মিউজিয়ামে

যেভাবে যাবেনঃ-

দিনাজপুরের কেন্দ্রিয় বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন পরিবহন বগুড়া উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় সেই বাসে করে বিরামপুর প্রযুন্ত যেতে হবে(বা সীতাকোট বিহার মোড়েও নামা যাবে)। সেখান থেকে ভ্যান বা অটোতে করে সীতাকোট বিহার যেতে হবে।