ঢাকার পুরোনো গির্জাগুলির মধ্যে অন্যতম একটি সেন্ট থমাস চার্চ। শাঁখারি বাজরের পূর্ব পাশে এবং বাহাদুর শাহ পার্কের উত্তর পাশে অবস্থিত এটি। ১৮১৯ সালে ঢাকা জেলের কয়েদীদের শ্রমের বিনিময়ে নির্মিত হয়েছেল এ গির্জা। প্রধান আর্কষণ হল চূড়ায় অবস্থিত বড় আকারের একটি ঘড়ি।
সেন্ট থমাস চার্চে পূর্বাঞ্চলীয় চার্চের ন্যায় একটি বর্গাকার ঘড়ি টাওয়ার আর দেওয়ালে তোরণসদৃশ জানালা রয়েছে। মূল প্রবেশদ্বারের সামনে চারটি স্তম্ভের উপর স্থাপিত একটি ছোট ছাউনি রয়েছে যা গথিক স্থাপত্যে নির্মিত। এর ছাদে ছোট বর্গাকার বেষ্টনী বা প্যারাপেট রয়েছে। আয়তাকার কেন্দ্রীয় কক্ষের পিছনে দুটি স্তম্ভ আছে যেগুলো একটি তোরণের আকারে পুলপিট অংশে মিলেছে। পুলপিট আয়তাকার, এর পিছনের দেওয়ালে ব্রাসনির্মিত ক্রসচিহ্ন আছে। বেদী কাঠের তৈরি আর এর উপরেও একটি ব্রাসের ক্রসচিহ্ন রয়েছে। বেদীটি পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত। ধর্মীয় আলোচনাসভার জন্য কয়েকটি অভিজাত কারুকার্যময় কেদারা আছে। মূল কক্ষের পিছে আছে একটি শিলালিপি। চার্চের দেয়ালে কয়েকজন স্মরণীয় সদস্যের স্মৃতিরক্ষার্থে প্রস্তরফলক রয়েছে। বারান্দার ছাদগুলো ঢালু কড়িকাঠ দিয়ে বানানো। আয়তাকার প্রার্থনাগৃহটি খুবই পরিপাটি এবং এতে ভারবাহী নয় এমন দুটি স্তম্ভ আছে। ছাদে কাঠের ফালি আর মেঝেয় টাইলস লাগানো। ২০০ বছরের পুরনো হলেও সাদা প্লাস্টার করা ভবনটির সুদৃশ্য পাথর আর ইটের কাঠামো এতটুকু বিকারগ্রস্ত হয়নি। এমনকি অধিকাংশ সেগুন কাঠের আসবাব, কাঠের বেদী, অভিষেকপাত্র প্রভৃতি এখনও অক্ষত ও ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় আছে।
নাম না-জানা এক আলোকচিত্রী ঢাকার সেন্ট থমাস চার্চের এই ছবি তুলেছিলেন। ১৯০৪ সালে ফ্রিৎজ ক্যাপও এই গির্জার ছবি তুলেছিলেন। বাহাদুর শাহ পার্কের উত্তরে শাঁখারীবাজারের পূর্ব পাশে জনসন রোডে অবস্থিত এই গির্জা ঢাকার আদি গির্জাগুলোর একটি। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে বেশ কয়েকজন ইংরেজ কর্মচারী-কর্মকর্তা এ অঞ্চলে বসবাস করতে শুরু করেন। তাঁদের প্রার্থনার জন্য গির্জাটি নির্মাণ করা হয়। সন্ত থমাস যিনি ভারতীয় উপমহাদেশে খ্রিষ্টধর্ম প্রচার করেছিলেন। তাঁর নাম অনুসারেই গির্জাটির নামকরণ করা হয় ‘সেন্ট থমাস চার্চ’। ১৮৬৩ সালে গির্জাটির চূড়ায় একটি ঘড়ি স্থাপন করা হয়। বিশ্বখ্যাত ঘড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিগবেন এটি নির্মাণ করেছিল বলে জানা যায়। একসময় পুরান ঢাকাবাসী এ বিশাল ঘড়িতেই সময় দেখত। ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের ঢাকা: স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী বইটিতে বলা হয়েছে, ১৮১৯ সালে ঢাকা জেলের কয়েদিদের শ্রমে নির্মিত হয়েছিল এই গির্জা। ভারত উপমহাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে উনিশ শতকে যে স্থাপত্যের অনুকরণে অ্যাংলিকান গির্জাসমূহ নির্মিত হয়েছিল তার সঙ্গে এই গির্জার তেমন কোনো পার্থক্য নেই। এই গির্জার প্রধান আকর্ষণ এর চূড়ার ঘড়িটি থাকলেও এখন আর সেটি সচল নয়। তবে দুই শ বছর হয়ে গেলেও গির্জার আসবাবগুলো এখনো অটুট ও মজবুত। কেউ পুরান ঢাকায় গেলে গির্জাটি ঘুরে আসতে পারবেন। এর শান্ত পরিবেশ মুগ্ধ করবে যে কাউকে।
কীভাবে যাবেন:
ঢাকা শহরের যে কোন প্রান্ত থেকে পুরান ঢাকার সেন্ট থমাস চার্চে পৌঁছানো যায়। এই জন্য প্রথমে আপনাকে পুরান ঢাকা আসতে হবে। সেখান থেকে রিক্সা কিংবা সি এন জি করে সেন্ট থমাস চার্চে পৌঁছানো যায়।