গোপীনাথ ঠাকুরের মন্দির|

1370

জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলা সদর হতে মাত্র ৬/৭ কিঃ মিঃ পূর্বে গোপীনাথপুরে একটি অতি প্রাচীন মন্দির রয়েছে । এটি প্রায় পাঁচশ বছরের পুরানো মন্দির । এটি গোপীনাথ ঠাকুরের মন্দির নামের পরিচিত।

যতদুর জানা যায় ১৪৮৯ সালে নব দ্বীপের ঢ়াড়ীয় রামদেব চক্রবর্তীর স্ত্রীর গর্ভে সুদেব ও ভূদেব নামে দুই ছেলের জন্ম হয় । হরিভক্ত এই দুই ভাই ভারতের নদীয়া জেলার শান্তিপুরে অদৈত গোস্বামী কাছে দীক্ষা নিতে গেলে তিনি তার স্ত্রীর কাছে দীক্ষা নেওয়ার পরামর্শ দেন ।

কিন্তু পূর্ন মাসী ভগপতি কোন পুরুষকে মন্ত্র দিতে অস্বীকৃতি জানান । উপায় না দেখে দুই ভাই নারী বেশ ধারন করে নন্দিনী প্রিয়া ও জঙ্গলী প্রিয়া নাম নিয়ে দীক্ষা গ্রহন করেন । এরপর জঙ্গলী প্রিয়াকে ভারতে রেখে নন্দিনী প্রিয়া এই গোপীনাথপুরে এসে জঙ্গলের ভিতর গোপীনাথের বিগ্রহ স্থাপন করে পূজা অর্চনা শুরু করেন ।

১৫০০ শতব্দীর শেষ দিকে বাংলার শাসক সুলতান আলাউদ্দীন হুসেন শাহ প্রজাদের দুঃখ নিজ চোখে দেখার উদ্দেশ্যে এখানে আসেন এবং গভীর অরন্যে একজন পুরুষকে নারীবেশে আরাধনা করতে দেখেন । তিনি নন্দিনী প্রিয়ার আসল পরিচয় এবং ভিক্ষা করে অতিথি আপ্যায়ন মুগ্ধ হয়ে তাকে তাম্র পত্রে গোপীনাথ দেবতার নামে পাঁচ নল মানে ১২৯ বিঘা জমি দান করেন ।পরবর্তীতে নন্দিনী প্রিয়ার সেই পূজা স্থানে তৈরী করা হয়েছে গোপীনাথপুর মন্দির । এই মন্দিরে কাঠের গোপীনাথের বিগৃহটি সাধক নন্দিনী প্রিয়ার নিজ হাতে স্থাপিত । তবে বাদশার দেওয়া তাম্র পত্রটি মুক্তিযুদ্ধের সময় হারিয়ে গেছে । এই মন্দিরে ১২ মাসে ১৩ পূজা হয় । সেই থেকে এখানে এখানো পর্যন্ত একই ভাবে মন্দিরের পক্ষ থেকে অতিথি সেবা হয়ে আসছে । গোপীনাথ মন্দিরকে ঘিরে শ্রী কৃষ্ণের দোলযাত্রা উপলক্ষে প্রতি বছর ফাল্গুন মাসে বিশাল মেলা বসে যা বাংলাদেশের প্রাচীন এবং বড় মেলা ।

১৩০৪ বাংলা সালে এক ভূমিকম্পে এ মন্দিরটি ভেংগে পড়ে । ১৯২৮ হতে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বর্তমান মুল মন্দিরটি পুনরায় নির্মাণ করা হয় । এখনও পুরাতন কারুকার্যের কিছু নমুনা মুল ভবনে রয়েছে । মন্দিরটির উচ্চতা ৫০ ফুট এবং এর নির্মাণ ব্যয় ১লাখ টাকা হয়েছিল । প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় আরতি এবং মধ্যাহ্নে আধামণ (২০কেজি) চালের অন্নভোগ দেওয়া হয় । প্রতিবছর দোল পূর্ণিমাতে এখানে মেলা বসে এবং ১৩দিন ধরে এ মেলা চলে । পূর্বে এক মাস ধরে মেলা হত । ছায়াঘন সবুজে ঘেরা অপরুপ প্রাকৃতিক দৃশ্য ও প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন এলাকাটিকে সৌন্দর্যমন্ডিত করেছে । দুর দুরান্ত থেকে ভ্রমণ বিলাসী ও সৌন্দর্য পিপাসু ব্যক্তিবর্গ এখানে প্রতিনিয়ত আগমন করেন । তাই পিকনিক স্পট হিসেবেও সহানটি খ্যাতি লাভ করেছে । প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন গোপীনাথপুরের এই মন্দির ও তৎপার্শ্ববর্তী এলাকা ঘিরে বার্ষিক মেলায় মৃৎশিল্প,হসতশিল্প,কারুপণ্যসহ নানারকম তৈজসপত্রের কেনা-বেচা অনেক দিন ধরে চলে আসছে ।

যেভাবে যাবেনঃ-

ঢাকা থেকে সরাসরি বাস কিংবা ট্রেইনে চেপে সরাসরি জয়পুরহাট জেলা  শহরে পৌঁছানো যায়। ঢাকার গাবতলি,সায়দাবাদ,মহাখালি বাস টার্মিনাল গুলো থেকে বাস পাওয়া যায়।কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেইন যাত্রা শুরু হয়। জয়পুরহাট জেলা  আক্কেলপুর উপজেলায় আসতে হয়। আক্কেলপুর শহর থেকে রিক্সা কিংবা সি এন জি করে ঠাকুরের মন্দির যাওয়া যায়।