রোজ গার্ডেন | ট্র্যাভেল নিউজ বাংলাদেশ

1719

রোজ গার্ডেন প্রাসাদ যা সংক্ষেপে রোজ গার্ডেন নামে সমধিক পরিচিত, বিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক প্রাচীন ভবন। এটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের টিকাটুলি এলাকায় অবস্থিত একটি অন্যতম স্থাবর ঐতিহ্য। এ প্রাচীন ভবনটি বাংলাদেশের ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি হিসাবে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সংরক্ষিত। বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৮৯ সালে রোজ গার্ডেনকে সংরক্ষিত ভবন ঘোষণা করে। দেশী-বিদেশী পর্যদেশী-বিদেশী পর্যটকদের নিকট এটি ঢাকার অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান। রোজ গার্ডেন ১৯৭০ থেকে নাটক ও টেলিফিল্ম শুটিং স্পট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে।

রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, ১৯৩১ সালে। এর অবস্থান ঢাকার টিকাটুলীর কে এম দাস লেনে, বলধা গার্ডেনের বেশ কাছেই। ঋষিকেশ দাস ছিলেন খুবই উচ্চভিলাষী। রোজ গার্ডেন প্যালেসে মূলত ঋষিকেশ দাশ জলসার আয়োজন করতেন। যদিও মূল ভবন দেখে এটিকে জমিদারের বাসভবন মনে হওয়াটা খুব স্বাভাবিক।

তবে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, স্থাপত্যটির কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই ঋষিকেশ দাস দেউলিয়া হয়ে যান এবং ১৯৩৬ সালে জমিদার খান বাহাদুর কাজী আব্দুর রশিদের কাছে বিক্রি করে দেন। তাঁর নামানুসারে রোজ গার্ডেনের নামকরণ করা হয় ‘রশিদ মঞ্জিল’।

মূলত গ্রিক স্থাপত্যশৈলী অনুসরণে রোজ গার্ডেন নির্মাণ করা হয়। এর মোট ক্ষেত্রফল প্রায় সাত হাজার বর্গফুট এবং পশ্চিমমুখী ভবনটি প্রায় পঁয়তাল্লিশ ফুট উঁচু। সাধারণ মানের পার্শ্ববর্তী বর্ধিত অংশের ঢালু ছাদ পূর্ব ও পশ্চিমের ত্রিকোণাকৃতির চাঁদোয়ারীর সাথে মিশেছে যা উপনিবেশিক স্থাপত্যরীতির পরিচায়ক। অট্টালিকাটির বাইরের দেয়ালের অধিকাংশই গোলাপি রঙে রঞ্জিত ছিল। তবে কালের বিবর্তনে সেখানকার রং বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে।

রশিদ মঞ্জিলের প্রবেশপথের সামনের চত্বরে ইট ও সিমেন্ট নির্মিত একটি সুন্দর ফোয়ারা রয়েছে। একটি সাত ধাপ বিশিষ্ট সিঁড়ি দিয়ে রশিদ মঞ্জিলের প্রথম তলায় যেতে হয়। এর সামনের দিকের মাঝামাঝি অংশের প্রতি কোঠার পাশাপাশি তিনটি খিলান দরজা আছে। ওপরের তলায় প্রতিটি খিলানের ওপর একটি করে পডিয়াম আছে। টিমপেনামগুলো লতাপাতার নকশা এবংবেলজিয়ামে তৈরী রঙিন কাচ দিয়ে শোভিত। এর সামনে আছে বাইরের দিকে উপবৃত্তাকার ঝুল বারান্দা। এর দুপাশে একটি করে করিনথীয় পিলার আছে।

পিলারগুলোর দুই পাশের অংশে প্রতি তলায় আছে একটি করে দরজা। এদের প্রতিটির কাঠের পাল্লার ভ্যানিশিং ব্লাইন্ড ও টিমপেনামে লতাপাতার নকশা দেখা যায় এবং সামনেই অপ্রশস্ত উন্মুক্ত ঝুল বারান্দা রয়েছে।এর ওপরের অংশে কার্নিস বক্রাকার যা বেলস্ট্রেড নকশা শোভিত। মধ্যবর্তী অংশ ছাদের সামনের ভাগে আছে আট কোণা এবং খিলান সম্বলিত বড় আকারের ছত্রী। এর ছাদ রয়েছে অর্ধগোলাকৃতি একটি গম্বুজে।

ইমারতটির দুই কোণে দুটি করিনথীয় পিলার আছে এদের ওপরে দিকেও ছত্রী নকশা আছে। প্রতি তলায় মোট ১৩টি ছোট ও বড় আকারের কোঠা আছে। প্রথম তলায় প্রবেশের পর পশ্চিমাংশের বাম দিকে আছে ওপরের তলায় যাওয়ার জন্য বৃত্তাকার সিঁড়ি।