বাংলাদেশের ইতিহাস কিংবা সংস্কৃতি খুবই সমৃদ্ধ। প্রাচীনকাল থেকেই এই অঞ্চলে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন সময় বাংলায় আসেন। তারা তাদের মেধা দিয়ে বাংলার ইতিহাস আবনহ ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হল হাসন রাজা। তিনি ছিলেন কবি,গায়ক, সমাজ সংস্কারক।
হাসন রাজা জাদুঘর সিলেটের প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজারে অবস্থিত। প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক কবি হাসন রাজার বাসভবনই বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই জাদুঘরের উদ্দেশ্য হচ্ছে হাসন রাজাকে কেন্দ্র করে রাজা পরিবারের স্মৃতি সংরক্ষণ করা। লোক সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের উপর গবেষণা কার্যক্রমকে এই জাদুঘর অনুপ্রানিত করে থাকে।
বাংলার লোকগানে ফিরে আসেন হাসন রাজা তাঁর লেখা অসাধারণ জীবনবোধের কবিতা ও গান নিয়ে। আজ থেকে বহু বছর আগে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর ধারে প্রতাপশালী দাপুটে এ জমিদার বৈরাগ্য সাধনে মুক্তির পথ বেছে নিয়েছিলেন। প্রজাদের ওপর বিনা কারণে অত্যাচারী এবং ভোগবিলাসে মত্ত ছিলেন জমিদার হাসন রাজা। পরে এক আধ্যাত্মিক স্বপ্ন-দর্শন তাঁর জীবনকে আমূল পাল্টে দেয়। মন হয়ে ওঠে প্রসারিত, জীবন হয়ে ওঠে সহজ, সরল ও সাদাসিধে। বিলাসপ্রিয় জীবন ছেড়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাড়লেন জমকালো পোশাক। চরিত্রে এলো এক সৌম্যভাব; পরনে এলো সুফি পোশাক। জীবনের যত ভুলত্রুটি, শোধরাতে শুরু করলেন একে একে।
সাধারণ এক বাড়িতে সাধক এ রাজার যে স্মৃতিচিহ্ন এখনো অবশিষ্ট আছে, তা দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে সুনামগঞ্জ শহরের আরফিন নগরে। খুব সাদামাটা এক বাড়িতে সংরক্ষিত শেষ স্মৃতিচিহ্নগুলো নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি জাদুঘর, যা আপনাকে নিয়ে যাবে উনিশ শতকের শুরুর দিকের সেই সময়টাতে। ছোটখাটো কিন্তু সংরক্ষণের জন্য অনন্য সব জিনিস আপনাকে মুগ্ধ করবে নিশ্চিত। রাজার আয়েসি জীবন থেকে শুরু করে আপনি দেখতে পাবেন কবি জীবনের সব সংগ্রহ। বাদক যন্ত্র থেকে রাজার জমিদারি ম্যাপ। আরও আছে রাজার খড়মসহ ব্যবহার্য জিনিসপত্র। ঘরের এবং ঘরের বাইরের সব সংগ্রহের পাশাপাশি অবস্থান পেয়েছে বিশিষ্টজনের সঙ্গে রাজার সাক্ষাৎ ও দর্শনার্থীদের ভ্রমণের বিশেষ কিছু ছবি। এসব দেখতে দেখতে আপনি রাজার সেই আমলে ফিরে যাবেন, কল্পনার তুলিতে আঁকতে চাইবেন রাজার জীবন দর্শন। কীভাবে একজন রাজা একাধারে এত বড় রাজ্য শাসনের পাশাপাশি কবিতা ও গানের সঙ্গে নিজের জীবনবোধকে সাধনার রাজ্যে নিবিষ্ট করেছিলেন।
কিভাবে যাবেন:-
সড়ক পথে ঢাকা হতে সুনামগঞ্জের দূরত্ব ২৯৬ কিলোমিটার এবং রেলপথে ঢাকা হতে সিলেট রেল স্টেশনের দূরত্ব ৩১৯ কিলোমিটার; এখানে রেল যোগাযোগ নেই বিধায়, প্রথমে সিলেট এসে তারপর সুনামগঞ্জ আসতে হয়। রেল পথে কেবল মাত্র ছাতক আসার জন্য ব্যবস্থা রয়েছে কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) জংশন স্টেশন থেকে।
ঢাকার সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সুনামগঞ্জে আসার সরাসরি দুরপাল্লার এসি ও নন-এসি বাস সার্ভিস আছে, এগুলোতে সময় লাগে ৫.৩০ হতে ৮ ঘন্টা। হাসন রাজা জাদুঘর সুনামগঞ্জ শহরের ‘০’ পয়েন্টের ১ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে।