জমিদার গিরীশ চন্দ্র সেনের বাড়ি

1160

বারাশিয়া নদীর পূর্বপাড়ে ১.৭ শতাংশের এক চিলতে জমি৷ তত্‍কালীন জমিদার গিরীশ চন্দ্র সেনের বাড়ি থেকে ৫০০ গজ উত্তর-পশ্চিমে এবং বর্তমান কাশিযানী এম.এ খালেক সরকারী বালিকা বিদ্যালয় লাগোয়া পশ্চিম পাশ্ব জমিটুকুর অবস্থান৷ জানা যায় এই এক চিলতে জমির ওপর প্রথমে ছোট্ট একটি টিনের ঘর ছিল৷ মানুষের চোখে পড়ার মত কিছুই ছিলনা৷ অভাবী যন্ত্রনা ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠত এই ঘরে৷ কিন্তু বেশি দিন না যেতেই টিনের ঘরটি রূপ পায় ইট পাথরের এক আনন্দাশ্রমে৷ সুনিপুণ কারুকার্য আর সুদর্শন ভঙ্গিমায় দন্ডায়মান বাড়িটি নিমিষের মধ্যেই কাশিযানীবাসীকে তাক লাগিয়ে দেয়৷ জনমনে উচ্চারিত হয় এটি সখীচরনের বাড়ি৷ বারাশিয়া নদীর কলকল দ্বনিতে আন্দোলিত ছিল পশ্চিমমুখী এই বাড়িটি৷ চারপাশে ছিল উঁচু প্রাচীর৷ দিবা-নিশি বিনিদ্র মাথা উঁচু করে পাহারা দিত অনেক গাছ-গাছালি৷

দ্বিতল ভবনটির দোতলার সম্মুখ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যেত প্রকৃতির অপার মহিমা৷ ব্যালকনির দুপাশে দুটি কক্ষ, পিছনের বড় কক্ষটিকে বাহুর মত আগলে ধরে রেখেছে৷ বড় কক্ষের পিছনে রয়েছে দুটি লম্বা বারান্দা৷ প্রধমটির উত্তর প্রান্তে দোতলায় উঠতে সিঁড়ি রয়েছে৷ মূল ভবনের পিছনে তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি একতলা ছোট্ট পাকা ভবন রয়েছে৷ জানা যায় এটি তখন রন্ধনশালা হিসেবে ব্যবহৃত হত৷

এহেন স্বপ্নের সুরম্য বাসভবনের মধ্যে সখীচরন রায় নিজেকে লুকিয়ে রাখেননি৷ সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন৷ কাশিযানীর শ্বশ্মানভূমি (১০ শতাংশ) তিনিই দান করেছেন৷ ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের সময় সবকিছুর মোহ ত্যাগ করে সমাজদরদী এই সখীচরন পাড়ি জমান ভারতে৷ রয়ে যায় তাঁর অমর কীর্তি লাল রঙের বাসভবনটি৷ বাড়িটি দেখভালের জন্য অবস্থান করে কাশিয়ানীর শান্তি রাম খাঁর মা৷ জনশূণ্য বাড়িটি পরবর্তী সময়ে সার্কেল অফিসার (ডেভেলপমেন্ট) -এর কার্যালয় হিসেবে আবার প্রাণ ফিরে পায়৷ সময়ের পরিবর্তনে এটি ১৯৬৭ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে সার্কেল অফিসার (রাজস্ব)-এর কার্যালয় হিসেবে প্রতিস্থাপিত হয়৷

স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর অফিসটির উপর আবার নেমে আসে অস্থিরতা৷ অফিসের যাবতীয় কাগজপত্র গুটায়ে আবার ফিরে যেতে হয় সখীচরন রায়ের বাড়িতে৷ এরই মধ্যে সখীচরনের রেখে যাওয়া সমস্ত সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে পরিগণিত হয়৷ জনসাধারণের পদরেনুতে ধন্য হয় বাড়িটি৷ পরিবর্তনের স্রোতধারায় বাড়িটি সাজে নতুন সাজে৷ ১৯৮৯ সালের জুলাই মাস থেকে উপজেলা ভূমি অফিস নামে সখীচরনের বাড়িটি চারিদিকে পরিচিতি লাভ করে৷ স্মৃতির পরিচায়ক সখীচরন রায়ের এই স্বপ্নের বাড়িটি এখনও উপজেলা ভুমি অফিস হিসেবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে কাশিয়ানীবাসীকে৷

যেভাবে যাবেনঃ-

কাশিয়ানী উপজেলাতে এই বাড়িটি অবস্থিত হওয়ায় খুব সহজেই কাশিয়ানী উপজেলা থেকে রিক্সা করে সখীচরন রায়ের বাড়ি পৌঁছানো যায়।