নওগাঁর বদলগাছীর নিভৃত পলীর এক প্রান্তে মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে একটি দ্বীপ। প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন এই দ্বীবে নজর পড়লেই দর্শকরা আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। কৌতুহল জাগে মনে কি আছে এই দ্বীবে। হাজার হাজার বছর পেরিয়ে আজও মাথা উচু করে দাড়িয়ে দর্শনার্থীদের সে জনমের প্রনাম জানিয়ে দিচ্ছে এ প্রজন্মের আশির্বাদ হয়ে।
হলুদবিহার ॥ বদলগাছী উপজেলার বিলাসবাড়ি ইউনিয়নের দ্বীপগঞ্জ গ্রামে ‘হলুদবিহার’ অবস্থিত। এখানে যে একটি বৌদ্ধ বিহারের অস্তিত্ব আছে তা শুধু দুটি শব্দ-‘হলুদবিহার ও দ্বীপগঞ্জ’ থেকে উপলব্ধি করা যায়। হলুদবিহার যেমন একটি বিহার বা সংঘারামের অস্তিত্বের ইঙ্গিত বহন করে, তেমনি দ্বীপগঞ্জও একটি দ্বীপের অবস্থানের আভাস দেয়। এই বিহার নওগাঁ জেলার তথা এশিয়ার বৃহত্তম সোমপুর বিহার বা পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার থেকে মাত্র ১৫ কিমি দক্ষিণে অবস্থিত। দ্বীপগঞ্জ গ্রামে হাটের পাশে এই উঁচু ঢিবিটি সকলের দৃষ্টি কাড়ে। এই ঢিবির উচ্চতা সমতল ভূমি থেকে প্রায় ২৫ ফুট ও পরিধি প্রায় ১শ’ ফুট। বিহারের পার্শ্ববর্তী এলাকায় মাঝেমধ্যে মাটি খননকালে আকর্ষণীয় প্রতœনিদর্শন যেমন-পাথর, ধাতব মূর্তি, পোড়ামাটির ফলক, অলংকৃত ইট পাওয়া যায়। আলোচিত ঢিবি ও মাটির তলা থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন নিদর্শন দেখে অনেকে অনুমান করত যে, এটি একটি প্রাচীন কীর্তি। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ অনুসন্ধান ও জরিপ চালিয়ে এটি একটি বৌদ্ধ বিহার বলে চিহ্নিত করেছে। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৭৬ সালে হলুদবিহারকে সংরক্ষিত মনুমেন্ট হিসেবে ঘোষণা দেয়।
ভারতের প্রত্নতত্ত্ব জরিপ বিভাগের জি.সি দত্ত ১৯৩০-৩১ সালে স্থানটি পরিদর্শনকালে লক্ষ করেন যে, এটি পূর্ব-পশ্চিমে ৬৪.৫ মিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে ৪০.৫ মিটার এবং সংলগ্ন ভূমি হতে এর উচ্চতা প্রায় ১০.৫ মিটার। ইট খুলে নেয়ার ফলে আংশিকভাবে এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে প্রাচীন নির্মাণাদি এবং আধা ফোটা পদ্মের উপর মহারাজলীলাভঙ্গিতে বসা চারবাহু বিশিষ্ট একটি ক্ষুদ্র (১ মিটার উঁচু) ব্রোঞ্জ নির্মিত গণেশ মূর্তি উন্মোচিত হয়। জি.সি দত্ত এটিকে আট-নয় শতকের বলে শনাক্ত করেন। ১৯৬৩ সালে কাজী মেছের এ অঞ্চল পরিদর্শন করে পাথরের একটি ভগ্ন বৌদ্ধমূর্তি ও পাহাড়পুররীতির কয়েকটি পোড়ামাটির ফলক উদ্ধার করেন। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের হারুনুর রশীদ ১৯৭৪ সালে এ এলাকাটি পরিদর্শন করেন এবং দেখতে পান যে, সমগ্র এলাকা, বিশেষকরে হলুদ বিহার গ্রামের দক্ষিণপূর্ব দিকে এক বিশাল পুরানো দিঘির চারপাশে অসংখ্য নিচু টিবি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
যেভাবে যাবেন:
নওগাঁ জেলা শহর থেকে সড়কপথে বদলগাছী উপজেলা সদর সহজেই যাওয়া যায় । সেখান থেকে সড়কপথে ভান্ডারপুর বাজার হয়ে কোলার হাট তারপর হলুদ বিহার পৌছাঁনো যায় । রেলপথে ভান্ডারপুর বাজার তারপর হলুদ বিহার যাওয়া যায় । তাছাড়া পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার থেকে ১৪ কিমি. দক্ষিণে হলুদ বিহার । সেখান থেকেও হলুদ বিহার যাওয়া যায় ।