ইলিয়ট ব্রিজ| ট্র্যাভেল নিউজ বাংলাদেশ

1949

চলনবিলের জেলা সিরাজগজ্ঞ। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজরীত সিরাজগজ্ঞ জেলা। এছাড়াও তাঁতশিল্প, নদীরক্ষা বাধ, বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর অববাহিকা, বিভিন্ন ব্রীজ, পুরান কালে নির্মিত অনেক মসজিদ, ইকো পার্ক, বিভিন্ন খ্যাতিনামা ব্যক্তিদের বসতবাড়ি রয়েছে এই সিরাজগজ্ঞ জেলাতে। অন্য সকল ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে সিরাজগজ্ঞ জেলার অন্যতম একটি স্থাপনা হল ইলিয়ট ব্রিজ। স্থানীয় ভাবে ব্রিজটি “বড় পুল” নামে পরিচিত।

ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, ১৮৯২ সালের দিকে তৎকালীন সিরাজগঞ্জের সাব ডিভিশনাল অফিসার ছিলেন মি. বিটসনবিল। তিনি চিন্তা করলেন বড়াল নদীর উপর একটি সেতু তৈরি করবেন। তিনি চেয়েছিলেন সিরাজগঞ্জ শহরকে যেন দেখা যায় ভাল করে। তিনি তখন সিরাজগঞ্জের অনেক বড় বড় ব্যবসায়িদের ডাকলেন। একটি বৈঠক করলেন। তাঁদের বললেন তিনি একটি সেতু বানাতে চান। সবাই অনেক খুশি হল এবং একমত হল। তিনি সবাইকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। এবং ডিসট্রিক্ট বোর্ড থেকে অনুদান আদায় করলেন প্রায় ১৫০০ টাকা। কমিটির অন্যান্য সদস্যগণ তাঁদের সাধ্যমত এখানে দান করলেন। এবং ব্রিজ তৈরির কাজ শুরু করলেন। ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার ষ্টুয়ার্ট হার্টল্যান্ড এই ব্রিজ তৈরি করেন। তখন প্রায় ৪৫০০০ টাকা লেগেছিল এই ব্রিজ তৈরি করতে। ব্রিজটির নাম রাখা হয় তৎকালীন আসামের গভর্নর চার্লস ইলিয়টের নামে। কারন ইলিয়ট সাহেব ১৮৯২ সালের ৬ আগস্ট এই ব্রিজের ফাউন্ডেশনের কাজের উদ্বোধন করেন। ১৮৯৫ সালে এই ব্রিজ সম্পূর্ণ হয়।

এই সেতু ১৮০ ফুট লম্বা ও ১৬ ফুট চওড়া। এই সেতুর অন্যতম বিশেষ একটি বৈশিষ্ট্য আছে। তা হল এই সেতুর কোন পিলার নেই। আর্চ দিয়ে সেতুটি তৈরি হয়েছিল। লোহা এবং সিমেন্টের সমন্বয়ে এই ব্রিজটি কাটাখালের উপর প্রায় ৩০ ফুট উঁচুতে তৈরি হয়েছিল। পুরো সেতু স্টিলের কাঠামোর উপর তৈরি। আগে কাটাখালির নিচ দিয়ে অনেক বড় বড় নৌকা, জাহাজ চলত। পিলার না থাকায় সেগুলো সহজে চলাচল করতে পারত। তেমন অসুবিধা হত না। এই সেতুকে স্থানীয় লোকেরা বড়পুল নামে ডাকে।

এখনও এই সেতু টিকে আছে। মানুষজন ছোট ছোট গাড়ি এই সেতুর উপর দিয়ে নিয়ে যায়। হেঁটেও পাড় হওয়া যায় এই সেতু। সেতুটি দেখতেও খুব সুন্দর। আর সেতুটি বানানো হয়েছিল সিরাজগঞ্জ শহরকে দেখার জন্য। রাতের বেলা সে সময় সিরাজগঞ্জ শহরকে এই সেতুর উপর দিয়ে দেখতে খুব অন্যরকম লাগত। এখনও খুব সুন্দর লাগে সিরাজগঞ্জ শহর কে দেখতে এই সেতুর উপর দিয়ে।

ভূমি সমতল থেকে কমপক্ষে ২৫ ফুট উঁচুতে বড়পুলের মাঝামাঝি দাঁড়ালে গোটা শহর দেখা যায়। এটি এ অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে আছে। সিরাজগঞ্জের রাজনীতিতেও বড়পুল পরিচিত নাম। কেননা, দেশের প্রধান দুই দলের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে বড়পুল নোম্যান্স ল্যান্ডে পরিণত হয়। যে দল বড়পুলের চূড়ায় ওঠে তারাই যেন সংঘর্ষে বিজয়ী হয়।

যেভাবে যাবেনঃ-

ঢাকা থেকে সরাসরি বাস কিংবা ট্রেইনে চেপে সরাসরি সিরাজগঞ্জ শহরে পৌঁছানো যায়। ঢাকার গাবতলি,সায়দাবাদ,মহাখালি বাস টার্মিনাল গুলো থেকে বাস পাওয়া যায়।কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেইন যাত্রা শুরু হয়। সিরাজগঞ্জ শহরে পৌঁছালেই এই ব্রিজটি দেখতে পাওয়া যায়।