ভেবে দেখুন তো বিশাল নদীর মাঝে প্রমোদ তরীতে বসে আপনি চারদিকে সৌন্দর্য নিচ্ছেন। সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা রয়েছে এমন একটি জায়গায় বসে নদীর স্বাদ নিচ্ছেন। ভাবতে যতটা আনন্দের হচ্ছে বাস্তবটা কিন্তু তার থেকেও বেশি উপভোগের। এমনি এক ব্যবস্থা রয়েছে মেরি এন্ডারসনের নামের এক রেস্টুরেন্টে।
ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থল হতে এই রেস্টুরেন্টটি মাত্র বিশ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত হওয়ার দরুন এটি ইতোমধ্যে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ব্রিটিশ শাসন আমলের সময়ে বিলাসবহুল প্রমোদতরী হিসেবে নির্মিত হয়েছিল এই মেরী এন্ডারসন। এটি ছিল বাষ্পীয় ইঞ্জিন চালিত একটি জাহাজ। শুরুতে এর নামকরণ করা হয়েছিল ‘স্টেট ইয়ট মেরী এন্ডারসন’। ১৯৩৩ সালের দিকে ভারতের কলকাতার শিপইয়ার্ডে এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। ১৫০ ফুট দীর্ঘ এ জাহাজ নির্মাণে সেই সময়ে ব্যয় করা হয়েছিল প্রায় এক লাখ ২৪ হাজার। মূলত বাংলায় নিযুক্ত ব্রিটিশ গভর্নরদের ব্যবহারের জন্য এটি নির্মিত হয়েছিল। ১৯৩৩ সালের সময়ে এই বাংলার গভর্নর ছিলেন স্যার জন এন্ডারসন। জন এন্ডারসনের মেয়ে মেরী এন্ডারসনের নামেই এর নামকরণ করা হয় বলে ধারনা করা হয়ে থাকে।
মেরি এন্ডারসন মূলত হল অসাধারণ ভাসমান এক রেস্টুরেন্ট ও বার যেটি বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনকর্তৃক পরিচালিত হয়ে আসছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর উপজেলা এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীতে একটি পুরানো ব্রিটিশ প্রমোদতরীতে এই বিখ্যাত রেস্টুরেন্টটি অবস্থিত। অসাধারণ সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি মাত্র চার হাজার টাকায় রাত্রিযাপনের জন্য এখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের ও সুবিধা রয়েছে। এছাড়া প্রতি ঘণ্টা আটশ টাকা খরচ করে চাইলে এসব কক্ষ ভাড়া নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ইঞ্জিন চালিত বিশাল নৌকায় করে মাঝ নদীতে বসে মেরি আন্ডারসনের সব মজাদার খাবার গ্রহণের সুযোগ এ রেস্টুরেন্টটির অন্যতম এক আকর্ষণ।
শুরুতে প্রমোদ-তরী হিসেবে ব্যবহার করা হলেও সময়ের সাথে সাথে পুরোন হয়ে যাবার দরুন প্রায় তিন যুগ ধরে এটি ভাসমান রেস্তোরাঁ ও বার হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এর সমস্ত কিছু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন। অপর এক তথ্য থেকে জানা যায় ইংল্যান্ডের রাণী এলিজাবেথ ১৯১৮ সালে ব্রিটিশ শাসন আমলে নৌপথে বাংলাদেশ ভ্রমণে আসেন এবং সেই সময়ে সরকারকে জাহাজটি তার মা রাণী মেরীর নামে দান করে যান। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর পাকিস্তান আমলেও পূর্ব বাংলার গভর্নর বহুবার মেরী এন্ডারসন ব্যবহার করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের ব্যবহারের জন্য এটি সংরক্ষিত ছিলো।
যেভাবে যাবেনঃ-
ঢাকা – নারায়নগঞ্জ রোডে পাগলা বাস স্টেন্ড হতে একটু দক্ষিন-পশ্চিমে , বাস, টেক্সি, রিক্সা, কিংবা অটোতে করে খুব সহজেই যাওয়া যায়।উপজেলা সদর থেকে ৩ মাত্র কিলোমিটার দুরে কুতুবপুর পাগলা বুড়িগঙ্গা নদীর উপর অবস্থিত।