বাংলাদেশে খুব কম লেক রয়েছে যেগুলোকে নামকরা পর্যটন স্পট হিসেবে বলা যায়। সারাদেশে পর্যটকদের তীর্থস্থান বলা যায় এমন লেকের সংখ্যা খুবই কম। প্রায় ১১৬৫ ফুট উঁচুতে অবস্থিত রাইখং লেককে বলা চলে তেমনই একটি তীর্থস্থান। স্থানীয়রা অনেকে লেকটির নাম রাইচং বলে উচ্চারিত করে। তবে লেকটির নামের উচ্চারণ যাই হোক না কেন এতে করে লেকের সৌন্দর্য কোন অংশেই কমবে না।
রাঙ্গামাটিতে অবস্থিত হলেও ভৌগলিক অবস্থানের কারনে এই লেকে আপনাকে বান্দরবানের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। রাঙ্গামাটি জেলার শেষপ্রান্তে অবস্থিত এই লেকে রাঙ্গামাটি দিয়ে পৌছাতে হলে আপনাকে জলপথ পাড়ি দিতে হবে তাই বান্দরবান দিয়ে যাওয়াই হবে সবচেয়ে সহজ। তবে আপনি যেভাবেই যান না কেন সাথে করে অবশ্যই একজন গাইড রাখবেন।
লেকের পূর্বতীরে এবং পশ্চিমতীরে দুটি গ্রাম দেখতে পাবেন যেগুলো পুকুরপাড়া নামে পরিচিত। হয়তোবা চারপাশে লেকের উপস্থিতির কারনেই গ্রামের এমন নামকরণ। দুটি গ্রামের অধিবাসীরাই ত্রিপুরা গোত্রের এবং তাঁরা খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারী। লেকের পশ্চিম তীরের গ্রামবাসীদের পাহাড় বেয়ে উঠা নামা করে এই লেকে আসতে হয় তবে খুব কাছে সমতল ভুমিতে অবস্থিত হওয়ায় পূর্বপ্রান্তের গ্রামবাসীরা সহজেই লেকে আসতে পারেন।
বিশাল রাইখং লেক থেকে মাছ ধরতে নিষেধ না থাকায় স্থানীয়রা এখান থেকে মাছ ধরে থাকে। লেকের বিভিন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে তেলাপিয়া মাছ সবচেয়ে বেশি ধরা পড়ে। লেকের পূর্ব প্রান্তে লেকের পানি থেকে সৃষ্ট একটি ছোট ঝিরি রয়েছে। সম্ভবত লেকের পানির স্তর নিয়ন্ত্রনে রাখতে ঝিরিটি সৃষ্টি হয়। বর্ষাকালে লেক থেকে প্রচুর পানি এই ঝিরিটি দিয়ে রাইখং খালে যেয়ে পড়ে।
লেকের চারপাশে অনেক পাহাড় থাকাতে এবং আকাশের রহস্যময় আচরণের কারনে লেকের পানি বিভিন্ন বর্ণ ধারন করে। প্রায় অর্ধেক লেকের পানি মানুষ ব্যবহার করে না কারন লেকের সেই অংশে মানুষ যাতায়াত করে না। একারনে লেকের ঐ অংশ আপনার কাছে চারপাশের তুলনায় অনেক সুন্দর মনে হবে। পুকুরপাড়া সেনাক্যাম্পে একটি হেলিপ্যাড রয়েছে। এখানকার উঁচু স্থান থেকে আপনি পাখির চোখে ছবির মত সুন্দর এই লেকটিকে দেখতে পাবেন।
কিভাবে যাওয়া যায়:
যাতায়াত ব্যবস্থাঃ-ঢাকা থেকে শ্যামলী, মডার্ণ ও এস.আলম বাসে করে কাপ্তাই এসে কাপ্তাই জেটিঘাটস্থ লঞ্চঘাট থেকে ইঞ্জিনবোটে করে বিলাইছড়ি আসবেন। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে ৩/৪ ঘন্টার মধ্যে বিলাইছড়ি আসা যায়। কেউ চট্টগ্রাম থেকে বিলাইছড়ি আসলে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে প্রথমত কাপ্তাই জেটিঘাটে আসবেন। প্রতিদিন সাড়ে ৭ টায় রাঙ্গামাটির তবলছড়ি ঘাট থেকে ইঞ্চিনবোট যাত্রী নিয়ে সকাল ১০ টার মধ্যে বিলাইছড়ি পৌছেঁ। ওই বোটটি আবার বিলাইছড়ি থেকে দুপুর ২ টার মধ্যে রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে ছাড়ে। এটি বিলাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত হলেও বিলাইছড়ি-ফারুয়া হয়ে এখানে যোগাযোগ করা অত্যন্ত কষ্টকর। কেউ চাইলেও পায়ে হাঁটা ছাড়া বিকল্প নেই। বিলাইছড়ি থেকে বড়থলি যেতে প্রায় ৭ দিন সময় লাগে। তাই এখানকার লোকজন বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলা দিয়ে এখানে আসা-যাওয়া করে।