ঐতিহ্যবাহী মোহাম্মদ আলী চৌধুরী মসজিদ।

1507

ফেনীর ঐতিহ্যবাহী মোহাম্মদ আলী চৌধুরী মসজিদ। ফেনী জেলার সদর ইউনিয়নের শর্শদীতে অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ ও বাংলাদেশের একটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি। মোগল আমলে এই মসজিদটি ফেনী অঞ্চলের শর্শদীতে নির্মাণ করেন স্থানীয় একজন মোগল কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী চৌধুরী।মোগল নায়েব মোহাম্মদ আলী চৌধুরী ১৭৬২ সালে ফেনীর এ অঞ্চলে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তার সময়কালে তিনি এ এলাকায় অনেক স্থাপনা নির্মাণ করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ফেনীর এই মসজিদটি। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৭৯০ সালে তিনি এ অঞ্চলের জমিদারি হারান।

মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর অনন্য সৃষ্টি মোহাম্মদ আলী চৌধুরী জামে মসজিদ। মসজিদটি ফেনী জেলার সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহী জামে মসজিদ। এটি ১১০০ হিজরিতে নির্মিত। সেই হিসেবে মসজিদটির বর্তমান বয়স ৩৩৮ বছর। মূল মসজিদটির দৈর্ঘ ৩৬ ফুট, প্রস্থ ২০ ফুট এবং কার্ণিশ বরাবর উচ্চতা ১৬ ফুট। মসজিদটিতে ৩টি দরজা ও ২টি জানালা বিদ্যমান। প্রধান দরজাটি বাম ও ডানের দরজা দু’টি হতে একটু বড়। প্রধান দরজার উপরে কষ্টি পাথরের উপরে আরবি হরফে লেখা একটি ফলক রয়েছে। মসজিদের কার্ণিশ বরাবর ফুলের পাপড়ি সদৃশ নকশা বিদ্যমান।

আবার কার্ণিশ হতে উপরের চতুর্দিকে সরু আকৃতির মোট ৮টি মিনার রয়েছে। মিনারের উপরে ছোট ছোট বল আকৃতির দু’টি ও একটি ফুলের কলি সদৃশ্য নকশা বিদ্যমান। প্রায় ৪ ফুট পুরু মসজিদের মূল আকর্ষণ এর ৩টি গম্বুজ। মাঝের গম্বুজটি ডান-বাম দিকের গম্বুজের চেয়ে একটু বড়। গম্বুজগুলো বহিঃভাগের কেন্দ্র বরাবর ফুলের পাপড়ি, বল এবং ফুলের কলি সদৃশ্য নকশা রয়েছে। আবার অভ্যন্তরের দেয়ালে সুন্দর সুন্দর নকশা ও উলটো ইউ আকৃতির পশ্চিমে ৮টি, পূর্বে ৬টি, উত্তরে ২টি এবং দক্ষিণে ২টি। তথা সর্বোমোট ১৮টি নকশা বিদ্যমান। অবশ্য মসজিদের পূর্ব দিকে বহিঃদেয়ালেও অনুরূপ ৩টি নকশা রয়েছে। গম্বুজ গুলোর ভিতরে কার্ণিশ বরাবর ফুলের পাপড়ি সদৃশ্য নকশা বিদ্যমান। মসজিদের বহিঃভাগ খয়রি ও অভ্যন্তর ভাগ সাদা রং করা বলে অনেক বেশি দৃষ্টিনন্দন। মসজিদের পূর্বে আযান দেয়ার স্থান এবং উত্তর-দক্ষিণে সুন্দর গোল আকৃতির ২টি কক্ষ রয়েছে। কক্ষগুলো ইমাম এবং মুয়াজ্জিনের জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। অবশ্য কক্ষগুলো পরিত্যক্ত রয়েছে। মূল মসজিদে স্থান সংকুলান হয় না বলে ৮র্০ী৬র্০ আয়তনের সম্প্রসারিত আরেকটি ভবন সংযুক্ত করা হয়েছে। সম্প্রসারিত ভবনটি দ্বিতলা। এতে ৮টি স্তম্ভ, ৪০টি জানালা, ২টি বড় জানালা, ২টি বড় দরজা, ৮টি ছোট দরজা এবং বহিঃভাগে একটি সুদৃশ্য গম্বুজ রয়েছে। সাদা রংয়ের সম্প্রসারিত মসজিদের ভবন ও গম্বুজটি খুবই সুন্দর।

কিভাবে যাবেন:-

ফেনী জেলায় সাধারনত সড়ক পথেই ভ্রমণ করা হয়ে থাকে। ঢাকার সায়েদাবাদ জনপথের মোড় থেকে প্রতিদিন প্রতিদিন সকাল ৬ টা থেকে ১ ঘন্টা পর পর ফেনীর উদ্দ্যেশে বাস ছেড়ে যায়। এদের মধ্যে ড্রীম লাইন, সেবা চেয়ার কোচ, স্টার লাইন অন্যতম। এ ছাড়াও চট্টগ্রাম গামী লোকাল বাস গুলোতে ফেনী যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে ফেনীর ভাড়া নিতে পারে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।