জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর

1221

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের খ্যাত ও অখ্যাত প্রান্তগুলোতে অসংখ্য জাতি (Nation), জনগোষ্ঠী (Ethnic group), আদিবাসী (Aborigine), ও মৌলগোষ্ঠী (Tribe) বাসবাস করছে। এদের প্রত্যেকেরই বিশেষ দৈহিক গড়ন ভাষা, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভাস, ধর্ম, রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান, বিশ্বাস ও জীবন যাত্রার ধরন রয়েছে। এই সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যগুলোর তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন জাতি, জনগোষ্ঠী, আদিবাসী ও মৌলগোষ্ঠীগুলোর উদ্ভব, বিকাশ এবং পারস্পরিক জাতিতত্ত্বের বিষয়ে একটি রূপরেখা নির্ণয় করা সম্ভব হয়। বাংলাদেশেও বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষ বসবাস করে আর তাদের ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্যই নির্মাণ করা হয়েছে জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর।

জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর চট্টগ্রাম শহরের একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান। এই জাদুঘরটি মূলত দেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর উত্তরাধিকার ও তাদের জীবনপ্রণালী সম্পর্কে দর্শনার্থীদের ধারণা দেওয়ার নিমিত্তে প্রতিষ্ঠিত। এশিয়া মহাদেশের দুটি জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘরের মধ্য চট্টগ্রামের জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘর অন্যতম, অন্যটি রয়েছে জাপানে। এটি গবেষণাকাজেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই জাদুঘরটি চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় বাদমতলী সংলগ্ন ১.২৫ একর স্থানে ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৫ সালে, বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭৪ সালে সর্বসাধারণের পরিদর্শনের জন্য জাদুঘরটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। পরবর্তীকালে ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে জাদুঘরে দুটি কক্ষ অর্ন্তভূক্ত হয়।

জাদুঘরে দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে রয়েছে মানচিত্র, আলোকচিত্র, মডেল, কৃত্রিম পরিবেশ, দেয়ালচিত্র, সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ফলক ইত্যাদি। যেখানে শুধু দেশি-বিদেশি দর্শকদের জ্ঞানানুসন্ধানের আকাঙ্ক্ষাই পূর্ণ করে না, সব শ্রেণির দর্শনার্থীদের বিপুল আনন্দেরও খোরাক জোগায়। আয়তনের বিচারেও প্রতিষ্ঠানটি এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত এ ধরনের জাদুঘরগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

জাদুঘরের প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন নৃতাত্তি¡ক জনগোষ্ঠীর জীবন প্রণালি। এর মধ্যে রয়েছে- চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, ম্রো, বম, খুমি, চাক, তঞ্চঙ্গ্যা, রাখাইন, লুসাই, পাংখো, মণিপুরি, খাসিয়া, বোনা, পাওন, গারো, হাজং, দালু, কোচ, সাঁওতাল, ওরাং, রাজবংশী, বাগদি ইত্যাদি আদিবাসী।

জাদুঘরের প্রদর্শনীতে এ- যাবত্ দেশ-বিদেশের ১২টি জনগোষ্ঠী এবং ২৬টি মৌলগোষ্ঠী ও আদিবাসীর বৈচিত্র্যময় জীবনযাত্রার বিবিধ বৈশিষ্ট্য স্থান পেয়েছে। এসব বৈশিষ্ট্যের মধ্যে দৈহিক গড়ন, প্রাকৃতিক পরিবেশ, ঘরোয়া জীবন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্য, উৎসব, নাচ-গান, অলঙ্কার, ধর্মীয় কার্যাবলি, শিকার, হস্তশিল্প ইত্যাদি অন্যতম।

এগুলো প্রতিনিধিত্ব করছে যেসব জনগোষ্ঠী, তার মধ্যে বাংলাদেশের পার্বত্য জেলাগুলোর (বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম) এবং চট্টগ্রামের উত্তর ও পূর্বাংশের চাকমা (চাঙমা), মারমা (মগ), ত্রিপুরা (টিপরা); কক্সবাজার ও পটুয়াখালী জেলার রাইখান (রাখাইন); মৌলগোষ্ঠী ও আদিবাসী। চাক (শাক), তঞ্চঙ্গ্যা (টংচঙ্গাঁ/দৈনাক), মুরং (ম্রো), লুসাই (মিজো), পাঙেখা (পাংখো), বম (বনযোগী), খ্যাং (খিয়াং), খুমি (কুমি); ঢাকা বিভাগের উত্তরাংশের জনগোষ্ঠী গারো, মৌলগোষ্ঠী ও আদিবাসীÍ হাজং, কোচ, দালু, মান্দাই; উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মণিপুরি, খাসিয়া, বোনা, কুকী; পশ্চিমাঞ্চলের (রাজশাহী বিভাগ) সাঁওতাল, বাবুবলী, রাজবংশী, ওঁরাও, পলিয়া।

যেভাবে যাবেনঃ

জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর চট্টগ্রাম শহরতলীর মধ্যে অবস্থিত হওয়ায় যে কোন স্থান থেকে অটো কিংবা রিক্সা করে জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরে যাওয়া যায়।