হযরত মখদুম শাহদৌলা (রহঃ) এর মাজার

1351

সিরাজগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজরীত সিরাজগজ্ঞ জেলাটিরর তাঁতশিল্প, নদীরক্ষা বাধ, বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর অববাহিকা, বিভিন্ন ব্রীজ, পুরান কালে নির্মিত অনেক মসজিদ, ইকো পার্ক, বিভিন্ন খ্যাতিনামা ব্যক্তিদের বসতবাড়ি জেলাটিকে এসে দিয়েছে এক অনন্য পর্যটনসমৃদ্ধ জেলার খ্যাতি। এই জেলাটির পর্যটন আকর্ষনের ভান্ডারে মধ্যে হযরত মখদুম শাহদৌলা (রহঃ) এর মাজার ও মসজিদ অন্যতম।

বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যে বিখ্যাত কোন ব্যাক্তির মাজার ব্যাপারটি অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। প্রাচীনকাল থেকেই এই দেশের মানুষের মাজার কিংবা দরগা জাতীয় ধর্মস্থান গুলোর উপর বিশ্ব্যাস প্রবল। সিরাজগঞ্জ জেলার তেমনি বিখ্যাত একটি স্থান হযরত মখদুম শাহদৌলা (রহঃ) এর মাজার ও মসজিদ। মূলত সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার অন্তর্গত একটি প্রাচীন মসজিদ। এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।

দীর্ঘ ইতিহাস থেকে জানা যায়, হযরত মখদুম শাহদৌলা (রহঃ) বিভিন্ন অবিচার অনাচার দুর করে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে বাগদাদ শরীফ থেকে এ দেশে আসেন ৬৮৫ হিজরী সনে। হযরত মিরান শাহ্ তাঁর অনুচর সহ কাঞ্চনপুরে আস্তানা গাড়েন। হযরত আবদূল কুদ্দুস (রহঃ) নোয়াখালী জেলায় রামগঞ্জে অবস্থিত শ্যামপুরে আস্তানা গাড়েন। দু’বছর অধিক কাল শ্যামপুর এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলে দ্বীন ইসলাম প্রচার করেন। পরে তিনি তাঁর মুরীদ হযরত সৈয়দ জকিম উদ্দীন হোসেনী (রহঃ) কে শ্যামপুর মোকামের খলিফা নিযুক্ত করেন।  শাহ মখদুম এদেশে এসে বাঘা নামক স্থানে উপস্থিত হয়ে পদ্মা নদীর নিকটস্থ যে কেল্লা স্থাপিত করেছিলেন উহাই মখদুম নগর নামে খ্যাত। মখদুম নগর রাজশাহী জেলার চারঘাট থানার অন্তর্গত। বর্তমানে এটি বাঘা শরীফ বা কসবে বাঘা নামে পরিচিত।গৌড় নগরের বাদশা হোসেন শাহের পুত্র নছবত শাহ দেশ পর্যটনকালে বিখ্যাত মখদুম নগরে উঠে সমস্ত শুনে ৯৩০ হিজরীতে একটি দীঘি খনন ও কারুকার্য খচিত প্রকান্ড মসজিদ নির্মান করে দেন। তৎপর দিল্লীর বাদশা জাহাঙ্গীরের পুত্র শাহজাহানের পরিভ্রণকালে তিনি বিখ্যাত মখদুম নগর পরিদর্শন করেন এবং পরবর্তীকালে তাঁর ভ্রমন রোয়েদাদ অনুসারে ঐ মসজিদ আদির কীর্তি রক্ষার্থে ও ধর্ম কার্যের জন্য ৪২টি মৌজা দান করেন এবং ঐ সবের তদবীর তদারক ও দেখাশুনার জন্য ঐ নগরে কিছু লোক লস্কর রেখে আল্লাবকস বরখোরদারকে লস্কর প্রধান নিযুক্ত করেন। শাহ মখদুম (রহঃ) এর আগমনের সময় রাজশাহী শহরের নাম ছিল ‘মহাকালগড়’। তবে পরে এ নাম রামপুর বোয়ালিয়াতে রূপান্তরিত হয়। তিনি ১৭ বা ১৮ হিজরিতে মারা যান। মূলত তার ম্যূতুর পরেই এই স্থান টি মাজার হিসাবে গড়ে উঠে। তাঁর নামানুসারেই এ অঞ্চলকে ইউসুফ শাহ পরগনার অধীনে নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে (১৫০০–১৫৭৬) খৃষ্টাব্দে বাংলার মুসলিম সুলতানি আমলে এই মসজিদের নিদর্শন কাজ শুরু হয়। তৎকালীন মুসলিম স্থাপত্য শৈলীর অন্যতম কারুকার্য ব্যবহার করা হয় এর নির্মাণে। ১৫ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের উত্তর দক্ষিণ দৈর্ঘ্য ১৩.১৯ মিটার পূর্ব পশ্চিম প্রস্থ ১২.৬০ মিটার এবং ছাদের উপরিভাগের গম্বুজের ব্যাস ৩.০৮ মিটার। গম্বুজের প্রতিটি মাথায় পিতলের কারুকার্য মন্ডিত।

শাহজাদপুর দরগাহে প্রতি বছর চৈত্র মাসে (মধ্য-এপ্রিল) এক মাসব্যাপী মেলা হয়। মেলার সময় এখানে সকল সম্প্রদায়ের লোকের সমাগম হয়। দরগায় উৎসর্গীকৃত সামগ্রীর মধ্যে চাল, চিনি, মিষ্টি, মোরগ এবং চেরাগ (এক ধরণের ব্রতমূলক বাতি) প্রধান।

যেভাবে যাবেনঃ-

ঢাকা থেকে সরাসরি বাস কিংবা ট্রেইনে চেপে সরাসরি সিরাজগঞ্জ শহরে পৌঁছানো যায়। ঢাকার গাবতলি,সায়দাবাদ,মহাখালি বাস টার্মিনাল গুলো থেকে বাস পাওয়া যায়।কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেইন যাত্রা শুরু হয়। সিরাজগঞ্জ শহর থেকে শাহজাদপুর উপজেলায় বাস যোগে পৌছাতে হয়। শাহজাদপুর শহর থেকে রিক্সা করে হযরত মখদুম শাহদৌলা (রহঃ) এর মাজার পৌঁছানো যায়।