অপার প্রাণপ্রকৃতি ভরা আমাদের এই বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে হাজারো সৌন্দর্যের এক একটি স্থাপনা বাহ নিদর্শন। তাদের মধ্যে একটি দিনাজপুর জেলার রামসাগর দিঘি। এটি বাংলাদেশের সবথেকে বড় দিঘি। এই দিঘিকে আলিঙ্গন করে গড়ে উথা অঞ্চলকে জাতীয় উদ্যান হসাবে স্বীকৃতি প্রাওদান করা হয়েছে। প্রতি বছর হাজারো স্থানীয় কিংবা দূর দুরান্ত থেকে দর্শনার্থী আসে এই অঞ্চলের রুপ উপভোগ করতে।
দিনাজপুর জেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামে অবস্থিত রামসাগর দিঘি। এটি দিনাজপুর সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিনে অবস্থিত। ১৯৬০ সালে রামসাগর বাংলাদেশের বন বিভাগের তত্বাবধানে আনা হয়। ১৯৯৫-১৯৯৬ সালে রামসাগর আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয় এবং ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ এপ্রিলে একে জাতীয় উদ্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠাতা করা হয়। এ চারপাশে সবুজ বৃক্ষরাজি ঘেরা রামসাগরকে দূর থেকে অরণ্য ভেবে ভুল করতে পারেন অনেকে। ইট বিছানো উঁচু রাস্তাটিতে উঠে বাঁ দিকে চোখ ফেরাতেই বিস্তীর্ণ জলরাশি চোখের সামনে মূর্ত হয়। অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকতে হয় সাগরের মতো বিশাল দিঘিটির দিকে। স্থির, স্বচ্ছ রূপ নিয়ে মনোহরণ করতে থাকে। মূল দিঘির চারপাশে উঁচু টিলা। টিলাজুড়ে নানা জাতের গাছগাছালি। গাছগুলোতে জমে পাখির আড্ডা। তাদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠছে চারপাশ। রয়েছে (রামসাগর জাতীয় পার্ক) চারিদিক প্রদক্ষিণ করার রাস্তা। নানা ধরনের পুরানো এবং নতুন গাছের সমাহারে সাজানো রয়েছে চারিদিক। রয়েছে পরবর্তীতে কৃত্রিমভাবে বানানো নানা ধরনের পশু পাখির প্রকৃতি। এছাড়া কিছু হরিণও আপনার চোখে পড়বে ।এছাড়ও দিঘিতে ভেসে থাকা অজস্র শাপলা ফুল রামসাগরের সৌন্দর্য্যেকে দিয়েছে নান্দনিকতার ছোঁয়া যা সহজেই আপনার মন কাড়তে সক্ষম হবে। দিঘির উত্তর দিকে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত লাল ইটের একটি প্রাচীন স্থাপনা দেখা যায়। এটি নিয়ে নানা কথা প্রচলিত আছে স্থানীয়দের কাছে। কারও মতে এটি একটি মন্দির আবার কারও মতে এটি একটি বিশ্রামাগার।
রামসাগর উদ্যানের প্রধান আকর্ষন হলো বিশাল রামসাগর দিঘি। রামসাগরের আয়তন ৪.৩৭.৪৯২ মিটার। এবং এর দৈর্ঘ ১.০৩১ মিটার ও প্রস্থ ৩৬৪ মিটার। গভীরতা গড়ে প্রায় ১০ মিটার। দিনাজপুরের বিখ্যাত রাজা রামনাথের (রাজত্বকাল ১৭২২-১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দ) পলাশীর যুদ্ধের আগে (১৭৫০-১৭৫৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে) এই রামসাগর দিঘি খনন করেছিলো। তারই নামানুসারে এর নামকরন করা হয় রামসাগর। দিঘিটি খনন করতে ততকালীন প্রায় ৩০ হাজার টাকায় ১৫ লক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়েছিলো।
এই জাতীয় উদ্যানে রয়েছে ৭টি পিকনিক কর্নার। সেখানে আছে ২টি টয়লেট, ১টি ক্যাফেটেরিয়া, আছে শিশুপার্ক। এছাড়া সেখানে আছে কিছু হরিণ। এই উদ্যানে প্রবেশের জন্য রয়েছে টিকিটের ব্যবস্থা। এছাড়াও আছে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২০১০ খ্রিস্টাব্দের ১০ অক্টোবর (১০-১০-‘১০) গড়ে তোলা রামসাগর গ্রন্থাগার নামে ৮ শতাধিক বইয়ের সংগ্রহ নিয়ে একটি অনুমোদনহীন পাঠাগার।
প্রকৃতির নীলাভূমি জাতীয় উদ্যান দিনাজপুরের রামসাগর দীঘি এখন পরিজায়ী অতিথি পাখির আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে। প্রতি বছর শীত মৌসুমে সুদূর সাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এই পাখি আসে। আবার শীত শেষ হতে না হতেই উধাও হয়ে যায়। এ সব পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে এখন দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী রামসাগর দীঘি। তবে দুই বিভাগের দ্বৈত শাসনে এই জাতীয় উদ্যান রামসাগর দীঘির বৈরী পরিবেশে পরিজায়ী অতিথি পাখি বিতাড়িত হওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। এ জন্য রামসাগর দীঘিতে পরিজায়ী অতিথি পাখির অভায়াশ্রম তৈরির দাবি তুলেছেন দিনাজপুরের পাখিপ্রেমীরা।
কিভাবে যাবেনঃ-
দিনাজপুর সদর উপজেলার তাজপুর গ্রামে অবস্থিত এই রামসাগর জাতীয় উদ্যান। দিনাজপুর পার্বতীপুর রেলস্টেশন থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত এই রামসাগর।