চট্টগ্রাম শহর মুগল স্থাপত্যের প্রাচীন নিদর্শনে ভরপুর একটি শহর। চট্টগ্রামের আদালত ভবন পরীর পাহাড়ের উপরে ১৮৯২-৯৮ সালে ইন্দো-ব্রিটিশ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত একটি উপনিবেশিক স্থাপত্যকীর্তি। ইউরোপীয় ও মুগল ঐতিহ্যের সম্মিলিত ধারায় লোকজ নানা অলঙ্করণ আরোপ করে বিশেষ এই স্থাপত্যশৈলীর অবতারণা হয় অবিভক্ত বাংলায়। জনদাবীর পরিপ্রেক্ষিতে শতাব্দীর প্রাচীন আদালত ভবনের পশ্চিমাংশ সম্প্রতি সংস্কার করা হলেও পুরাকীর্তি আইনের আওতায় আনা হয় নি এই প্রত্নসম্পদ। কিংবদন্তি আছে, বদর শাহ নামের একজন পীর প্রথম চেরাগ জ্বালিয়ে দেও, দৈত্যদানোয় ভরা এই শহর থেকে দূর করেছিলেন অশুভ আত্মা। আর যে পাহাড়ের ওপর তিনি চেরাগ জ্বালিয়েছিলেন তার নাম হয়েছিল চেরাগী পাহাড়। তবে কেউ যদি এই গল্প শুনে চেরাগী পাহাড় খুঁজতে বের হন তিনি হতাশই হবেন। কেননা ওখানে কোনো পাহাড়ই নেই, শুধু সারি সারি দালান।

পাহাড়ি ভূমির উচ্চতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে দ্বিতল এই ভবনের পূর্ব অংশের উত্তর প্রান্ত রূপ নিয়েছে ত্রিতলে। ভবনের এই অংশেই রয়েছে পূর্ব দিক থেকে পথিকদের প্রবেশের জন্য সুঅলঙ্কৃত মূল তোরণটি-নীচে রাস্তা থেকে অনেক ধাপ সিঁড়ি বেয়ে এখানে আসতে হয়। তোরণের সজ্জায় ব্যবহূত হয়েছে আলঙ্কারিক খাঁজযুক্ত গোলাকার ছিদ্র এবং এর উভয় দিকে উদগত নকশায় পত্রালঙ্কারের স্টাকৌ, চতুর্কেন্দ্রিক গথিক তোরণ, অভিক্ষিপ্ত পোড়ামাটির পদ্ম, ব্যাপক পরিচিত ইউরোপীয় প্যাডিম্যান্ট, গর্ভক্ষেত্র এবং কুলঙ্গি, এবং অন্যান্য আকারের দেশি ও বিদেশি মটিফ ও আকৃতি। মূল দালানের পশ্চিম অংশ কিছু দক্ষিণ দিকে টানা-পূর্ব অংশের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে। নির্মাতার তীক্ষ্ণ সফল সজাগতা ছিল ভবনটির প্রতি তলের মেঝের সমতা রক্ষায়। দ্বিতলের বারান্দার মেঝে পাথরের খন্ডাংশে নির্মিত।
মুগল মসজিদ স্থাপত্যের গভীর প্রভাব পড়েছে দালানটির ভূমি নকশায়। নির্মাণ-স্থলের সাংস্থানিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করেছে পরিকল্পনার অন্যান্য প্রায়োগিক দিক। মূল দালানটি আয়তাকার এবং পূর্ব-পশ্চিম বিন্যস্ত-এর পূর্ব প্রান্তে আড়াআড়ি যুক্ত আছে উত্তর-দক্ষিণ বিন্যস্ত একটি সংযোজিত অংশ।
যেভাবে যাবেন:-
দেশের যেকোন অঞ্চল থেকে সড়ক, নৌ বা রেলপথে চট্টগ্রাম শহরে চলে আসুন। চট্টগ্রামের আদালত ভবন চট্টগ্রাম শহরতলীতে অবস্থিত হওয়ায় যে কোন স্থান থেকে অটো কিংবা রিক্সা করে চট্টগ্রামের আদালত ভবন যাওয়া যায়।
















