লাঙ্গলবন্দ স্নান

1652

হিন্দু ধর্মাবলম্বিদের অনেক রীতিনিতির মধ্যে অন্যতম হল চৈত্র মাসের শুক্লা অষ্টমী তিথিতে পুণ্য অষ্টমী স্নান। ভক্তগণের বিশ্বাস এ সময় ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান খুবই পুণ্যের, এ স্নানে ব্রহ্মার সন্তুষ্টি লাভ করে পাপমোচন হয়। এই স্নানই অষ্টমী স্নান নামে অভিহিত। অধিকাংশ স্থানীয় লোকজনের বিশ্বাস, চৈত্রের শুক্লাষ্টমীতে জগতের সকল পবিত্র স্থানের পুণ্য ব্রহ্মপুত্রে মিলিত হয়। নদীর জল স্পর্শমাত্রই সকলের পাপ মোচন হয়। এর এই স্নান করার মধ্যদিয়ে শুদ্ধি অর্জন করাকেই ‘লাঙ্গলবন্দ স্নান’ নামে অবিহিত করা হয়। প্রতি বছর নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার ব্রহ্মপুত্র নদে তীরে এই স্নান অনুষ্ঠান সমপন্ন হয়। এ তিথিতে ‘লাঙ্গলবন্দে’ দেশ-বিদেশের বহু পুণ্যার্থী, সাধু-সন্তের আগমন ঘটে। বিশ্ববরেণ্য দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক ধর্মগুরু ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারীজীর তথ্যমতে— ‘মহাপ্রভু শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যদেব লাঙ্গলবন্দে এসে স্নান ও তর্পণ করেছিলেন।’ ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে পবিত্র ‘বুধাষ্টমী’ যোগে জননী ভুবনেশ্বরী দেবীকে নিয়ে স্বামী বিবেকানন্দ, নেপালের রাজা, মহাত্মা  গান্ধীসহ বহু সাধু-সন্ন্যাসী এ তীর্থ স্নান করেন।

ত্রেতাযুগে জমদগ্নি নামে এক মুনি ছিলেন। রেণুকার সাথে তার বিবাহ হয়। তাদের ছিল পাঁচ পুত্র সন্তান। কনিষ্ঠ সন্তানের নাম হলো পরশুরাম, বিষ্ণুর দশম অবতারের মধ্যে ষষ্ঠ অবতার। একদিন মুনি জমদগ্নি স্ত্রী রেণুকার জল আনতে বিলম্বের কারণ জিজ্ঞাসা করে এবং যোগবলে তার মানসিক বিকৃতির কথা অবহিত হন। ক্রোধান্বিত হয়ে মুনি রূঢ়স্বরে তার পুত্রদেরকে তাদের মাকে হত্যা করার আদেশ দেন। অগ্নিশর্মা মুনির উক্ত আদেশ প্রথম চার পুত্রের কেউই পালন করতে রাজি হয়নি। পরে পঞ্চমপুত্র পরশুরাম পিতার আদেশে কুঠার দিয়ে মায়ের দেহ দ্বিখণ্ডিত করেন। কিন্তু  পরশুরামের হাতে ঐ কুঠারটি লেগে থাকে। যাহোক, তারপর পিতৃআজ্ঞায় পরশুরাম তীর্থ পরিভ্রমণে বের হয়ে তীর্থ ভ্রমণ করতে লাগলেন। পরশুরাম ব্রহ্মকুণ্ডে স্নান করার সাথে সাথে তাঁর হাতের কুঠার স্খলিত হয়ে যায় এবং সর্বপাপ থেকে মুক্তি লাভ করেন। তিথিটি ছিল চৈত্র মাসের শুক্লা অষ্টমী তিথি বুধবার পুনর্বসু নক্ষত্র। পরে পিতৃ আজ্ঞায় ব্রহ্মকুণ্ডের জলধারাকে এ পৃথিবীতে নিয়ে আসার জন্য পরশুরাম, হাত থেকে স্খলিত কুঠার দিয়ে ব্রহ্মকুণ্ডের জলধারাকে হিমালয়ের পাদদেশ পর্যন্ত আনতে সক্ষম হন। তার পর লাঙ্গল দিয়ে মাটি কর্ষণ করে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলার ‘লাঙ্গলবন্দ’ পর্যন্ত নিয়ে আসেন। এর পর থেকেই এর নাম হয়ে যায় ‘লাঙ্গলবন্দ স্নান’।

সমাগত ভক্তবৃন্দের জন্য স্নান সম্পন্ন করাকে সহজ করার জন্য বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকটি ঘাট নির্মাণ করেন। বর্তমানে এমন ১৩টি বাঁধানো ঘাট আছে। এই ১৩টি ঘাট হলো প্রেমতলা ঘাট, অন্নপূর্ণা ঘাট, রাজঘাট, বরদেশ্বরী ঘাট, গান্ধীঘাট, জয়কালী ঘাট, পাঠানকালী ঘাট, শ্রীরামপুর ঘাট, কালীবাড়ী ঘাট, কালীদহ ঘাট, শঙ্কর ঘাট, শিখরী ঘাট ও রক্ষাকালী ঘাট। এই ঘাটগুলির পাশাপাশি সেখানে রয়েছে ১০টি মন্দির ও কয়েকটি আশ্রম। স্নানের সময় ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে এখানে অসংখ্য মানুষ আসে।

যেভাবে যাবেনঃ-

ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে করে লাঙ্গলবন্দ ঘাটে পৌঁছানো যায়।