ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত নেত্রকোণা জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ময়মনসিংহ বিভাগের একটি প্রশাসনিক এলাকা। এই জেলার ইতিহাস প্রাচীন ঐতিহ্যে ভরপুর। নেত্রকোণা জেলায় বেশ কিছু প্রাচীন স্থাপত্য রয়েছে। সেসব স্থাপত্যগুলো অধিকাংশই এখন ধ্বংসপ্রাপ্ত। তবে কিছু স্থাপত্য এখনো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। তেমনই একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য ‘রোয়াইলবাড়ি দূর্গ’।
বিশ্বাসঅপূর্ব স্থাপত্যশৈলির এক ঐতিহাসিক নিদর্শন নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলায় আশি’র দশকে আবিষ্কৃত রোয়াইলবাড়ি দুর্গ। ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও নির্মাণশৈলির কারণে ১৯৮৭ সালে সরকার এটিকে পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে। কেন্দুয়া সদর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে বেতাই নদীর তীরে এই পুরাকীর্তির অবস্থান। গঠনশৈলির কারণে প্রত্নতাত্তি্বকরা একে মহাজাদপুর এবং গৌড়ের ১৪ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাদের ধারণা, এটা মুঘল আমলের কোনো সেনা নায়কের বাসভবন। তবে এখনও এর কোনো নির্মাণ তারিখ উদ্ধার করা যায়নি। রোয়াইলবাড়ী দূর্গ পশ্চিমে বেতাই নদী এবং অপর তিনদিকে তিনটি পরিখা দ্বারাবেষ্টিত। শুরুতেই রয়েছে সিংহদ্বার।
দূর্গের অভ্যন্তরভাগ পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা একটি ইটের প্রাচীর দ্বারা দু’অংশে বিভক্ত। উত্তরের অংশটির আয়তন ৪শ ৯৭ বর্গফুট। এটি পূর্ব-পশ্চিমে প্রাচীর দ্বারা আবদ্ধ। উত্তরের অংশে রয়েছে একটি বরুজ ডিবি, শানবাঁধানো পুকুর ও একটি কবরস্থান। দক্ষিণে আছে বার দুয়ারী ঢিবি। পুরাকীর্তি এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য পাথর। ৯১-৯২ এবং ৯২-৯৩ অর্থবছরে এর অভ্যন্তরে খনন কাজ পরিচালনা করা হয়। বরুজ ঢিবি খননে একটি ইমরাত কাঠামো এবং বার দুয়ারী ঢিবিতে মসজিদের নকশা আবিষ্কৃত হয়। বরুজ ঢিবির উচ্চতা দূর্গ চত্বর হতে প্রায় ২০ ফুট। চূড়ায় আরোহণের জন্য ব্যবহৃত অক্ষত সিঁড়ি ছাড়াও আবিষ্কৃত হয় মৃৎ পাত্রের ভগ্নাংশ, পোড়ামাটির তেরাব এবং রঙ্গের প্রলেপযুক্ত ইট। বার দুয়ারী ঢিবি খননে ৭৪ ফুট বাই ৪৬ ফুট আয়তনের একটি মসজিদের নকশা এর পূর্ব দেয়ালে ৫টি উত্তর দেয়ালে ৩টি দরজা এবং পশ্চিম দেয়ালে পাশাপাশি ৩টি মেহরাব ছিল বলে ধারণা করা হয়। প্রতি সারিতে রয়েছে ৪টি করে ৮টি পিলার। দেয়ালে প্লাস্টারের চিহ্ন নেই, দেয়ালের রহিরাবরণে পোড়ামাটির অলংকৃত ইট, ঝিনুক ও বিশেষ ধরনের মসলা ব্যবহৃত হয়েছে। স্থাপত্যশৈলির অপূর্ব নিদর্শন এ পুরাকীর্তিটি সংরক্ষণে সরকারের উদ্যোগ না থাকায় অনেক নির্দশন বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
কিভাবে যাওয়া যায়:
ঢাকার মহাখালী অথবা ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদী সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে প্রথমে নেত্রকোনা যেতে হয়। পরে নেত্রকোনা থেকে বাস, অটোরিকশায় যেতে হয় কেন্দুয়া উপজেলা সদরে। এর পর কেন্দুয়া থেকে আবার অটোরিকশা বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে সোজা যাওয়া যায় রোয়াইলবাড়িতে।