বিজয়পুর পাহাড়| ট্র্যাভেল নিউজ বাংলাদেশ

1551

গারো পাহাড়ের পাদদেশ লেহন করে এঁকেবেঁকে কংশ, সোমেশ্বরী নদীসহ অন্যান্য শাখা নদী নিয়ে বর্তমান নেত্রকোণা জেলার জলধারায় পলিযুক্ত মাটি হাওড় ও খন্ড খন্ড জলধারায় উর্বর হয়ে আছে এ জেলা। জেলার উঁচু উত্তরাংশ দক্ষিণে ক্রমশ নীচু হয়ে সমতল ভূ-ভাগে রূপ নিয়েছে। সমগ্র জেলাই উর্বর ভূমি দিয়ে গঠিত। বিজয়পুর দুর্গাপুর উপজেলার একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান। এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। বিজয়পুরের শসারপাড় এলাকায় সাদামাটি পাওয়া যায়; যা সারাদেশে পাঠানো হয়।

শুসং দুর্গাপুর, স্বচ্ছ পানি আর চিনামাটির অপরূপ মেলবন্ধনের এক নাম। প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যময় গারো পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য যে কারও নজর কাড়ে। দুর্গাপুরের বুক বেয়ে চলা সোমেশ্বরী নদীর ছন্দময় চলনও বেশ আকর্ষণীয়। ঋতুচক্রের পালাক্রমে নদী তার রূপ বদলায়। সূর্যের আলোয় চিকচিক করে স্বচ্ছ পানি আর সাদা বালি। এ যেন প্রকৃতির এক অনন্য সৃষ্টি। তটিনীর আঁকাবাঁকা জলধারারের ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে কত নৌকা, স্টিমার ও লঞ্চ।

চিনা মাটির প্রাচীন ইতিহাস না জানা গেলেও ১৯৫৭ সাল থেকে এ মাটি উত্তোলনের কাজ শুরু হয়। ১৯৬০ সালে সর্বপ্রথম কোহিনুর এলুমিনিয়াম ওয়ার্কস নামে একটি প্রতিষ্ঠান এই সাদামাটি উত্তোলনের কাজ শুরু করে। পরে ১৯৭৩ সালে বিসিআইসি সাদামাটি উত্তোলনে যোগ দেয়। বর্তমানে ৯টি কোম্পানী এই সাদামাটি উত্তোলনের কাজ করছে। প্রায় ৩০০ জন শ্রমিক এই মাটি উত্তোলনের সাথে জড়িত। বাংলাদেশের মধ্যে প্রকৃতির সম্পদ হিসেবে সাদা মাটির অন্যতম বৃহৎ খনিজ অঞ্চল এটি। ছোট বড় টিলা-পাহাড় ও সমতল ভূমি জুড়ে প্রায় ১৫.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৬০০ মিটার প্রস্থ এই খনিজ অঞ্চল। খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী ১৯৫৭ সালে এই অঞ্চলে সাদামাটির পরিমাণ ধরা হয় ২৪ লক্ষ ৭০ হাজার মেট্রিক টন, যা বাংলাদেশের ৩ শত বৎসরের চাহিদা পুরণ করতে পারে। বিভিন্ন রংয়ের মাটি, পানি ও প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য মনকে বিমোহিত করে। সাদা, গোলাপী, হলুদ, বেগুনি, খয়েরী, নিলাভ বিভিন্ন রংয়ের মাটির পাহাড় চোখকে জুড়িয়ে দেয়। সাদামাটি এলাকা জুড়ে আদিবাসীদের বসতি।

প্রকৃত পক্ষে এই এলাকার প্রায় সব গ্রামেই সাদা মাটি পাওয়া গেলেও বিজয়পুর বেশি জনপ্রিয় তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যেই।[১] বিজয়পুরের মূল আকর্ষণ সাদামাটির পাহাড় হলেও এখানে নীল পানির জলাশয় দেখা যায়। অনেক উঁচু উঁচু টারশিয়ারী পাহাড়ে সমৃদ্ধ বিজয়পুর। পাহাড়ের পাদদেশে বিভিন্ন রহস্যময় গুহাও চোখে পড়ে: সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা গুহাগুলোতে অবস্থান নেয়। সীমান্তফাঁড়ির পাশে পাহাড়ে ওঠার ব্যবস্থা রয়েছে; এখান থেকে সোমেশ্বরী নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

কিভাবে যাওয়া যায়:

ঢাকা থেকে বাস যোগে ময়মনসিংহ, ময়মনসিংহ ভায়া শ্যামগঞ্জ দুর্গাপুর অথবা ঢাকা থেকে বাসযোগে নেত্রকোণা, নেত্রকোণা থেকে দুর্গাপুর। এরপর সোমেশ্বরী নদী পেরিয়ে রিক্সা বা মোটর বাইক যোগে অর্ধ কাঁচা-পাকা রাস্তা দিয়ে বিজয়পুরের সাদামাটি অঞ্চলে যাওয়া যায়।