বার শিবালয় মন্দির জয়পুরহাট জেলার বেল-আমলা গ্রামে অবস্থিত। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা নিভৃত স্থানে বারটি শিবমন্দির রয়েছে। মন্দিরগুলি কোন যুগে এবং কার দ্বারা তৈরি তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে মন্দিরের গঠন প্রণালী ও নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত দেখে মনে হয় এগুলি সেন যুগে তৈরি। কারণ সেন রাজা বল্লভ সেন ছিলেন শিবের উপাসক তথা শৈব। এতদঞ্চলে সেন রাজাদের কিছু কীর্তি রয়েছে। যেমন পাঁচবিবির লকমা রাজবাড়ি ও পাথরঘাটা। এর থেকে ধরে নেয়া যায় রাজা বল্লাল সেন শিব উপাসনার জন্য এখানে এসব মন্দিরগুলি নির্মাণ করেছিলেন।
অন্যজনমতে কথিত আছে, বেল-আমলা গ্রামে রাজীব লোচন নামে একজন অঘাত ধনশালী জমিদার বাস করতেন। সম্পদের প্রাচুর্যতার কারনে তাকে ইতিহাসে জগৎসেট এর সাথে তুলনা করা হয়। জনশ্রুতি মতে রাজীব লোচন ছিলেন ধর্ম ভীরু কায়েস্ত। বেল-আমলার বাবু রাজীব লোচন ১৭০০ সালে এই বার শিবালয় মন্দির গুলো নির্মান করেন। এই মন্দিরের নামে বর্তমানে এলাকার নাম বেল-আমলার পরিবর্তে বার শিবালয় হয়েছে।
জয়পুরহাট সদর থেকে তিন মাইল উত্তর পশ্চিমে ছোট যমুনার তীরে বেল-আমলা গ্রামে বার শিবালয় মন্দির অবিস্থত। এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিব মন্দির অনেকেই বলে থাকেন এটা এই উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় শিব মন্দির। বাংলাদেশের একই স্থানে ১২ টি শিব মন্দির একমাত্র এখানেই আছে। বার শিবালয় মধ্য যুগীয় হিন্দু স্থাপত্য শিল্পের একটি অনবদ্য দিষ্টান্ত।
বর্তমানে এখানে প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের শিব চতুর্দশীতে ২ দিনব্যাপী শিবরাত্রি পূজা উৎসব ও মেলার আয়োজন করা হয়। এই ২ দিনের মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সনাতন ধর্মালম্বী নারী ও পুরুষেরা ছোট যমুনা নদীতে পুন্যস্নান করতে আসেন। পুন্যস্নান শেষে পুন্যার্থীরা শিবের মাথায় দুধ ও পানি ঢেলে পারিবারিক শান্তি কামনায় প্রার্থনা করেন। মিঠাই-মিষ্টান্নের পাশাপাশি বাচ্চাদের খেলনা, কাঠ, বাঁশ ও বেতের বিভিন্ন আসবাবপত্রসহ অন্যান্য পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা।
যেভাবে যাবেনঃ-
ঢাকা থেকে সরাসরি বাস কিংবা ট্রেইনে চেপে সরাসরি জয়পুরহাট জেলা শহরে পৌঁছানো যায়। ঢাকার গাবতলি,সায়দাবাদ,মহাখালি বাস টার্মিনাল গুলো থেকে বাস পাওয়া যায়।কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেইন যাত্রা শুরু হয়। আক্কেলপুর উপজেলায় আসতে হয়। বার শিবালয় মন্দিরটি জয়পুরহাট জেলা শহরের তিন মাইল উত্তর পশ্চিমে ছোট যমুনার তীরে অবস্থিত । জয়পুরহাট জেলা শহর থেকে রিক্সা কিংবা সি এন জি করে বার শিবালয় মন্দির যাওয়া যায়।