বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের প্রশাসনিক অঞ্চল সিরাজগজ্ঞ জেলাতে অনেক গুলো দর্শনীয় স্থান রয়েছে। তার মধ্যে জয়সাগর দিঘি অন্যতম। পর্যটন আকর্ষণের দিক থেকে এই দিঘিটি সিরাজগজ্ঞ জেলার মানুষের নিকট এক অন্যতম পছনের স্থান। প্রতি দিন শত শত মানুষ এই দিঘিটির রুপ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দিঘিটির পারে উপস্থিত হয়। তাছাড়া সিরাজগজ্ঞ জেলাতে তাঁতশিল্প, নদীরক্ষা বাধ, বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর অববাহিকা, বিভিন্ন ব্রীজ, পুরান কালে নির্মিত অনেক মসজিদ, ইকো পার্ক, বিভিন্ন খ্যাতিনামা ব্যক্তিদের বসতবাড়ি সহ আরও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে।
এই”জয়সাগর দিঘিটির” ইতিহাস পর্যালোচনা করে অনেক তথ্য জানা যায়। তবে সেসব তথ্যের মধ্যে কিছু কিছু ঘটনা লোক মুখে খুবই প্রচলিত। স্থানীয় তত্থ্য মতে, বিরাট রাজার আমলে প্রজাদের জনকষ্ট নিবারণের নিমিত্তে এবং রাজার কয়েক লক্ষ গরু ও পানীয় জলের জন্য এই দীঘি খনন করা হয়। ঐতিহাসিকদের মতে পাল সাম্রাজ্যে দ্বিতীয় গোপাল ( ৯৪০-৯৬০ খ্রীঃ) রাজ্য শাসন করেন। এই দীঘিটি ওই সময় খনন করা হয়েছে বলে জানা যায়। ফিরোজ শাহর পুত্র বাহাদুর শাহ রাজা অচ্যুত সেনের কন্যা ভদ্রাবতীকে দেখে মুগ্ধ হন। বিয়ে প্রস্তাব দিলে রাজা অচ্যুত সেন প্রস্তাবে সম্মত না হওয়ায় বাহাদুর শাহ ভদ্রাবতীকে অপহরণ করে নিমগাছিতে নিয়ে যান। পরবর্তীতে রাজা অচ্যুত সেন তাঁর সৈন্যবাহিনীসহ বাহাদুর শাহকে আক্রমণ করেন। নিমগাছি প্রান্তরে ব্যাপক যুদ্ধ হয়। মুষ্টিমেয় থাকায় বাহাদুর শাহ যুদ্ধেপরাজয়বরণ করেন (১৫৩২-৩৪ খ্রি.) । রাজা অচ্যুত সেন যুদ্ধে জয়লাভ করে ভদ্রাবতীকে উদ্ধার করেন। আর এ বিজয়ের স্মৃতি হিসেবে নিমগাছির কাছে রাজা অচ্যুত সেন ‘জয়সাগার’ নামে দিঘিটি খনন করান। যুদ্ধজয়ের কারণেই জয়সাগর নামে দীঘিটির নাম করন করা হয়।
আবার কেউ বলেন রাজার কোনো পুত্রসন্তান ছিল না। একদিন জনৈক সাধু জয় রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেন, তিনি যদি আধামাইল দৈর্ঘ্যরে একট দিঘি খনন করেন, তাহলে তাঁর বৃদ্ধ বয়সেও একটি পুত্রসন্তান জন্মাবে। সাধুর উপদেশমতো দিঘি খনন করেন । পরের বছর রাজার একটি সন্তান জন্মালো। পুত্রের নাম রাখলেন জয়কুমার এবং তার নামানুসারে দিঘিটির নাম রাখলেন জয়সাগর।কিন্তু দীঘি খনন করলে কি হবে ১২ বছর পার হওয়ার পরও দিঘিতে পানি না আসায় রাজা হতাশ হয়ে পড়েন। একরাতে রাজা স্বপ্নে দেখলেন, এক সাধু রাজাকে বলছে তোমার পুত্র জয়কুমার বিয়ে করে বাড়ি ফেরার পথে দিঘিতে নেমে যদি একমুঠো মাটি তুলে তবেই দিঘিতে পানি উঠবে, অন্যথায় শতবর্ষ ধরে দীঘি খনন করলেও পানির দেখা মিলবে না।রাজা পুত্রের বিবাহের আয়োজন করলেন। বিবাহ শেষে জয়কুমার স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে দিঘিতে নেমে যেই এক মুঠো মাটি তুললেন, অমনি হু-হু শব্দে পানি উঠে দিঘি পূর্ণ হয়ে গেল। তবে এটা ঠিক যে এ এই দীঘির পানিতে রাজার ছেলে জয়কুমার মৃত্যুবরণ করলেন।
রায়গঞ্জ উপজেলার সোনাখাড়া ইউনিয়নের নিমগাছি ও গোতিথা দুই মৌজার মাঝে জয়সাগর দীঘিটি অবস্থিত। নিমগাছি বাজার থেকে দীঘির দুরত্ব পশ্চিম দিকে প্রায় আধা কিলোমিটার। আয়তন প্রায় ৫৮ একর। এ দিঘি সংলগ্ন আরও কয়েকটি দিঘী রয়েছে।
যেভাবে যাবেনঃ-
ঢাকা থেকে সরাসরি বাস কিংবা ট্রেইনে চেপে সরাসরি সিরাজগঞ্জ শহরে পৌঁছানো যায়। ঢাকার গাবতলি,সায়দাবাদ,মহাখালি বাস টার্মিনাল গুলো থেকে বাস পাওয়া যায়।কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেইন যাত্রা শুরু হয়। সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার ভূইঁয়াগাঁতী নামক বাসস্ট্যান্ড নামতে হয়। ভূইঁয়াগাঁতী বাসস্ট্যান্ড হতে সিএনজি/রিক্সা/ভ্যানগাড়ী যোগে নিমগাছী বাজার হয়ে নিমগাছি বাজার থেকে প্রায় ৫০০মিটার দূরত্ব পশ্চিম দিকে জয়সাগর দীঘি।