পর্যটন গতদিক থেকে রাজশাহী বিভাগের প্রতিটি জেলা তার আপন মহিমায় অনুন্নত। রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোর কোনটিতে রয়েছে মৌর্য,সেন,পাল, মোঘল বংশের রাজাদের রাজত্বের স্মৃতিবিজড়িত স্থান আবার কোনটিতে বাংলার ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক ও স্থাপত্যের নিদর্শন। রাজশাহী বিভাগের পাবনা জেলার জোড়বাংলার মন্দির তেমনি একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্যের নিদর্শন।
স্থানীয়দের অভিমত, মুর্শিদাবাদের নবাবের তহশিলদার ব্রজমোহন ক্রোড়ী আঠারো শতকের মাঝামাঝি কোন এক সময়ে মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। প্রায় ২৬৬ বছরের পুরনো মন্দিরটির দোচালা স্থাপত্যরীতিতে পাশাপাশি ২টি চালা নিয়ে জোড় বাংলা মন্দির।
পাবনা জোড় বাংলা মন্দিরের মুখ্য আকর্ষণটি হচ্ছে এর ছাদ। দেশে ও দেশের বাইরে অন্যান্য জোড় বাংলা মন্দিরের যে বৈশিষ্ট সেই একই বৈশিষ্ট এরও বিদ্যমান। দোচালা টিনের ঘরের চালের মতো করে তৈরি করা ছাড়া ছাদ। পশ্চিম দিকটি মন্দিরের সদর। উত্তর ও পশ্চিম দিকে টানা বারান্দা, ২টি প্রবেশ পথও এই দুই বারান্দা দিয়ে (একটি মণ্ডপের ও অন্যটি গর্ভগৃহের)। সামনের ঘরটি মণ্ডপ ও পেছনেরটি গর্ভগৃহ। মণ্ডপের সামনের বারান্দায় ৩টি খিলান আছে। উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ৪টি করে ৮টি স্তম্ভের উপর মন্দিরটি দাঁড়িয়ে। মন্দিরটির দৈর্ঘ্য ১৬ হাত, প্রস্থ ১৪ হাত, উচ্চতা ২২ হাত এবং প্রাচীরের বেড় তিন হাত। দোচালা মন্দিরের দুই শেষপ্রান্ত উঁচু হয়ে একসঙ্গে মিশেছে। দেয়ালগুলো অত্যন্ত প্রশস্ত হলেও কামরাগুলো খুব ছোট ছোট সামনের দিকে ছাড়া অন্য দিকগুলোতে টেরাকোটার তেমন কোনো কাজ নেই। সাধারণ প্লাস্টার ও মাঝে মাঝে ২/১টা নকশা টেরাকোটা। তবে ছাদের ঠিক নিচ দিয়ে তিন দিকের ওয়ালে টানা জ্যামিতিক কারুকাজ আছে। সামনের দিকের টেরাকোটাগুলোর একটি বড় অংশ ছাঁচ টেরাকোটা।
ইট নির্মিত একটি অনুচ্চ বেদীর উপর মন্দিরের মূল কাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। মন্দিরটির উপরের পাকা ছাদ বাংলার দোচালা ঘরের কথা মনে করিয়ে দেয়। প্রবেশপথ এবং তৎসংলগ্ন স্তম্ভ ও দেয়ালের নির্মাণ কৌশলের সাথে দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরের কিছুটা সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যায়। গোপীনাথ মন্দিরের দেয়াল ও স্তম্ভে এক সময় প্রচুর পোড়ামাটির চিত্রফলক অলংকৃত ছিল। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মন্দিরের যথেষ্ট ক্ষতি সাধিত হয়।
এই ইমারতটি ভাস্কর্য শিল্পের একটি দারুণ নিদর্শন। আকারে ছোট হলেও দৃশ্যত বেশ কিছু সুন্দর ছোট ছোট পোড়া ইটের কারুকাজ করা নকশা মন জুড়িয়ে দেয়। দেয়ালগুলো বেশ প্রশস্ত কিন্তু সেই তুলনায় ভেতরের কামরাগুলো অপ্রশস্ত বলা চলে। দেশ ভাগের পর দীর্ঘদিন যাবত অনাদরে, অবহেলায় পড়ে ছিল মন্দিরটি। যার ফলে বেশ ক্ষতি হয়ে যায় ইমারতটির। পরবর্তীতে আইয়ুব খানের আমলে ১৯৬০ এর দশকে তৎকালের জেলা প্রশাসকের প্রচেষ্টায় ইমারতটির আমূল সংস্কার করা হয়।
কিভাবে যাবেন:-
ঢাকা থেকে পাবনায় বাসে যাওয়া যায়। এসি বাসে খরচ পড়বে ৩০০ টাকা আর নন-এসি বাসে খরচ পড়বে ৪০০ টাকা। পাবনা বাস-স্ট্যান্ডে নেমে রিকশা নিয়ে চলে যেতে পারবেন জোড় বাংলা মন্দিরে। রিক্সার ভাড়া নেবে মাত্র ২০ থেকে ২৫টাকা।