কুদুম গুহা

1767

টেকনাফের গেম রিজার্ভ বাংলাদেশের একমাত্র গেম রিজার্ভ বন। গেম রিজার্ভের অভ্যন্তরে রইক্ষ্যং এলাকায় কুদুমগুহার অবস্থান। টেকনাফে কয়েকটি প্রধান আকর্ষণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কুদুম গুহা। কক্সবাজার জেলার  অন্তর্গত টেকনাফ উপজেলার একটি প্রাকৃতিক গুহা। এই উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বাজার থেকে ৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে এই গুহা অবস্থিত। এটি মূলত বালু-মাটির তৈরি একটি প্রাকৃতিক গুহা।

এই গুহার প্রবেশমুখ প্রায় ১২ ফুট উঁচু। গুহার দেয়ালের গা বেয়ে চুইয়ে চুইয়ে অনবরত পানি ঝরে। এই কারণে সারা বছরই এর প্রবেশমুখ থেকে মধ্যভাগ পর্যন্ত পানি থাকে। প্রবেশ পথে প্রায় হাঁটু পানি থাকে। এর ভিতরে প্রবেশ করলে পানির গভীরতা বাড়ে। শুকনো মৌশুমে এর ভিতরে কোমর পানি থাকে। তবে বর্ষার সময় প্রায় গলা পানি হয়।

কুদুম গুহায় প্রচুর বাদুর বাস করে, তাই এটি ব্যাট কেভ বা বাদুর গুহা নামেও পরিচিত। কুদুম গুহায় দুই প্রজাতির বাদুর থাকে। শুধু তাই নয়, বাদুর ছাড়াও এই গুহায় বাস করে চার প্রজাতির শামুক, গুহার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝিরিতে থাকে অনেক প্রজাতির মাছ আর আছে তিন প্রজাতির মাকড়শা। গুহার বাইরে থেকে পাখিদের এসে গুহার শামুক খেতে দেখা গেছে। আনুমানিক ৫০০ ফুট দীর্ঘ এই গুহায় প্রবেশ করতে হলে হাঁটু পর্যন্ত জল-কাদা মাড়িয়ে যেতে হবে। সহ্য করতে হবে ভ্যাপসা গন্ধ, গা ছমছম করা আঁধারে চামচিকার কিচিরমিচির ডাকে ভয় না পেয়ে এগিয়ে যেতে হবে। যখন তখন এই বাদুর আর চামচিকা আপনার শরীরে ঝাঁপিয়ে পড়বে, তাই সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হবে আপনাকে।

গুহার স্বচ্ছ মিষ্টি পানিতে রয়েছে বড় বড় টাকি জাতীয় মাছ, কৈ, কাকিলা, তিনচোখা, ডানকিনে, কালো রঙের চিংড়ি, নানা রকমের ব্যাঙ, গুগলি আর শামুক। গুহার শুকনো অংশে রয়েছে নানা ধরনে মাকড়শা, উড়চুঙ্গা, গুবরেপোকা আর প্রচুর পিঁপড়া। স্থানীয় লোকদের মতে এখানে কিছু ছোট অজগর আছে। এই বিচারে গুহাটিকে একটি বিরল প্রজাতির প্রাণীর ছোটোখাটো চিড়িয়াখানা বলা যেতে পারে। অবশ্য এর কোনোটিই মানুষের জন্য ক্ষতিকারক নয়।

কীভাবে যাবেন:

ঢাকা থেকে সরাসরি টেকনাফের বাসে এসে নামতে হবে হোয়াইখিয়ং বাজার। সেখান থেকে গেম রিজার্ভের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণের জন্য জিপ ভাড়া পাওয়া যাবে, তাই কুদুম গুহা যেতে কষ্ট হবে না। হোয়াইখিয়ং বাজার থেকে শাপলাপুর অভিমুখে ৪ কিলোমিটার যাবার পর বাম দিকে পাহাড়ি ঝিরিপথ ধরে আরও ২ কিলোমিটার অগ্রসর হলে রোমাঞ্চকর এই গুহায় পৌঁছনো যাবে৷ ভেতরে যাবার আগে অবশ্যই দায়িত্বপ্রাপ্ত বন বিভাগের কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে অনুমতি নিয়ে নিতে হবে।