পাহাড়, নদী আর সমুদ্রের অনন্য এক মিলনস্থল বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের ভূমি টেকনাফ। টেকনাফের পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নাফ নদী যা বাংলাদেশ ও মায়ানমারের ভূখন্ডকে পৃথক করেছে। টেকনাফের সমুদ্র সৈকতটিও চমৎকার। বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন সৈকত বলা যায় এটিকে। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের উপজেলা টেকনাফের অন্তর্গত সংরক্ষিত বন টেকনাফ গেম রিজার্ভ। কক্সবাজার থেকে ৪৮ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং টেকনাফ থেকে উত্তর দিকে ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে এই গেম রিজার্ভের অবস্থান। সংরক্ষিত এ বনের ভূ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য এককথায় অনন্য। এই গেম রিজার্ভের সর্বোচ্চ চূড়া ‘তৈঙ্গা’ নামে পরিচিত। তৈঙ্গা পাহাড়ের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০০০ ফুট। এ বনের আয়তন ১১ হাজার ৬১৫ হেক্টর।
সমুদ্র উপকূলবর্তী পাহাড়ি এ বনে রয়েছে প্রায় ২৯০ প্রজাতির বিভিন্ন উদ্ভিদ। এ বনের উল্লেখযোগ্য গাছ হলো চাপালিশ, গর্জন, শিমুল, উরিআম, অশোক প্রভৃতি। এ ছাড়া এ বনে ৫৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৫৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৩ প্রজাতির উভচর ও প্রায় ২৮৬ প্রজাতির পাখির বসবাস রয়েছে। তবে এ বনের মূল আকর্ষণ বন্য হাতি। তবে হাতির দেখা মেলা ভাগ্যের ব্যাপার। এ বনের আশপাশে রাখাইন, মারমা ও চাকমা আদিবাসীদের বসবাস। সবুজ এ পাহাড়ি অঞ্চলে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক ঝর্না, উষ্ণমণ্ডলীয় চিরসবুজ বন আপনাকে রোমাঞ্চের বহুবিধ স্বাদ উপভোগের সুযোগ করে দেবে। এখানে দেখার মত রয়েছে অনেক কিছু। এখানে দেখতে পাবেন তৈঙ্গা ঝিরি। এই ঝিরির পানি স্ফটিক স্বচ্ছ এবং জলজপ্রাণী বৈচিত্র্যে ভরপুর। প্রায় ৭০০ ফুট উচ্চতা থেকে শিলাময় পাহাড়ের ধাপে ধাপে অপূর্ব এই ঝর্না ঝিরি ধরে প্রবাহিত হচ্ছে।
যেভাবে যাবেনঃ-
ঢাকা থেকে সরাসরি টেকনাফের বাসে এসে নামতে হবে হোয়াইখিয়ং বাজার। সেখান থেকে গেম রিজার্ভের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণের জন্য জিপ ভাড়া পাওয়া যাবে, তাই যেতে বেশি কষ্ট হবে না। কক্সবাজার আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে প্রতি ঘণ্টায় টেকনাফের বাস ছাড়ে। হোয়াইখিয়ং বাজার থেকে শাপলাপুর অভিমুখে ৪ কিলোমিটার যাবার পর বাম দিকে গেলে পাহাড়ি ঝিরিপথ। ভেতরে যাবার আগে অবশ্যই দায়িত্বপ্রাপ্ত বন বিভাগের কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে অনুমতি নিয়ে নিতে হবে।