হার্ডিঞ্জ ব্রিজ| ট্র্যাভেল নিউজ বাংলাদেশ

1378

বাংলাদেশের  পাবনা  জেলার ঈশ্বরদী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিঃ মিঃ দক্ষিণে, পাকশী রেল-স্টেশন সংলগ্ন পদ্মা নদীর তীর এবং কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারার পদ্মার তীরের মধ্যবর্তী একটি রেলসেতু। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ রেলসেতু হিসেবে পরিচিত। এই সেতুর দৈর্ঘ্য ৫৮৯৪ ফুট। এর স্প্যান সংখ্যা ১৫। এর উপর দু’টি ব্রড-গেজ রেললাইন রয়েছে। সেতুটি নির্মাণকাল ১৯০৯-১৯১৫। ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের (Lord Hardinge) নামানুসারে এই সেতুর নামকরণ করা হয়।

১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই সেতু নির্মাণের জন্য ব্যাপক জরিপ করা হয়। বিশেষ করে নদী শাসন নদীর গভীরতা, নদীর তলদেশের কাঠিন্য ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করা হয়। ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই সেতু নির্মাণের জন্য ব্যাপক জরিপ করা হয়। বিশেষ করে নদী শাসন নদীর গভীরতা, নদীর তলদেশের কাঠিন্য ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করা হয়। ১৯১০-১১ খ্রিষ্টাব্দে পদ্মার দুই তীরে সেতুরক্ষাকারী বাঁধ তৈরির কাজ শুরু। এই সেতুর ১ হাজার গজ ভাটি থেকে ৬ কিলোমিটার উজান পর্যন্ত ১৬ কোটি ঘন ফুট মাটি ও ২ কোটি ৩৩ লাখ ৭০ হাজার ঘনফুট পাথর ব্যবহার করে গাইড বাঁধ নির্মাণ করা হয়। সেকালের  প্রায় ৩ কিলোমিটার চওড়া নদীটির, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা-পাবনার পাকশির হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণ স্থলের দুইপাশে বাঁধ দিয়ে ১ দশমিক ৮১ কিলোমিটার নদী সংকুচিত করা হয় এবং সেতু নির্মাণের সময়ই নদীর পানির প্রবাহ ক্ষমতা দাঁড়ায় ২৫ লাখ ঘনফুট।

১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে সেতুটির গাইড ব্যাংক এবং গার্ডার নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এরপর শুরু হয় সেতুটির গার্ডার স্থাপনের জন্য কূপ খনন করা হয়। এর প্রতিটি স্প্যান নির্মিত হয়, বিয়ারিং টু বিয়ারিং -এর বিচারে ৩৪৫ ফুট দেড় ইঞ্চি দৈর্ঘ্য এবং উচ্চতা ৫২ ফুট পরিমাপে। এর জন্য ব্যয় করা হয় ১ হাজার ২৫০ টন লোহা। প্রায় ২৪ হাজার শ্রমিক দীর্ঘ ৫ বছর এই সেতু নির্মাণে শ্রম দেয়। নির্মাণে মোট ইটের গাঁথুনি ২ লাখ ৯৯ হাজার টন, ইস্পাত ৩০ লাখ টন, সাধারণ সিমেন্ট ১ লাখ ৭০ হাজার ড্রাম এবং কিলডসিমেন্ট (বিশেষ আঠাযুক্ত) লাগানো হয় ১২ লাখ ড্রাম। ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দের শেষে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়।

১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে এই সেতু নির্মাণের আগে, আসামের সাথে কলকাতার যোগাযোগের জন্য বড় বাধা ছিল পদ্মা নদী। এই সময় পদ্মার এক পাড়ে ছিল ভেড়ামারার (বর্তমানে কুষ্টিয়া জেলার অংশ) দামুকদিয়া-রাইটাঘাট, অন্য পারে ছিল পাবনা জেলার পাকশির সাঁড়াঘাটা। মূলত পাকশির ঘাটটি ছিল বেশ জমজমাট। সে সময়ে এই দুটি ঘাটকে কেন্দ্র করে একটি বৃহৎ নৌবন্দরের সৃষ্টি হয়েছিল। সে সময়ে পদ্মা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর নদী হিসেবে পরিচিত ছিল। বিশেষ করে বর্ষার সময়ে এই ভয়ঙ্কর রূপ বহুগুণে বৃদ্ধি পেতো। প্রতি বৎসরই বহু বাণিজ্যিক এবং যাত্রীবাহী লঞ্চ, ইষ্টিমার, বজরা ডুবে যেতো। সে সময়ে দার্জিলিং ও ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে দেশী-বিদেশী পর্যটক যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনের সুবিধার্থে কাঠিহার থেকে রেলপথ আমিনগাঁ আমনুরা পর্যন্ত সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে অবিভক্ত ভারত সরকার, পদ্মা নদীর ওপর ব্রিজ তৈরির প্রস্তাব পেশ করে। এই প্রস্তাব অনুসারে, সেতুটির নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয়।

সেতুর ভিত গভীরতম পানির সর্বনিম্ন সীমা থেকে ১৬০ ফুট বা ১৯২ এমএসএল মার্টির নিচে। এর মধ্যে ১৫ নম্বর স্তম্ভের কুয়া স্থাপিত হয়েছে পানি নিম্নসীমা থেকে ১৫৯ দশমিক ৬০ ফুট নিচে এবং সর্বোচ্চ সীমা থেকে ১৯০ দশমিক ৬০ ফুট অর্থাৎ সমুদ্রের গড় উচ্চতা থেকে ১৪০ ফুট নিচে। সে সময় পৃথিবীতে এ ধরনের ভিত্তির মধ্যে এটাই ছিল গভীরতম। বাদবাকি ১৪টি কুয়া বসানো হয়েছে ১৫০ ফুট মাটির নিচে।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রিজটিতে বোমা মারা হয়। এতে ১২ নম্বর স্প্যানটির ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে তা মেরামত করা হয়।

কিভাবে যাবেন:-

ঢাকা থেকে পাবনায় বাসে যাওয়া যায়। এসি বাসে খরচ পড়বে ৩০০ টাকা আর নন-এসি বাসে খরচ পড়বে ৪০০ টাকা। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীতে অবস্থিত। হার্ডিঞ্জ ব্রিজে সরাসরি যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হল ট্রেন।