হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ হাওর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে অপূর্ব লীলাভূমি হাওরটি বছরের বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে অপরূপ দৃশ্যের। দেশের বৃহত্তম এই হাওর অন্যতম বৃহৎ মিঠা পানিরও জলাভূমি। পূর্বে পাথারিয়া ও মাধব পাহাড় এবং পশ্চিমে ভাটেরা পাহাড় পরিবেষ্টিত হাকালুকি হাওর মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার পাঁচটি উপজেলায় বিস্তৃত। ছোট-বড় ২৪০ টি বিল ও ছোট-বড় ১০ টি নদী নিয়ে গঠিত হাকালুকি হাওর বর্ষাকালে প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর এলাকায় পরিণত হয়। এই হাওরে বাংলাদেশের মোট জলজ উদ্ভিদের অর্ধেকের বেশি এবং সঙ্কটাপন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি পাওয়া যায়।
বর্ষা এবং শীত উভয় ঋতুই সিলেটে ঘুরে বেড়ানোর জন্য উপযোগী। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে অপূর্ব লীলাভূমি হাওরটি বছরের বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে অপরূপ দৃশ্যের। হাকালুকি হাওরের স্থায়ী জলাশয়গুলোতে বিভিন্ন জাতের উদ্ভিদ জন্মে। এক সময়ের অন্যতম আকর্ষণীয়, ভাসমান বড় বড় গাছপালা (swamp forest) এখন আর নেই। চাতলা বিল-এ ছোট আকারের এরকম একটি বন আছে (২০০০ খ্রিস্টাব্দ)। হাকালুকি হাওরে ৫২৬ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪১৭ প্রজাতির পাখি, এর মধ্যে ১১২ প্রজাতির অতিথি পাখি ও ৩০৫ প্রজাতির দেশীয় পাখি। এছাড়া ১৪১ প্রজাতির অনান্য বন্যপ্রাণী, ১০৭ প্রজাতির মাছ, তন্মধ্যে ৩২ প্রজাতি বিভিন্ন পর্যায়ে বিপন্নপ্রায়। এছাড়াও রয়েছে নানা ধরনের কীট-পতঙ্গ, জলজ ও স্থলজ ক্ষুদ্র অনুজীব। ইকো-ট্যুরিজমের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় হাকালুকি হাওরসহ সাতটি প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা। উপরোক্ত প্রাকৃতিক উপাদান ছাড়াও রয়েছে স্থানীয় পেশাজীবি মানুষের ইতিহাস, সামাজিক আচার, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ। ১৫০ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ, ১২০প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ, বিলুপ্ত প্রায় ২০ প্রজাতির সরীসৃপ। এখানে প্রতি বছরশীতকালে প্রায় ২০০ বিরল প্রজাতির অতিথি পাখির সমাগম ঘটে। হাকালুকি হাওর টেকসই উন্নয়ন, জীববৈচিত্র সংরক্ষণ, ইকোটুরিজ্যম শিল্প বিকাশের এক অসাধারণ আধার।
হাকালুকি হাওরের বিশাল প্রান্তরে শুষ্ক মৌসুমে অবাধে বিচরণ করে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা গরু-মহিষ, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি। হাওর উপকূলবর্তি এলাকার লোকজন, ফসল উঠে গেলে বছরের শুষ্ক মৌসুমের নির্দিষ্ট কয়েক মাস তাদের গৃহপালিত গবাদি পশু পাঠিয়ে দেন হাওরে বসবাসরত একশ্রেণীর মানুষের কাছে, যারা এগুলোর তত্ত্বাবধান করে। এই কাজের বিনিময়ে এরা দুধ পায়। মেয়াদ শেষে প্রকৃত মালিক এসে গরু-বাছুর ফেরত নেয়। এই পুরো ব্যবস্থাকে হাওর এলাকায় “বাথান” বলা হয়। বাথানের মালিকেরা এসকল গবাদি পশুর দুধ বিক্রী করে প্রচুর উপার্জন করে থাকেন। একারণে হাকালুকি হাওর এলাকা স্থানীয়ভাবে দুধ ও দৈ-এর জন্য বিখ্যাত।
কিভাবে যাওয়া যায়:-
সিলেট বাসস্টেশন হতে বাস/মাইক্রোবাস/প্রাইভেট কার/অটোরিক্সায় করে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সদর যাওয়া যায়। সময় ৪০মিনিট থেকে ১ ঘন্টা লাগবে। বাস ভাড়া ২০টাকা/অটোরিক্সায় ৩৫টাকা লাগবে। ফেঞ্চুগঞ্জ সদর থেকে অটোরিক্সায় করে ঘিলাছড়া জিরোপয়েন্ট যাওয়া যাবে। সদর থেকে দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। সিলেট থেকে সরাসরি মাইক্রোবাস/প্রাইভেট কার ভাড়া মূলত সময়ের উপর নির্ভর করে ২০০০টাকা থেকে ৫০০০টাকা হতে পারে।